#কলকাতা: পঞ্চম শ্রেণীর খুদে। যখন খেলাধুলো করে জীবন কাটানোর কথা, তখন থেকে জীবনের অন্ধকার দিকটি তাঁর চোখের সামনে জ্বলজ্বলে। বাবা-মা আলাদা হয়ে গিয়েছেন। কার সঙ্গে থাকা উচিত, সেই সিদ্ধান্ত নিতে নিতে ক্লান্ত ছোট্ট সেই রাহুল মুখোপাধ্যায়। তার পর জীবনের রাস্তা কেবলই এবরো খেবরো। নানা ওঠাপড়া। আজ তিনি দেব এবং রুক্মিণী মৈত্রর জনপ্রিয় ছবি ‘কিশমিশ’-এর পরিচালক। কী ভাবে এখানে পৌঁছলেন তিনি?
সম্প্রতি এক রিয়ালিটি শো-তে এসে নিজের জীবনযুদ্ধের কথা তুলে ধরলেন রাহুল।
কলকাতা শহরে একটি ছোট্ট ঘরে মায়ের সঙ্গে থাকতেন রাহুল। কলেজের পড়াশোনা করার সুযোগ পাননি তিনি। দ্বাদশ শ্রেণী পাশ। সে কথা অকপটে স্বীকার করলেন পরিচালক। রাহুলের কাছে কাজটাই এখন গুরুত্ব পায়। ডিগ্রি বা সার্টিফিকেট নয়। এক দিকে যেমন টলিপাড়ায়। কাজের জন্য ঘোরাফেরা করতেন, অন্য দিকে মা আর নিজের পেট চালানোর জন্য সব রকমের কাজ করে রোজগার করেছেন রাহুল। গাড়ি ধোয়া, লিফলেট বিলি, দেওয়ালে পোস্টার লাগানো, এই সব কাজকে কোনও দিন ছোট করে দেখেননি রাহুল।
আরও পড়ুন: বিদিশা-মঞ্জুষার পর সরস্বতী? ফের যুবতীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার শহরে! মৃত্যু ঘিরে বাড়ছে রহস্য
রাহুল বললেন, ‘‘ইন্ডাস্ট্রি জুড়ে মানুষকে অনুরোধ করে যেতাম, যে কোনও কাজে হোক, আমাকে নিয়ে নিন। চা-কফি করে দেব। কিন্তু প্রচুর মানুষের দ্বারা প্রতারিত হয়েছি। নাম নিয়ে কাউকে ছোট করব না। তাতেও আশা ছাড়িনি। যা টাকা থাকত, তা দিয়ে রোজ চা, বিস্কুট ছাড়া আর কিছু খাওয়ার সাধ্য ছিল না। বাড়ি ফেরার পথে মায়ের জন্য ফুলুরির তরকারি আর মুড়ি নিয়ে গিয়ে বলতাম, মা তুমি খাও। আমি স্টুডিও থেকে অনেক কিছু খেয়ে এসেছি। পেটে জায়গা নেই আর।’’
হঠাৎই একটি বড় ছবি বানানোর সুযোগ আসে রাহুলের কাছে। রাজকুমার যাদব (অধুনা রাজকুমার রাও)-এর সঙ্গে। ছবির নাম, ‘আমি সায়রা বানু’। রাহুল ভাবেন, তাঁর জীবনে সাফল্য চলে এসেছে। কিন্তু ছবিটি আটকে যায়৷ আবারও তলিয়ে যেতে থাকেন রাহুল। ২০১২ সাল তখন। পকেটে টাকা নেই। মাকে নিয়ে সংসার করার মতো সাধ্য নেই। রাস্তার ধারে ছোট মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে ভগবানের কাছে আত্মহত্যা করার উপায় জিজ্ঞাসা করতেন। রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে ভাবতেন, ‘‘এই যে বাসটা আসছে। সামনে দাঁড়িয়ে পড়ব। ব্যাস, শেষ!’’ এক দিন এ রকমই একটা সময়ে তাঁর কাছে মুম্বই থেকে একটা ফোন আসে। ছোট একটি প্রযোজনা সংস্থার কাজ। আবার নতুন করে ছোট বড় সব কাজ শুরু করেন তিনি। সঙ্গে লেখালেখির কাজে মন দেন। বিশ্বাস করতে শুরু করেন, তিনি নিজের কাজ করতে থাকলে সুযোগ আসবেই৷
আরও পড়ুন: হলুদ ট্যাক্সির ছাদে উঠে হাওড়া ব্রিজে কার্তিক আরিয়ান! বলছেন, 'আমি যে তোমার'...
২০১৯ সাল৷ মুম্বই থেকে কাজ করে কলকাতায় ফিরছেন তিনি। মধ্য রাতে অভিনেতা খরাজ মুখোপাধ্যায়ের ফোন আসে। তিনি বলেন, ‘‘তোর ‘কিশমিশ’-এর স্ক্রিপ্টটা খুব ভাল৷ চল করে ফেলি। এক প্রযোজকের সঙ্গে কথা হয়েছে।’’ তার পরেই আড়াইটে নাগাদ সুপারস্টার দেবের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। আর তার পর? নতুন করে জীবনকে দেখতে শুরু করেন রাহুল। বানিয়ে ফেলেন নতুন ছবি। অবসাদ কাটিয়ে নতুন পথে হাঁটা শুরু।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Actor Dev, Kishmish, Rukmini Maitra