#কলকাতা: ১৮৯২ সালে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কলকাতার ৯১, আপার সার্কুলার রোডে বাড়ি ভাড়া করে ৭০০ টাকা মূলধন নিয়ে বেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্ক স্থাপন করেন। প্রফুল্লচন্দ্র বাঙালি তরুণদের মধ্যে উদ্যোগী মনোভাব গড়ার উদ্দেশ্যে এবং ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের চাকরির বিকল্প হিসেবে একটি পৃথক সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল কংগ্রেসে ভেষজ পণ্য উৎপাদনের জন্য দায়িত্ব নেয় এই সংস্থা।
সেই শুরু তারপর বহু উত্থানপতনের সাক্ষী থেকেছে বেঙ্গল কেমিক্যালস। তবু কি সেই বিজ্ঞানী, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় কে বাঙালি মনে রেখেছে! ২ অগাস্ট রবিবার একপ্রকার নিঃশব্দেই পালিত হল প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের ১৫৯তম জন্মদিন। আর এই দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছিল বেঙ্গল কেমিক্যালসের তৈরি করা হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাজারে নিয়ে আসার জন্য। রবিবার কাঁকুড়গাছিতে বেঙ্গল কেমিক্যালের কারখানায় অনাড়ম্বরভাবেই নতুন এই হ্যান্ড স্যানিটাইজার 'বেন স্যানি'-এর আত্মপ্রকাশ ঘটল।
বেঙ্গল কেমিক্যালসের চিফ ম্যানেজিং ডিরেক্টর পিএম চন্দ্রাইয়া জানান, গোটা দেশ এবং এ রাজ্যেও করোনার যে পরিস্থিতি, তাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার এখন মানুষের নিত্যসঙ্গী। তবে চাহিদা বাড়ায় শুরু হয়েছে স্যানিটাইজারের কালোবাজারি ও নকল স্যানিটাইজারের রমরমা ব্যবসা। বাজার চলতি অন্যান্য স্যানিটাইজারের থেকে বেঙ্গল কেমিক্যালসের তৈরি স্যানিটাইজার অনেক উন্নত মানের, দামও সাধ্যের মধ্যে। আপাতত ১০০ মিলি, যার দাম ৫৪ টাকা, ৫০০ মিলি, যার দাম ২৪০ টাকা এবং ৫ লিটারের জারে স্যানিটাইজার মিলবে। খোলাবাজারে তা পাওয়া যাবে। গুণমানের সঙ্গে কোনোরকম আপস করা হয়নি। ফলে খুব দ্রুত বাজারে এটা জনপ্রিয় হবে বলে আশাবাদী বেঙ্গল কেমিক্যাল কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, ১৯০১ সালে আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় প্রতিষ্ঠা করেন ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিকল ওয়ার্কস’। যা বাংলায় প্রথম রাসায়নিক দ্রব্য এবং ওষুধ তৈরির কারখানাও বটে। মূলধন কম থাকলেও প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে নেমে পড়েছিলেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী। দীর্ঘ চলার পথে বহু বাধার মুখোমুখি হয়েছে প্রাচীন এই প্রতিষ্ঠান। তবু বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে। অ্যান্টি স্নেক ভেনম তৈরি করে প্রথম নজর কাড়ে বেঙ্গল কেমিক্যালস।
বর্তমানে গোটা বিশ্বে করোনা হাহাকার। যে প্রাচীন সংস্থাকে লোকসানের কারণ দেখিয়ে বেসরকারিকরণ করার ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার, সেই বেঙ্গল কেমিক্যালসই ১৯২৩ সালে গোটা উত্তরবঙ্গে প্রবল বন্যার সময় লক্ষ লক্ষ ঘরছাড়া মানুষকে সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছিল। আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় তৈরি করেছিলেন বেঙ্গল রিলিফ কমিটি। তার মধ্যেই বাংলায় নতুন উপদ্রব হিসেবে উঠে আসে প্লেগ, কলেরা আর টাইফয়েড। সেখানেও এগিয়ে এসেছিল এই প্রতিষ্ঠান।
প্লেগের হাত থেকে বাঁচার অন্যতম শর্ত হল বাড়ি ও আশপাশ পরিষ্কার ও পোকামাকড় মুক্ত রাখা। কিন্তু স্যানিটাইজেশনের বা জীবাণুমুক্ত করার যে সরঞ্জাম বিদেশ থেকে আমদানি হতো, তার দাম ছিল সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এগিয়ে আসে বেঙ্গল কেমিক্যালস। দেশীয় পদ্ধতিতে প্রস্তুত হয় ফিনাইল, ব্লিচিং পাউডার আর ন্যাপথালিন বল। শুধু দেশের মানুষ নয়, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারও নির্ভর করেছিল আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রতিষ্ঠানের উপর। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের প্রয়োজনীয় অ্যাসিড, রাসায়নিক পদার্থ জার্মানি থেকে আমদানি করা হত। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটেনের প্রধান প্রতিপক্ষই যে জার্মানি! সে সময় বেঙ্গল কেমিক্যালসকে যুদ্ধের যাবতীয় রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়েও আহত সৈনিকদের ওষুধের ব্যবস্থা করে বেঙ্গল কেমিক্যালস। আবার স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবীরাও নানা সাহায্য পেয়েছেন এই সংস্থা থেকে।
ABHIJIT CHANDA
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bengal Chemicals and Pharmaceuticals, Coronavirus, Sanitizer