সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী, তেল ও গ্যাস খাতে ভারতের আমদানি নির্ভরতা ২০৩০ সালের মধ্যে ১৫ শতাংশে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে। তারপর ২০৪৭ সাল নাগাদ ‘সম্পূর্ণ স্বাধীন’। পেট্রোল-ডিজেলের বিকল্প হিসেবে ‘গ্রিন ফুয়েল’কে কাজে লাগাতে চাইছে মোদি সরকার।
কিন্তু কীভাবে? কীভাবে পেট্রোল, ডিজেলের আমদানি কমিয়ে গ্রিন ফুয়েলকে কাজে লাগানো হবে? এই কাজের জন্য বেসরকারি পরামর্শদাতাদের সাহায্য চেয়েছে কেন্দ্র সরকার।
advertisement
আরও পড়ুন- শেষবেলায় বাজিমাত ISRO-র! আদিত্য নিয়ে আসছে বিরাট সুখবর, আরেক রেকর্ডের পথে ভারত?
আগামী ১৫ মাস তারা এর উপরে কাজ করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের মতো ‘ম্যাচিউর গ্যাস মার্কেট’ এবং জাপানের মতো ‘প্রতিযোগিতামূলক বাজারে’ কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে এদের।
এই সম্পর্কিত বেশ কিছু নথি নিউজ ১৮-এর হাতে এসেছে। তা থেকে জানা যাচ্ছে, দেশ জুড়ে ‘দ্রুত গতিতে’ তেল ও গ্যাসের অনুসন্ধান এবং উৎপাদন করবে বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি কীভাবে ‘গ্যাস ভিত্তিক অর্থনীতিতে স্যুইচ করা’ এবং বিকল্প জ্বালানিকে কাজে লাগানো যায়, তা খতিয়ে দেখা হবে।
পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রককে (MoPNG) ‘বিস্তৃত পুনর্গঠন পরিকল্পনা’র মাধ্যমে ‘ভবিষ্যতের জন্য উপযোগী সংস্থা’ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বেসরকারি পরামর্শদাতাদের থেকে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। নথিপত্র থেকে এমনটাই জানা যাচ্ছে।
সরকারি নোটে বলা হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের মোট জ্বালানি খরচের ১২ শতাংশই হবে ভারতে। বর্তমানে জ্বালানির বৃহৎ অংশ আমদানি করা হয়। অথচ অভ্যন্তরীণভাবে তেলের খরচের ১৫ শতাংশেরও কম মেটে।
আরও পড়ুন- WhatsApp চ্যানেল ডিলিট করতে চান? বড় ভুল করার জেনে নিন এইসব বিষয়
পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য বেসরকারি পরামর্শদাতাদের দ্রুত অনুসন্ধান, উৎপাদন, পরিমার্জন এবং কৌশলগত স্টোরেজ বৃদ্ধির জন্য ‘শক্তির সমস্ত ক্ষেত্রগুলিতে মনোনিবেশ’ করার কথা বলা হয়েছে।
পাশাপাশি অ-উৎপাদনকারী ব্লকগুলিতে কীভাবে অনুসন্ধান, উৎপাদন শুরু এবং উৎপাদন বৃদ্ধির কাজ শুরু করা যায়, তা ভেবে দেখতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে পাললিক অববাহিকাগুলির মূল্যায়ন এবং অন্বেষণ সম্পূর্ণ করার উপর বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে।
নথিতে বলা হয়েছে, ‘ভারতের নেট রফতানিকারক অবস্থান বজায় রাখার জন্য বৃহৎ পুঁজির নিবিড় পরিশোধন ক্ষমতা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে স্থানীয় পেট্রোকেমিক্যাল উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করে ৪০.৯ এমএমপিটিএ-তে নিয়ে যেতে হবে।
যাতে ভারত ব্যাপক আকারে গ্যাস এবং ন্যাপথা সরবরাহ করতে পারে। এতে পেট্রোকেমিক্যাল আমদানি নির্ভরতা অনেকটা কমবে’। পাশাপাশি এও বলা হয়েছে, ‘চাহিদা এবং জোগানের ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য ভারতকে বিকল্প জ্বালানিতে ‘ডবল ডাউন; করতে হবে’।
এখন প্রশ্ন হল, এই সব লক্ষ্য পূরণ করতে বেসরকারি পরামর্শদাতারা কী করবেন? তাঁদের কাজটা কী হবে? জানা যাচ্ছে, তাঁরা বিশ্বব্যাপী ‘এনার্জি সেক্টরের ল্যান্ডস্কেপ মূল্যায়ন’ করবেন এবং সেই অনুযায়ী আমদানি নির্ভরতা কমাতে ভারতের বাজারে জৈব জ্বালানিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তার রোডম্যাপ প্রস্তুত করে দেবেন।
জ্বালানি নিয়ে উন্নত দেশগুলির সরকারি মন্ত্রক কীভাবে কাজ করে, উদীয়মান বাজারের কী করা উচিত, সে সবও খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। সেই অনুযায়ী তৈরি হবে সাংগঠনিক কাঠামো। ভারত কীভাবে সেই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে তার রূপরেখাও ছকে দেবেন তাঁরা।
এখানেই শেষ নয়। বেসরকারি সংস্থা এবং পরামর্শদাতারা দেশের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের সাংগঠনিক কাঠামো এবং বর্তমান অপারেশন মডেল খতিয়ে দেখে বলে দেবেন, কোথায় পরিবর্তন আনা উচিত, সহজে ব্যবসা করার জন্য কী কী সংস্কার করতে হবে। নথি বলছে, ‘আজ ভারতে যা রয়েছে এবং বিশ্বের সেরা কাঠামোর মধ্যে ফাঁকগুলো খুঁজে বের করা’র কাজ করবেন এই পরামর্শদাতারা।
শুধু তাই নয়, তেমন বুঝলে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রককে ঢেলে সাজানো হতে পারে। নথিতে যা উল্লেখ করা হয়েছে সেই অনুযায়ী, পরামর্শদাতাদের ‘বর্তমান এবং ক্রমবর্ধমান দায়িত্বের উপর ভিত্তি করে পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রকের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ ভূমিকা কী হওয়া উচিত তা কল্পনা করা এবং সেই অনুযায়ী অপারেটিং মডেল ছকে দেওয়া’র সুপারিশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, জলবায়ু সঙ্কট নিয়ে চিন্তায় গোটা বিশ্ব। বিশ্বব্যাপী বিক্ষোভ, আন্দোলন চলছে। প্রথম বিশ্বের দেশগুলির কাছ থেকে সদর্থক পদক্ষেপের দাবি করছেন অনেকেই।
এসবের মধ্যেই গ্লাসগোর বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের মঞ্চে, ২০৭০ সালের মধ্যে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। পেট্রোল, ডিজেল আমদানি কমিয়ে বিকল্প জ্বালানিতে স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্য যে সেই পথে দেশকে অনেকটা এগিয়ে দেবে সন্দেহ নেই।