গৃহবন্দিতে একপ্রকার হতাশ হচ্ছে ছোট ছেলেমেয়েরা৷ স্বাভাবিক জীবনযাপনে অনেকটাই বাধা৷ স্কুল বন্ধ, বন্ধ খেলার মাঠে ছোটাছুটি৷ একটা সময়ে যেই মোবাইল দেখার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হত, সেই মোবাইলেই এখন মুখ গুঁজে থাকতে বলছেন অভিভাবকরা৷ সৌজন্য, অনলাইন ক্লাস৷ শিশু মনের বিকাশে এই পরিস্থিতি কতটা পরিপন্থী, কীভাবেই বা তাদের জন্য বাড়িতেই তৈরি করা যায় ফান টাইম? জানাচ্ছেন ডাঃ যশোধারা চৌধুরি (শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ)৷
১) এই সময় বাচ্চাদের স্ট্রেস লেভল ঠিক কতটা? কীভাবে তা বোঝা যাবে?
উত্তর-বড়দের মতই বাচ্চারাও খুব চাপে৷ যেই বাচ্চারা একটু ছোট তাদের অনেকের ক্ষেত্রে জেদি হওয়ার প্রবণতা দেখা দিয়েছে৷ আর যারা একটু বড় তারা খুব বেশি অন্তর্মুখী হয়ে পড়েছে৷ আসলে ছোট বয়সের বাচ্চারা নিজেদের জেদের মাধ্যমে তাদের বিরক্তি প্রকাশ করছে৷ আর যারা বাড়ন্ত, তারা অনেক সময়ই নিজে নিজে সময় কাটাতে হয়ত ভালবাসে, কিন্তু এই সময়টা সেটা একটা বদভ্যাসে পরিণত হচ্ছে৷ তাদের মধ্যে শূন্যতা তৈরির ফলে একাকীত্বে থাকার প্রবণতা বাড়ছে৷
২) অনলাইন ক্লাস শুরু হয়েছে৷ আপাতত এটা ছাড়া পড়ানোর উপায়ও নেই৷ শুরুর দিকে এতে একটা মজা থাকলেও এখন বেশ সমস্যা বাড়ছে৷ বিশেষ করে শারীরিক সমস্যা৷ কিছু করা যেতে পারে কি?
উত্তর-দেখুন, স্কুলে যাওয়া তো ছোটদের জন্য শুধু পড়াশুনার জন্য নয়৷ সেখানে অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে দুষ্টুমি, বন্ধুর সঙ্গে খুনসুটি, মিসের সঙ্গে কথোপকথন, এগুলোও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ সেটা তো আর ল্যাপটপ বা মোবাইলের ছোট খোপের ক্লাস তুলে ধরতে পারছে না৷ এইভাবে ক্লাসের ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকারাও খুব বেশি সকলের দিকে নজর দিতে পারছেন না৷ এতে বিরক্তিই বাড়ছে৷
৩) তাহলে কীভাবে এর থেকে মুক্তি সম্ভব?
উত্তর- আপাতত এর কোনও বিকল্প নেই৷ তবে যেটা করা যেতে পারে তা হল, ক্লাসের মাঝে ব্রেক দেওয়া৷ টানা ক্লাস না করে মাঝে একটা ছোট বিরতি, যাতে পড়ুয়াদের জন্য থাকবে কিছু কাজ৷ যেটা মূলত শারীরিক হবে৷ সাধারণত ক্লাসরুমে টানা ৪০-৫০ মিনিট ক্লাস হলেও, অনলাইনে সেটা কমিয়ে করতে পারলে ভাল৷
৪) দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে থাকলে কী কী সমস্যা হতে পারে ছোটদের?
উত্তর-চোখের সমস্যা তো বটেই৷ সঙ্গে মাথার যন্ত্রণার উপসর্গের কথাও বহু শিশু বলতে শুরু করেছে৷ আমাদের কাছে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে৷ অনেকক্ষণ একটানা এভাবে মোবাইল, ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মাথার যন্ত্রণা হচ্ছে ওদের৷ এবং মজার কথা ভাবুন, আগে বেশি মোবাইল নাড়াঘাটা করলে যে বাবা মায়েরা বকতেন, তারাই এখন বলছেন বেশি করে কম্পিউটার স্ক্রিনে নজর রাখতে৷ দীর্ঘ দিন এটা চললে সত্যিই খুব সমস্যা তৈরি হবে৷
৫) এই ধরণের চাপ কমাতে বাচ্চাদের সঙ্গে তাহলে কেমন ব্যবহার করতে হবে বাড়িতে?
উত্তর-ব্যায়ম করান মজাচ্ছলে৷ ফ্ল্যাট বা বাড়ির মধ্যেই আসবাব কিছুটা সরিয়ে ওদের জন্য মাঠের মতো একটা জায়গা তৈরি করুন৷ বেশি বড় জায়গার প্রয়োজন নেই৷ ছোটো জায়গার মধ্যে ওদের মনপসন্দ গেম রাখুন৷ খেয়াল রাখবেন যাতে এই সময়টা নড়াচড়া বেশি হয়৷ অর্থাৎ শারীরিক পরিশ্রম হয় ওদের৷ এছাড়া তো নানা ইনডোর গেম রয়েছে৷ ছাদে নিয়ে যান, সেখানে খেলাধুলার ব্যবস্থা করুন৷
৬) বাড়ির বড়রাও তো মারাত্মক স্ট্রেসড৷ গোটা পরিবার কীভাবে নিজেদের কিছুটা চাপমুক্ত করতে পারবে?উত্তর- সত্যিই খুব কঠিন সময়৷ সকলেই খুব চাপে৷ বিশেষ করে মানসিকভাবে৷ দেখুন কোনও কোনও সময় একটু অতিরঞ্জিত করতে পারেন নিজেদের ঘরোয়া বিষয়গুলো৷ যেমন ধরুন কোনও এক সন্ধে প্ল্যান করলেন পরিবারের সবাই একসঙ্গে একটা ছোটদের ছবি দেখবেন৷ ঘরের মধ্যে একটু হলের মতো পরিবেশ তৈরি করুন৷ বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন পপকর্ন৷ হোক না একটু নাটুকে, তাতে কী৷ এতে তো সকলেই মজা পাবেন৷ বিশেষ করে ছোট সদস্যটিও খুব আনন্দ পাবে৷ একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় খুব জনপ্রিয় হয়েছিল যেখানে দেখা যাচ্ছে যে বাড়ির ছোটদের জন্য খাবার টেবিলটা সাজানো হয়েছে হোটেলের মতো৷ এমনও করতে পারেন৷ হাসিখুশি থাকলেই ভাল থাকবেন আর ভাল থাকাটা এখন খুব প্রয়োজনীয়৷