নিমগাছের ছালের নির্যাসেই কি লুকিয়ে করোনা মোকাবিলার উপাদান? দিশা দেখাচ্ছেন বাঙালি বিজ্ঞানী
- Published by:Pooja Basu
Last Updated:
মানুষের শরীরে গবেষণা করার মত পরিকাঠামো এই মুহূর্তে আইআইএসইয়ারে না থাকায় সুইডেনের এক বিজ্ঞানীর সহযোগিতায় এই গবেষণা চলছে সেখানে। এই গবেষণাটি গত ১৪ই এপ্রিল আন্তর্জাতিক স্তরে গবেষণাপত্রে স্বীকৃতি পেয়েছে। অর্থাৎ ইঁদুরের শরীরে করোনাভাইরাস আটকাতে সক্ষম নিম গাছের ছালের নির্যাস।
#কলকাতা: নিম গাছের ছালের নির্যাসের মধ্যেই কি লুকিয়ে রয়েছে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করার উপাদান? আইআইএসইআর কলকাতা বা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স এডুকেশন এন্ড রিসার্চের অধ্যাপিকার গবেষণায় এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। নিম গাছের ছালের নির্যাস ইঁদুরের শরীরে করোনাভাইরাস আটকাতে সক্ষম হয়েছে।এমনই গবেষণা করেছেন আইআইএসইআর এর বাঙালি বিজ্ঞানী জয়শ্রী দাস শর্মা। গবেষণা করে তিনি দেখিয়েছেন নিম গাছের ছালের নির্যাস ইঁদুরের শরীরে করোনাভাইরাস আটকাতে সক্ষম। এবার এই নিম গাছের ছালের নির্যাস মানুষের শরীরে করোনাভাইরাস আটকাতে সক্ষম হয় কী না তার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
মানুষের শরীরে গবেষণা করার মত পরিকাঠামো এই মুহূর্তে আইআইএসইয়ারে না থাকায় সুইডেনের এক বিজ্ঞানীর সহযোগিতায় এই গবেষণা চলছে সেখানে। এই গবেষণাটি গত ১৪ই এপ্রিল আন্তর্জাতিক স্তরে গবেষণাপত্রে স্বীকৃতি পেয়েছে। অর্থাৎ ইঁদুরের শরীরে করোনাভাইরাস আটকাতে সক্ষম নিম গাছের ছালের নির্যাস। গবেষকরা জানাচ্ছেন এই গবেষণাটি "frontiers in cellular neuroscience" এই গবেষণাপত্রে স্বীকৃতি পেয়েছে।
advertisement
গত কয়েক বছর ধরেই আইআইএসইআর কলকাতার জীব বিজ্ঞানের অধ্যাপিকা ডঃ জয়শ্রী দাস শর্মা এবং তার গবেষক ছাত্রছাত্রী লাকি সরকার, রবি করণ পুটচালা, আব্বাস আলাও সাফিরিউ এই নিয়ে কাজ করে চেলেছেন৷ এরা পরীক্ষামূলক ভাবে ইঁদুর মডেলের ওপর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং রোগ সৃষ্টিকারী বিষয়ের উপর গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মূলত গবেষকরা মাউস হেপাটাইটিস ভাইরাসের ওপর গত কয়েক বছর ধরেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই ভাইরাসটি একটি বিটা 2 করোনাভাইরাস এবং SARS-COV-2 এর সমগোত্রীয় ভাইরাস। এই ভাইরাসটি শুধুমাত্র ইঁদুরের স্নায়ুতন্ত্র ও যকৃতের সংক্রমণ করে, কিন্তু মানুষকে সংক্রমিত করতে পারেনা। এই ভাইরাসকেই মডেল হিসাবে ব্যবহার করে এই প্রাণীর অবক্ষয়ের কারণ বোঝার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
advertisement
advertisement
গবেষকরা জানাচ্ছেন এই ভাইরাস দ্বারা পরিচালিত একাধিক লক্ষণ মানুষের বিভিন্ন স্নায়বিক রোগ ও মাল্টিপেল ক্লোরোসিস এর মতই হয়ে থাকে। এই ভাইরাসের মোরক অংশ স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন এর মধ্যস্থতায় কোষ থেকে কোষে সংযুক্তি হল MHV পরিচালিত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের সংক্রমণের একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। ভাইরাস প্রতিরোধক দৃষ্টিভঙ্গিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল সংক্রমণ সূচনার পর্যায়ে ভাইরাসকে দমন করা।
advertisement
নিম একটি প্রাচীন ঔষধিগাছ যেটি আলসার নিরোধক, ম্যালেরিয়া নিরোধক এবং ক্যান্সার নিরোধক হিসেবে বহুল প্রচারিত। এই নিম,ভাইরাস এবং পোষক কোষের মধ্যে সংযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতা রাখে। গবেষকরা জানাচ্ছেন তাই সংক্রমণ সূচনার ক্ষেত্রটিতে নিম ফলের নির্যাস সরাসরি স্পাইকে বাঁধতে পারে কিনা তা নির্ধারণ করা এবং কোষের সঙ্গে ভাইরাসের সংযুক্তি নির্যাস ব্যবহার করে বাধা দেওয়া যায় কিনা তা নির্ধারণ করা আবশ্যক ছিল।

advertisement
আইআইএসইআরের বিজ্ঞানী ডঃ জয়শ্রী দাস শর্মা ও তার গবেষক ছাত্রছাত্রীরা তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন MHV সংক্রামিত স্নায়বিক neuro 2a কোষ গুলিতে নিম ছালের নির্যাস প্রয়োগ করে ভাইরাস প্ররোচিত কোষ থেকে কোষের সংযুক্তি, বহু নিউক্লিয়াস যুক্ত কোষ গঠন এবং ভাইরাসের নিউক্লিয় ক্যাপসিড প্রোটিনের অভিব্যক্তিতে ১২ ঘণ্টা পরেই উল্লেখযোগ্যভাবে কম দেখা গিয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন সংক্রমণ সূচনার পর্যায়টি নিয়ন্ত্রণের জন্য RSA59 ভাইরাসকে নিম গাছের ছালের নির্যাস এর সঙ্গে ১৫ মিনিটের জন্য মিশ্রিত করে ৪ ডিগ্রি উষ্ণতায় বরফের মধ্যে রাখা হয়েছিল এবং তার প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছিল ভাইরাসের প্রতি লেখ ও প্রতিলিপি গঠনের মাধ্যমে ইঁদুরের ওপর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পর্যালোচনার জন্য। নিম গাছের ছালের নির্যাস ভাইরাস ও কোষের সংযুক্তির ক্রিয়া-কলােপ বাধা সৃষ্টি করে তার প্রভাব দেখিয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন নিম গাছের ছালের নির্যাস কার্যকরভাবে ভাইরাসের কোষে প্রবেশ করে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসের প্রতিরূপ ও প্রতিলিপি গঠন এবং ভাইরাসের নিউক্লিয় ক্যাপসিড প্রোটিন ও প্রদাহ সৃষ্টিকারী সাইটোকাইনিনের বিকাশ সীমিত করে।
advertisement
গবেষকরা আরও জানাচ্ছেন এই গবেষণা থেকে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে নিম গাছের ছালের নির্যাস ভাইরাস স্পাইক গ্লাইকোপ্রোটিন এর পোশক কোষের সঙ্গে সংযুক্তিতে সরাসরি বাধা দেয়। MHV-এর ফলে সৃষ্ট স্নায়বীয় প্রদাহকেও কমিয়ে দেয়। ভাইরাসের প্রতিলিপিকরণ এবং কোষের সঙ্গে সংযুক্তিতেও বাধা দেয়। গবেষকরা আরও জানাচ্ছেন নিম গাছের ছালের নির্যাসের যৌগের লিমোনয়েডস এবং টেট্রাটারপিনয়েড গ্রুপের উপাদানগুলির করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগ প্রতিরোধের সম্ভাবনা রয়েছে।
advertisement
এ প্রসঙ্গে বিজ্ঞানী তথা অধ্যাপিকা ডঃ জয়শ্রী দাস শর্মা জানিয়েছেন " এখানে BSL-3 এর সুবিধা না থাকার কারণে নিম গাছের ছালের নির্যাস দিয়ে SARS-CV-2 ভাইরাসের পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। কিন্তু আমাদেরই এক সহ বিজ্ঞানী (সুইডেনের ক্যারোলিনস্কা ইনস্টিটিউশন) BSL-3 তে নিম গাছের ছাল এর নির্যাস দিয়ে সুইডেনের COVID-19 এর নমুনা পরীক্ষা শুরু করেছেন। এর পাশাপাশি আইআইএসসি ব্যাঙ্গালুরুর সহ বিজ্ঞানী ডঃ দেবনাথ পাল কম্পিউটার মডেলিং-এর মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এই বিষয় বিস্তারিত গবেষণার। নিম গাছের ছালের নির্যাসের কোন উপাদানগুলি এই রোগটি প্রতিরোধ করতে পারবে তা নিয়েও গবেষণা শুরু হয়েছে। আমরা আশাবাদী এই গবেষণার মধ্য দিয়ে শীঘ্রই কোনও ইতিবাচক ফলাফল পাব যা COVID-19 কে দূর করতে পারবে।"
view commentsLocation :
First Published :
April 19, 2020 11:10 AM IST
বাংলা খবর/ খবর/করোনা ভাইরাস/
নিমগাছের ছালের নির্যাসেই কি লুকিয়ে করোনা মোকাবিলার উপাদান? দিশা দেখাচ্ছেন বাঙালি বিজ্ঞানী

