বিজ্ঞাপন
হোম / খবর / Uncategorized / আত্মজার আত্মকথা: বৃষ্টি, ধ্রপদ ও রবিঠাকুর

আত্মজার আত্মকথা: বৃষ্টি, ধ্রপদ ও রবিঠাকুর

আত্মজার আত্মকথা: বৃষ্টি, ধ্রপদ ও রবিঠাকুর

আত্মজা আজ আবার মনখারাপের বৃষ্টি এল। তোর সুরেলা কন্ঠে রবি ঠাকুরও এলেন গুটি গুটি পায়ে। তুই স্থির দৃষ্টিতে সামনের জলের দিকে তাকিয়ে থাকলি। মাঝে মধ্যে বাজ পড়ার শব্দ। বাজের শব্দ শুনে আমার বুকের মধ্যে কেঁপে কেঁপে উঠছিল। আমি চলে যেতে চাইলাম জলের সামনে থেকে। তুই হাতটা ধরে বসিয়ে দিলি। বললি জলের সঙ্গে জলকেলি দেখতে। তার সঙ্গে সঙ্গেই জুড়লি গান। আরে এ গান কোথায় এতো সংস্কৃতশ্লোক। “সং গচ্ছধ্বং সং বদধ্বং সং বো মানাংসি জানতাং / সমানো মন্ত্র: সমানী সমানাং মন: সহ চিত্ত মেষাং।” থামিয়ে বললি চিনতে পারলি সুরটা। আমি বললাম হ্যাঁ, এটাতো রবি ঠাকুরের আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর গানটার নকল। তুই এটা শুনেই হো হো করে হেসে উঠলি। বললি নকল নয় রে বুদ্ধু। রবি ঠাকুর গানটার সুর ঋকবেদের এই শ্লোক থেকেই নেওয়া। আমি এই শুনে আর কথা বাড়ালাম না। গান সম্পর্কে কিছুই জানি না তো। তবে তোর গলায় সুর শুনতে বেশ লাগে। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনি আত্মজা।

  • 3-MIN READ News18
  • Last Updated :

    আত্মজা আজ আবার মনখারাপের বৃষ্টি এল। তোর সুরেলা কন্ঠে রবি ঠাকুরও এলেন গুটি গুটি পায়ে। তুই স্থির দৃষ্টিতে সামনের জলের দিকে তাকিয়ে থাকলি। মাঝে মধ্যে বাজ পড়ার শব্দ। বাজের শব্দ শুনে আমার বুকের মধ্যে কেঁপে কেঁপে উঠছিল। আমি চলে যেতে চাইলাম জলের সামনে থেকে। তুই হাতটা ধরে বসিয়ে দিলি। বললি জলের সঙ্গে জলকেলি দেখতে। তার সঙ্গে সঙ্গেই জুড়লি গান। আরে এ গান কোথায় এতো সংস্কৃতশ্লোক। “সং গচ্ছধ্বং সং বদধ্বং সং বো মানাংসি জানতাং / সমানো মন্ত্র: সমানী সমানাং মন: সহ চিত্ত মেষাং।” থামিয়ে বললি চিনতে পারলি সুরটা। আমি বললাম হ্যাঁ, এটাতো রবি ঠাকুরের আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর গানটার নকল। তুই এটা শুনেই হো হো করে হেসে উঠলি। বললি নকল নয় রে বুদ্ধু। রবি ঠাকুর গানটার সুর ঋকবেদের এই শ্লোক থেকেই নেওয়া। আমি এই শুনে আর কথা বাড়ালাম না। গান সম্পর্কে কিছুই জানি না তো। তবে তোর গলায় সুর শুনতে বেশ লাগে। আমি মুগ্ধ হয়ে শুনি আত্মজা।

    বিজ্ঞাপন

    নিজেই শুরু করলি। আবার নিজেই থামিয়ে দিলি। তখন আকাশে বাজের আওয়াজ বাড়ছে। সন্ধ্যে পাঁচটার সময়েই কালো আঁধার ঘনিয়ে আসছে। এই ঝিলের পাড়ে শুধু সন্ধ্যা নামেনি যেন। একটা সদ্য কাটা নারকেল গাছের গুড়ির ওপর বসে ইলশিগড়ি গায়ে মাখছিস তুই। আর তোর জন্য আমি ভেজাচ্ছি আমার পাঞ্জাবি। আরও একবার বললাম , “বাজ পড়ছে। ঝড় উঠছে। ভিজে যাচ্ছি তো, চল এবার। নতুন পাঞ্জাবিটাও তো…।” এই শুনে রেগে গেলি। বলে উঠলি, “চুপ। ভিজুক তোর পাঞ্জাবি। চুপ করে শোন আরও একটা গাইছি।” তুই গান করবি বললে কি আর আমি কিছু বলতে পারি? গেয়ে উঠলি,লাবন্য রামা কানু লাড়া জুড়াবে/ অতি লাবন্য রামা কানু লাড়া জুডাবে।/ শ্রীবান্নিতা চিত্তা কুমুদা/ সীতা কারা সাতানানাজা।” আমি আর কিছুই বললাম না। মানে জানতে চাইলাম বিষয়টা কি। তুই হাসতে হাসতে বলে দিলি উত্তরটা,এটা তেলেগু গান। যার থেকে অনুপ্রানিত হয়ে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন একি লাবন্যে পূর্ণ প্রান, প্রানশ হে,/ আনন্দ বসন্ত সমাগমে।” sad-lonely-alone-boy-walking-in-rain-with-umbrella-in-hand-photo-wide

    আমি কোনও কথা বললাম না। ইচ্ছে করল গান করতে। এই প্রবল ঝড়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে হয়। আমার চিৎকার এই হাওয়ায় যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে যাক। আমিও গান ধরলাম নবীন দাস বাউলের সেই গানটা, হরিনাম দিয়ে জগৎ মাতালে আমার একলা নিতাই/ আমার একলা নিতাই, একলা নিতাই একলা নিতাই।” তুই সঙ্গে সঙ্গে গেয়ে উঠলি রবিঠাকুরের ভার্সানটা, যদি তোর ডাকশুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে। আহা সে কি সুর। এই কয়েক পশলা বৃষ্টি আর ঝড়ের হাওয়ায় তোর হাত ধরে যেন মনে হচ্ছে উড়ে যাই। গানটা শেষ হল। দুজনেই তাকালাম ঝিলের দিকে। ক্রমশ অশান্ত হয়ে উঠছে যেন ঝিলের জল। ছোট ছোট ঢেউ এসে আবার যেন মিলিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টির ফোঁটা ধরতে হাত বাড়ালি তুই। সেই হাতের তালুর মধ্যে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি এসে পড়ল। সেই তালুটা মুঠো করে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললি,“এই নে আমার হৃদয়।” আমি তোর হাতটা ছুঁলাম আত্মজা। তুই ফের গেয়ে উঠলি তারে ধরি ধরি মনে করি ধরতে গেলে আর পেলেম না/ দেখেছি রূপ সাগরে মনের মানুষ কাঁচা সোনা। আমি থামিয়ে দিয়ে বললাম গগন হরকরার এই গানটার থেকে একই সুরে রবিঠাকুর যে গানটা লিখেছিলেন সেই গানটা গাই চল। দু জনেই গেয়ে উঠলাম ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে/ ও বন্ধু আমার/ না পেয়ে তোমার দেখা/ একা একা দিন যে আমার কাটে না রে। আহা কি কথা। আমি গান জানি না। শুধু জানি একটা দাঁড়িওয়ালা লোককে। যার লেখা শুনলে মনে হয় গুন গুন করে উঠি। আত্মজা গানের ছাত্রী। ও যখন গেয়ে ওঠে তখন আমি মুগ্ধ হয়ে যাই বরাবর।

    বিজ্ঞাপন

    এই বৃষ্টিতে ওর গলায় গান যেন ওলোটপালোট করে দিল আমায়। আরও যেন অগোছালো হয়ে উঠল মন। ও ইংরাজী গানটাও বেশ গায়। রবীন্দ্র নাথের গান নিয়ে পড়তে গিয়ে শিখেছে। বিশেষ করে ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কিবা মৃদু বায় গানটা যে স্কটিশ লোক গানটি থেকে নিয়েছেন রবি ঠাকুর সেই ye banks and braes o’ bonnie doon গানটা। আমি তো কেবল শ্রোতা হই তখন। বলতে পারা যায় ও গান করলে আমি দিকভ্রষ্ট পথিকের মত পথ হাতরাই। চেনা পথও যেন অচেনা লাগে তখন। বাজ পড়া বাড়তে লাগল। আকাশ চিরে নেমে আসছে রূপোলী আলো। সেই আলো আঁধারিতে আত্মজা তোর ফর্সা মুখ যেন আরও ফর্সা লাগছে। ঠোঁটগুলোর ওপর বৃষ্টি এসে ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে। আমার পাঞ্জাবি ভিজে জবজবে। তোর সালোয়ারও। আমাদের সঙ্গে ভিজজেছেন আরও একজন। তিনি রবিঠাকুর। আমরা ভিজতে ভিজতে একশা হচ্ছি। তুই আবার শ্লোকটা আউরাতে শুরু করলি “সং গচ্ছধ্বং সং বদধ্বং সং বো মানাংসি জানতাং।” ঝিলের জলে একটা হলুদ পাতা উড়ে এসে পড়ল। তারপর ভেসে যেতে লাগল। ওর সঙ্গে সঙ্গে যেন আমরাও বৃষ্টিতে ভেসে যাচ্ছি ক্রমশ।

    বিজ্ঞাপন

    ব্লগ: প্রসূন বিশ্বাস

    নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
    • First Published :
    বিজ্ঞাপন
    বিজ্ঞাপন