Belashuru: সৌমিত্র-স্বাতীলেখার অভিনয়ই ভরকেন্দ্র, একসঙ্গে শব্দসন্ধানের উত্তর খোঁজার মধ্যে গাঁথা হয় বিনি সুতোর মালা

Last Updated:

Belashuru: আরতি কি তাঁকে চিনতে পারবেন কোনও দিন? চেষ্টার ত্রুটি রাখেন না বিশ্বনাথ৷ বাবার প্রচেষ্টার শরিক হয় সন্তানরাও

দুই বর্ষীয়ানের অভিনয়ের চুম্বকশক্তির কাছে সানন্দে আত্মসমর্পণ করে দর্শকহৃদয়
দুই বর্ষীয়ানের অভিনয়ের চুম্বকশক্তির কাছে সানন্দে আত্মসমর্পণ করে দর্শকহৃদয়
বিবাহবার্ষিকীতে নিজস্বী, জন্মদিনে উষ্ণ শুভেচ্ছার দেখনদারি নয় ৷ বিশ্বনাথ ও আরতি সেই প্রজন্মের, যেখানে সম্পর্কের গাঁটছড়া মজবুত করতে ইন্টারনেট তরঙ্গের সাহায্য নিতে হত না ৷ বিগত প্রজন্মের এই দম্পতিই পরবর্তী প্রজন্মকে শিখিয়ে দিয়ে যান দাম্পত্যের চড়াই উতরাই পাড়ির সুলুকসন্ধান ৷ ‘বেলাশেষে’-এর বিশ্বনাথ উপলব্ধি করেছিলেন তাঁর জীবনে স্ত্রীর ভূমিকা ৷ ‘বেলাশুরু’-তে তিনিই অর্ধাঙ্গিনীর জীয়নকাঠি ৷ অথবা অন্যদিকে স্ত্রীকে ভাল রাখার চেষ্টা করে যাওয়ার চেষ্টাই জীবনীশক্তি যোগায় বিশ্বনাথকে ৷
একইরকম ভাবে সহধর্মিণী গীতা ছিলেন তাঁর স্বামী পবিত্রচিত্ত নন্দীর বেঁচে থাকার অনুঘটক ৷ দমদমের এই প্রৌঢ় দম্পতিই ‘বেলাশুরু’-র উপজীব্য৷ পবিত্রচিত্ত ও গীতার জীবন সংগ্রাম সংবাদপত্রে পড়ে ছবি তৈরির কথা ভাবেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়৷ স্মৃতির বিশ্বাসঘাতকতায় নিজের স্বামীকে চিনতে পারতেন না গীতা৷ তাঁর স্মৃতি ফিরিয়ে আনতে নিজেদের পুরনো ছবি দেখাতেন পবিত্রচিত্ত৷ বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যাওয়ার, বিভিন্ন মুহূর্তের ছবি ৷ তাঁর বাড়ির একতলার ঘরে সাজানো ছিল অজস্র ছবি৷ কিন্তু তাঁদের কাছে ফ্রেমবন্দি মুহূর্ত ছিল৷ বিশ্বনাথের কাছে তো তাও নেই৷ তিনি জীবনসঙ্গীকে সফরসঙ্গী করতে পারেননি৷ বা করেননি৷ কোথাও বেড়াতে যাননি স্ত্রীকে নিয়ে৷ তিনি নিজে বইয়ের ব্যবসা এবং স্ত্রী ব্যস্ত ছিলেন ঘরকন্না নিয়ে৷
advertisement
‘বেলাশেষে’ ছবিতে স্ত্রী, পরিবার ছেড়ে মুক্তি চেয়েছিলেন বিশ্বনাথ৷ একাই পাড়ি দিতে চেয়েছিলেন বহু দূরের কোনও গন্তব্য৷ কিন্তু পরে বুঝেছিলেন তাঁর পক্ষে একাকী বেড়াতে যাওয়া হয়তো সহজ৷ কিন্তু একা জীবনতরী বেয়ে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব৷ তাঁর কাছে অসম্ভবের পাহাড় কত উঁচু, সেই পরীক্ষার মুখে বৃদ্ধকে পড়তে হল ‘বেলাশুরু’-তে৷ অ্যালজাইমার্স আক্রান্ত স্ত্রী আর চিনতে পারছেন না তাঁকে৷ বিশ্বনাথকেই আরতি জিজ্ঞাসা করেন তিনি তাঁর স্বামীকে দেখেছেন কিনা৷ স্ত্রীর কাছে অচেনা হয়ে যাওয়ার তীব্র বেদনা ফুটে ওঠে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মুখে৷ এ ছবিতে তিনি এবং স্বাতীলেখা সেনগুপ্তই ভরকেন্দ্র৷ দুই বর্ষীয়ানের অভিনয়ের চুম্বকশক্তির কাছে সানন্দে আত্মসমর্পণ করে দর্শকহৃদয়৷
advertisement
advertisement
‘বেলাশেষে’-এর সাত বছর পর প্রেক্ষাগৃহে ‘বেলাশুরু’৷ এই সাত বছরে পরিবর্তন এসেছে দম্পতির পরিবারে৷ তাঁদের ছেলে এবং পুত্রবধূর বিয়ে ভেঙে গিয়েছে৷ বুড়ি, তাঁদের বড় মেয়ে গিন্নি থেকে আরও জমাট গিন্নিবান্নি হয়েছেন৷ মেজো মেয়ে মিলির সঙ্গে তাঁর স্বামীর সম্পর্কের তার ছিঁড়ে যেতে যেতে জোড়া লেগেছে অনেকটাই৷ ছোট মেয়ে পিউ ডিজাইনারের কাজ ছেড়ে পুরোদস্তুর সংসারী৷ কিন্তু এই পরিবর্তনের থেকে আরও বেশি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে দর্শকদের মধ্যেও৷ অতিমারিপর্ব তাঁদের ওয়েবসিরিজমুখী করেছে৷ বড় পর্দায় বলিউডকে জমি ছাড়তে হয়েছে দাক্ষিণাত্যের দাপটের কাছে৷ তার পরও গল্প বলার মুনসিয়ানা এবং অভিনয়ের বলিষ্ঠতায় বক্স অফিসে বাজিমাত করেছে ‘বেলাশুরু’৷ সাত বছর আগের ‘বেলাশেষে’-এর মতোই৷
advertisement
আরতি কি তাঁকে চিনতে পারবেন কোনও দিন? চেষ্টার ত্রুটি রাখেন না বিশ্বনাথ৷ বাবার প্রচেষ্টার শরিক হয় সন্তানরাও৷ কিন্তু আরতির স্মৃতি বিশ্বাসঘাতকতা বন্ধ করে না৷ বর্তমান থেকে আরতি ফিরে যান অতীতে৷ অতীতই হয়ে ওঠে তাঁর বর্তমান৷ স্মৃতির ঝাঁপির কোণা থেকে তাঁর মনে ও মুখে বিচরণ করেন পূর্ববঙ্গের ‘অতীন্দ্রদা’৷ কে এই অতীন্দ্রদা? আরতির বড় জামাই জ্যোতির্ময়ের মতো দর্শকরাও প্রায় ধরেই নেন এই অতীন্দ্র আসলে আরতির বিবাহপূর্ব জীবনের প্রেমিক৷ তাঁর সন্ধানে, বা বলা ভাল আরতির শিকড়ের সন্ধানে সপরিবার গিয়ে পৌঁছয় পূর্ববঙ্গে৷ সেখানে গিয়ে নয় জানা গেল আরতির জীবনে অতীন্দ্র দা’র ভূমিকা৷ কিন্তু তাতে বৃদ্ধার স্মৃতি কি ফিরে আসে?
advertisement
হারানো স্মৃতি ফিরে না পেলেও আরতি তাঁর শিকড়ে পৌঁছে পেয়ে যান শৈশবের ডাকনাম৷ সে নাম ‘তিন্নি’৷ উচ্ছেদ হওয়ার পর জীর্ণ শিকড়, মুছে যাওয়া নাম, রেখে আসা পরিবার-কিছুই হারিয়ে যায় না৷ সাকিন, পরিচয় পাল্টালেও এ সব সঙ্গেই থাকে মেয়েদের৷ এই অনুভূতিকে নিছক নস্ট্যালজিয়া বলে দাগিয়ে দেওয়া যায় না৷ ছবিতে স্বাতীলেখার কণ্ঠে তাঁর মায়ের কাছে ফিরে যাওয়ার আর্তি অনুরণিত হতে থাকে দর্শকদের শ্রবণ অলিন্দে৷ তিনি শেষ অবধি স্বামীকে চিনতে পারলেন কিনা, সেই প্রশ্ন ছাপিয়েও বড় হয়ে ওঠে বিশ্বনাথের অদম্য প্রয়াস৷
advertisement
সৌমিত্র-স্বাতীলেখার প্রজন্মজয়ী অভিনয়ের পাশাপাশি এই ছবিকে সাজিয়ে তুলেছে অপরাজিতা আঢ্য, খরাজ মুখোপাধ্যায়, শংকর চক্রবর্তী, প্রদীপ ভট্টাচার্যর সাবলীল স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি৷ স্বল্প পরিসরে রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তর অভিনয় দাগ কেটে যায় মনে৷ গ্ল্যামারহীন সাজে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তর পরিমিত ও যথাযথ অভিনয় এ ছবি থেকে দর্শকদের বড় প্রাপ্তি৷ শিবপ্রসাদ-নন্দিতার পরিচালনার পাশাপাশি ছবির অন্যতম সম্পদ অনুপম রায় ও অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গীত৷ পূর্ববঙ্গে সরু খাঁড়ির বুকে সিলেটের বালক-মাঝির কণ্ঠে আব্দুল করিমের গান ‘কী জাদু করিয়া বন্দে’ ছবির অন্যতম শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত৷ দাঁড় বাইতে বাইতে সে গান গাইছে নিজের মনে৷ সে সময় বিশ্বনাথ ও আরতির চোখেমুখে দু’ রকম সংলাপহীন অভিব্যক্তি অদ্ভুত বাঙ্ময়৷ গান শুনে আরতি খাঁড়ির জলেই খুঁজে চলেছেন তাঁর অতীত৷ তাঁর পাশে বিশ্বনাথ উদ্বিগ্ন৷ তাঁর চিন্তা একটাই৷ শান্তিনিকেতনের বাড়িতে ফিরে গিয়ে আরতি তাঁকে আবার আগের মতোই চিনতে পারবেন তো? ছবির মু্ক্তির আগে এই গান ইউটিউবে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত যথাযথ৷ অন্যদিকে ইউটিউবে ঝড় তোলা ‘ইনি বিনি টাপা টিনি টানা টুনি টাসা’ গানটি ছবির শেষে এক বিশেষ কারণে আসে৷ কী কারণ, সেটা গানের কথার মধ্যেই বলা হয়েছে৷ কিন্তু যত ক্ষণ না ছবিটি দেখা হচ্ছে, বোঝার উপায় নেই৷ ইউটিউবে দেওয়ার সময় আসল প্রসঙ্গ বাদ দিয়ে যেভাবে গানটি পেশ করা হয়েছে, তার জবাব নেই৷ এতে ছবির গুরুত্বপূর্ণ অংশ মুক্তির আগে প্রকাশিত হয়ে পড়েনি৷
advertisement
যাঁদের পথচলা নিয়ে ‘বেলাশুরু’ এবং যাঁরা সেই জীবনকে পর্দায় ফুটিয়ে তুললেন, সেই চার জনই আজ চলে গিয়েছেন না ফেরার দেশে৷ এই দুই জুটির যাত্রাপথ আরও একবার শিখিয়ে গেল শেষ থেকেও শুরু করা যায়৷ একসঙ্গে শব্দসন্ধানের উত্তর খোঁজার মধ্যেও দাম্পত্যের বার্ধক্যে গাঁথা যায় বিনি সুতোর মালা৷
view comments
বাংলা খবর/ খবর/বিনোদন/
Belashuru: সৌমিত্র-স্বাতীলেখার অভিনয়ই ভরকেন্দ্র, একসঙ্গে শব্দসন্ধানের উত্তর খোঁজার মধ্যে গাঁথা হয় বিনি সুতোর মালা
Next Article
advertisement
সাউথ ব্লক ছেড়ে নতুন ঠিকানায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর! সেন্ট্রাল ভিস্তায় গড়ে উঠল ‘সেবাতীর্থ’ কমপ্লেক্স, অমিত শাহ বললেন 'সোনালি যাত্রাপথ'!
সাউথ ব্লক ছেড়ে নতুন ঠিকানায় প্রধানমন্ত্রীর দফতর! সেন্ট্রাল ভিস্তায় গড়ে উঠল ‘সেবাতীর্থ’
  • প্রধানমন্ত্রীর দফতর সাউথ ব্লক ছেড়ে সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের নতুন কমপ্লেক্সে যাচ্ছে.

  • সেবাতীর্থ কমপ্লেক্সে থাকবে ক্যাবিনেট সচিবালয় ও NSA অজিত ডোভালের দফতর.

  • সেন্ট্রাল ভিস্তা প্রকল্পের অংশ হিসেবে নতুন প্রশাসনিক পরিকাঠামো গড়ে উঠেছে.

VIEW MORE
advertisement
advertisement