বিহারের শার্প শুটাররা কার্যত কাঁপাচ্ছে বাংলা! জনবহুল এলাকাতেও সারছে তাদের নিখুঁত অপারেশন
- Published by:Siddhartha Sarkar
Last Updated:
বিহার এবং ঝাড়খন্ড সীমান্ত লাগোয়া এ রাজ্যের পুরুলিয়া জেলা, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম ,বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম-সহ মুর্শিদাবাদ, মালদহের কিছু অংশ, এই সমস্ত জেলাতে কার্যত বিহারের শার্প শুটারদের মাধ্যমে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে খুন করার ঘটনা দেখেছে বাংলা।
সৌরভ তিওয়ারি, কলকাতা: শার্প শুটারের মাধ্যমে খুন হওয়ার একাধিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে বাংলা। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিহার এবং ঝাড়খন্ড বর্ডার লাগোয়া জেলাগুলিতে বিহারের শার্প শুটারদের মাধ্যমে একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। বিহার এবং ঝাড়খন্ড সীমান্ত লাগোয়া এ রাজ্যের পুরুলিয়া জেলা, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম ,বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম-সহ মুর্শিদাবাদ, মালদহের কিছু অংশ, এই সমস্ত জেলাতে কার্যত বিহারের শার্প শুটারদের মাধ্যমে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে খুন করার ঘটনা দেখেছে বাংলা।
কার্যত প্রত্যেকটি খুনের ঘটনায় পয়েন্ট ব্ল্যাক রেঞ্জ থেকে গুলি করার তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। খুনের ঘটনা পর পুলিশের তরফে আততায়ী তথা শার্প শুটারদের তথ্য সংগ্রহ করলেও অধিকাংশ ঘটনায় কোনও শার্প শুটার বা মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ বা সিআইডি কিংবা সিবিআই।
পুলিশ সূত্রে খবর, এই সমস্ত শার্প শুটাররা তাদের কাজ অর্থাৎ খুন করার পর বিহার, ঝাড়খণ্ড কিংবা উত্তর প্রদেশে গা ঢাকা দেয়। যখন তারা কাজে নামে, অধিকাংশ সময়ে দেখা গিয়েছে তারা কোনও মোবাইল ফোনের ব্যবহার করে না। রাজ্যের সীমান্ত পেরিয়ে যাওয়ার পর তাদের হ্যান্ডেলারদের মাধ্যমে পুনরায় মোবাইল তাদের কাছে চলে আসে।
advertisement
advertisement
কীভাবে কাজ করে শার্প শুটারদের সিন্ডিকেট?
শার্প শুটারদের সিন্ডিকেট এর মূল মাথার কাছে প্রথমে খুন করার প্রস্তাব যায়, সেই প্রস্তাব শোনার পর টার্গেট ব্যক্তির সমাজে প্রভাব অনুযায়ী খুন করার মূল্য ধার্য করা হয়। বিহার এবং রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে ন্যূনতম মাথাপিছু পাঁচ লাখ টাকা থেকে টার্গেট ব্যাক্তির প্রভাব অনুযায়ী টাকার পরিমাণ বাড়তে থাকে। মূল্য ধার্য হবার পর সেই টার্গেট ব্যক্তির পাঁচ থেকে ছয় রকম ছবি শার্প শুটারদের সিন্ডিকেটের মাথাকে দেওয়া হয়। পাশাপাশি এলাকার বিষয় ও জানাতে হয়, এই সমস্ত তথ্য সিন্ডিকেটের কাছে পৌঁছানোর পর, শার্প শুটাররা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দীর্ঘ এক থেকে দেড় মাস ধরে রেইকি চালায়। পাশাপাশি পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, যে প্রত্যেক শার্প শুটাররা খুন করার দিন তাদের মোবাইল ফোনে পার্শ্ববর্তী রাজ্যের সীমান্তে তাদের হ্যান্ডেলারদের কাছে জমা দিয়ে দেয়। খুন নিশ্চিত হওয়ার পরে শার্প শুটাররা রাজ্যের সীমান্ত পেরিয়ে পুনরায় তাদের মোবাইল নির্দিষ্ট হ্যান্ডেলারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছে যায়। এই হ্যান্ডেলাররা মোবাইলের পাশাপাশি মোটরসাইকেল বা চার চাকা গাড়িও সরবরাহ করে।
advertisement
মোবাইল তাদের কাছে না থাকায় অধিকাংশ সময় টাওয়ার ডাম্পিং করলেও শার্প শুটারদের খোঁজ পাওয়া যায় না। যার ফলে অধরাই থেকে যায় দুষ্কৃতীরা। মৃত্যু নিশ্চিত করতে এই শার্প শুটাররা অত্যাধুনিক নাইন এমএম পিস্তল-সহ একে-৪৭ রাইফেলও ব্যবহার করে। পাশাপাশি মৃত্যু নিশ্চিত করতে অধিকাংশ সময় পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে একাধিক রাউন্ড গুলি করে দুষ্কৃতীরা।
advertisement
ইতিমধ্যেই অতীতে এই সমস্ত অস্ত্র দিয়ে খুন করার সাক্ষী থেকেছে রাজ্যের পুলিশ। বেশ কিছু ঘটনায় এই সমস্ত অস্ত্র ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ কিন্তু প্রশ্ন একটাই এই সমস্ত ঘটনায় কার্যত অধরা থেকেই যাচ্ছে দুষ্কৃতীরা।
কিছুদিন আগেই আসানসোলের ভগৎ সিং মোর সংলগ্ন এলাকায় এক হোটেল মালিক অরবিন্দ ভগতকে একই পদ্ধতিতে খুন করে দুষ্কৃতীরা। শুধু একটি ঘটনা নয়, অতীতেও রয়েছে একাধিক এই রকমের ঘটনা, যেই ঘটনার কয়েক বছর পার হয়ে গেলেও এখনও কার্যত অধরা শার্প শুটাররা।
advertisement
বার্নপুরে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে প্রয়াত বাম নেতা বামাপদ মুখোপাধ্যায়ের ছেলে অর্পণ মুখোপাধ্যায়কেও পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করেছিল শার্প শুটাররা। পাশাপাশি এই ঘটনার বছর গোড়াতেই সিপিআইএম প্রাক্তন বিধায়ক দিলিপ সরকার কে ও প্রাতঃভ্রমণে সময় গুলি করে খুন করেছিল দুষ্কৃতীরা।
এই দুই ঘটনায় পুলিশের তরফ থেকে একাধিক তদন্ত করা হলেও কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে এই দুটি ঘটনার তদন্তভার চাই সিবিআই-এর হাতে কিন্তু বছরের পর বছর গড়িয়ে গেলেও সিবিআই-এর জালেও ধরা পড়েনি দুষ্কৃতীরা।
advertisement
আসানসোলের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী যীশু বিশ্বাসকেও বানপুর সংলগ্ন নেহরু পার্কে পিকনিক করার সময় হঠাৎ করেই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে একাধিকবার গুলি করে খুন করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা এই ঘটনাতেও কার্যত এখনও অধরা মূল অভিযুক্তরা।
advertisement
শুধু পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলই নয়, রাজ্যের বিভিন্ন জেলাতে একাধিক গুলি করে খুন করার ঘটনায় কার্যত অধিকাংশই অভিযুক্ত অধরাই রয়েছে।
বিহারের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকেও ভাড়া করে আনা হয় ভাড়াটে খুনি। এই সমস্ত খুনি কার্যত মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, কলকাতাতে নিজেদের কার্যকলাপ চালায়। আততায়ীদের ভাষায় এই খুনিদের কোড নাম হল মার্ডার সিন্ডিকেট। এই সমস্ত জেলারও একাধিক খুনের ঘটনার অভিযুক্ত কার্যত অধরা।
যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, বিভিন্ন সূত্র ঘটনাস্থল থেকে মিললেও মূল অভিযুক্তর কাছে পৌঁছনোর সূত্রই কার্যত মেলে না পুলিশের কাছে। টাওয়ার ডাম্পিং মোবাইল নম্বর ট্রেসিং-সহ একাধিক অত্যাধুনিক পদ্ধতির সাহায্য নিলেও কার্যত দুষ্কৃতিদের কাছে পৌঁছতে পারে না পুলিশ তথা তদন্তকারী সংস্থা, যার জেরে অধিকাংশ ঘটনার অভিযুক্ত অধরাই থেকে যাচ্ছে।
Sourav Tewari
Location :
Kolkata,Kolkata,West Bengal
First Published :
February 21, 2023 12:45 PM IST