গত আগস্ট মাসেই চাঁদের মাটিতে সফলভাবে পা রাখতে পেরেছে তেরঙ্গা। চন্দ্রযান তিনের সাফল্যে এখনও মশগুল গোটা দেশ। তার মধ্যেই আবার নতুন দূরত্বে ছুঁতে চলেছে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন। সেই দৌড়ে সামিল জেলার এক তরুণ বিজ্ঞানী। যিনি চন্দ্রযান তিনের সফল কারিগরদের একজন। তবে এই সফলতার আনন্দে থেমে নেইতিনি। বদলে লাগাতার চালিয়ে যাচ্ছিলেন কাজ। তাই চন্দ্র অভিযানের পরে সূর্য অভিযানেও জেলার এই তরুণ নিজের কৃতিত্বের ছাপ রেখে চলেছেন। তিনি সানি মিত্র। খনি শহর রানিগঞ্জের বাসিন্দা সানি মিত্র। তিনি রয়েছেন সূর্য মিশনের বিকাশ ইঞ্জিন বিভাগে।
advertisement
এই বিষয়ে সানি মিত্র জানিয়েছেন, চন্দ্রযান তিন অভিযানের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছিল এলভিএম থ্রি লঞ্চার ভেহিকেল। তবে আদিত্য এলওয়ান মিশনে ব্যবহার করা হচ্ছে পিএসএলভি রকেট। এই মুহূর্তে ইসরোর অভিযানের ক্ষেত্রে প্রথম ব্যবহার্য রকেট পিএসএলভি। এই রকেটটি একটি স্টেট প্রোফাইল লঞ্চার ভেহিকেল। এখানে কোনও সলিড বুস্টার নেই। অন্যদিকে আদিত্য এল ওয়ান নামে যে স্পেসক্রাফট রয়েছে, সেখানে ব্যবহার করা হয়েছে সেকেন্ড স্টেজ হাই প্রেসার লোয়ার থ্রাস্ট বিকাশ ইঞ্জিন। এই বিকাশ ইঞ্জিনের দায়িত্বে যে টিম রয়েছে, সেখানে রয়েছেন সানি মিত্র।
সানি বাবু জানিয়েছেন, সূর্য অভিযানেযে বিকাশ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয়েছে তার ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, টেস্টিং সবকিছুই হয়েছে,যার ফলাফল খুবই সন্তোষজনক ছিল। এই বিকাশ ইঞ্জিনের হেলথ মনিটারিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্যদিকে, আদিত্য এল ওয়ান সম্পর্কে বলতে গিয়ে সানি মিত্র জানিয়েছেন, ইসরোর পাঠানো এই সূর্যযানকে এমন একটি অরবিটে প্রতিস্থাপন করা হবে, যেখানে সেটি কম জ্বালানি ব্যবহার করবে। আবার একটি নির্দিষ্ট অরবিট ধরে ঘুরতে থাকবে। এল ওয়ানের অর্থ হিসেবে তিনি বুঝিয়েছেন, ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট ওয়ানে এই স্পেসক্র্যাফট প্রতিস্থাপন করা হবে। যাতে করে সেটির ব্যালেন্স থাকে। অর্থাৎ সেটা সূর্যের দিকেও বেশি এগিয়ে না যায়। বা পৃথিবীর দিকেও না চলে আসে।
আদিত্য এল ওয়ানের সূর্যের কক্ষপথে পৌঁছতেসময় লাগবে প্রায় চার মাস। নির্দিষ্ট সময় পর ইসরোর পাঠানো এই সূর্যযান এল ১ পয়েন্টে প্রতিস্থাপন করা হবে। তারপর সেটি সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করবে এবং সূর্যের যে সমস্ত লেয়ারগুলি রয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য খুঁজে বের করবে। সূর্যের চারপাশের অ্যাটমোস্ফিয়ার সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করবে আদিত্য এল ওয়ান। প্রসঙ্গত, চন্দ্রযান তিন যে দূরত্ব অতিক্রম করেছিল, আদিত্য এল ওয়ান তার থেকে চার গুণ দূরত্ব অতিক্রম করবে।
চন্দ্রযানের মতই আদিত্য এল ওয়ান অভিযানও ইসরোর কাছে ভীষণভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারত এর আগে কখনও সূর্য অভিযান করেনি। চন্দ্রযান তিনের সাফল্যের মধ্যে ইসরোর বিজ্ঞানীদের নতুন এই পরিশ্রম দেশবাসীকে আবার গর্বিত করবে। এই অভিযান সফল হলে সূর্য সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য হাতে আসবে ইসরোর। চন্দ্রযান তিনের ক্ষেত্রে যেভাবে সফট ল্যান্ডিং করানো বিজ্ঞানীদের কাছে চ্যালেঞ্জিং ছিল, এখানেও তেমন চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আদিত্য এলওয়ান স্পেসক্রাফট অরবিটে প্রতিস্থাপন করা যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং বলে জানিয়েছেন ওই তরুণ বিজ্ঞানী। তবে এই মিশনের ক্ষেত্রেও এমন প্রযুক্তি এবং যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেশি। তাই চন্দ্রযানের মত এই অভিযানেও সাফল্য আশা করছেন বিজ্ঞানীরা। যে টিমে শামিল রয়েছেন জেলার এক তরুণ বিজ্ঞানীও।
নয়ন ঘোষ