AmpIn এনার্জি ট্রানজিশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও সিইও এবং ফিকি-র রিনিউয়েবল এনার্জি সিইও কাউন্সিলের সদস্য পিনাকী ভট্টাচার্য তাঁর বলেন, ‘‘পূর্বাঞ্চল এনার্জি ট্রান্সজিশনের জন্য প্রস্তুত। রিনিউয়েবল এনার্জিকে কাজে লাগালে শিল্পক্ষেত্রে অন্তত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ সঞ্চয় হবে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি প্রদানকারীদেরও এজন্য দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়া উচিত। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সহযোগিতাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৷’’
advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘‘পূর্বাঞ্চল কয়লার আকর রূপে বহু দিন ধরে পরিচিত, এবার সময় এসেছে নবায়নযোগ্য শক্তি গ্রহণের। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহারে আমাদের যে প্রকল্প, তা এক নতুন মাইলফলকে পরিণত হবে এই বিনিয়োগের দ্বারা। ১০০ শতাংশ আরই অর্জনের প্রতিশ্রুতিতে AmpIn যে কোনও গ্রাহকের সঙ্গে অংশীদারিত্ব করতে ইচ্ছুক এবং আমরা বিশ্বাস করি গ্রিন এনার্জির সঠিক অ্যাক্সেসে সুপরিকল্পিত বিনিয়োগ এই প্রকল্পকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলবে। এছাড়াও, আমরা এই অঞ্চলে যে সোলার সেল এবং মডিউল ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করছি, তা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির এই প্রকল্পকে জোরদার করবে। তবে এও ঠিক যে তা সার্থক হওয়ার জন্য শিল্পক্ষেত্র, বিবিধ সমস্যার সমাধান প্রদানকারী ক্ষেত্র, আর্থিক খাত, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য উভয় পর্যায়ে সরকারের মধ্যে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই শক্তি রূপান্তরের ক্ষেত্রে চারটি চাকারও একযোগে চলা দরকার: আর্থিক বাজার, শিল্পক্ষেত্র যা ডিকার্বনাইজ করে শক্তির খরচ বাঁচাবে, এনার্জি ট্রানজিশনার্স যা পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি পরিবর্তনের জন্য সমস্যার সমাধান তৈরি করবে এবং সরকার যা পূর্বাঞ্চলের জন্য এই পরিবর্তনকে সমর্থন করার জন্য সঠিক নীতি নির্ধারণ করবে।’’
আরও পড়ুন– ডিসেম্বরের শুরুতেই ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা! জানুন এই ঝড়ের নাম কোন দেশ দিয়েছে
গোটা বিশ্বই পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির দিকে ঝুঁকছে। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে ভারত কীভাবে নেট-শূন্য লক্ষ্য অর্জন করতে পারে তা তুলে ধরেন ডেলয়েট ইন্ডিয়া-র অংশীদার অনীশ মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনে গোটা বিশ্বের তুলনায় ভারতের পারফরম্যান্স অনেক ভাল। প্রতি বছর ৬-৭ শতাংশ বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে। বাণিজ্য ও শিল্প খাতেই মূলত এর চাহিদা। যথেষ্ট বিনিয়োগও আসছে। এই অগ্রগতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে।’’
সেমিনারে সিইএসসি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ক্রয়ক্ষমতা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর স্টোরেজ খরচ অনেক বেশি। এখন ব্যাটারির খরচ কমানোর সময় এসেছে। পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহারের জন্য ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী অপরিহার্য। স্টোরেজ খরচ কমে গেলে একে কার্যকর ব্যাকআপ হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে পিক সিজনে। যেমন গ্রীষ্মে তাপমাত্রা পৌছয় ৫২৩-৫৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ফলে আমাদের এখানে চাহিদা ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। পূর্বের রাজ্যগুলিতে মোট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ক্ষমতা প্রায় ৮০ গিগাওয়াট। এই ক্ষমতা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত।’’
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকের প্রাক্তন সচিব অনিল রাজদান বলেন, ‘এই ট্রানজিশন খুব ধীরে হচ্ছে। তবে সম্ভাবনা প্রচুর। গ্লোবাল ওয়ার্মিংই পুনর্নবীকরণ যোগ্য শক্তি ব্যবহারে আমাদের বাধ্য করছে। এটা প্রয়োজন। তবে খরচ কমাতে হবে। আমাদের মানসিকতা এবং জীবনযাত্রারও পরিবর্তন করতে হবে। জোয়ারের শক্তি বা নদীর জল থেকেও বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে’।
ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ডিরেক্টর অজয় কুমার পাণ্ডে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে আমরা বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। এশিয়ার প্রাচীনতম চলমান হাইড্রো প্ল্যান্টগুলির মধ্যে একটি এখানে অবস্থিত। ২০০৭ সাল থেকে, আমাদের পুরুলিয়ায় ৯০০ মেগাওয়াট পাম্প স্টোরেজ কাজ করছে। এবং একই জায়গায় একই রকম ক্ষমতার আরও চারটি অতিরিক্ত পাম্প স্টোরেজ তৈরির পরিকল্পনা চলছে। ৫০০ মেগাওয়াট ভাসমান সোলার ইউনিটের জন্য ইতিমধ্যেই সরকারি ছাড়পত্র মিলেছে।’’
ওড়িশা সরকারের ইন্ডাস্ট্রিজ ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি হেমন্ত শর্মা বলেন, ‘‘শক্তি দক্ষতা এবং সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্য কার্যকর নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। এর ব্যবহারের জন্য বাণিজ্যিক ও শিল্প গ্রাহকদের উৎসাহিত করা প্রয়োজন। ওডিশায় ইতিমধ্যেই কাজ শুরু হয়েছে।’’
এদিনের অধিবেশনে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন ছত্তিসগঢ় ইলেকট্রিসিটি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান হেমন্ত ভার্মা। তিনি বলেন, ‘‘পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার সময়ের দাবি। ছত্তিসগঢ় সরকার এর জন্য ভর্তুকি দিচ্ছে। সহযোগিতামূলক পদ্ধতিতেই এগিয়ে যেতে হবে।’’
এই ক্ষেত্রে ভারত সরকারের একাধিক পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন কেন্দ্রের নতুন ও পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব ললিত বোহরা। তিনি বলেন, ‘‘পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির বাজারে ভারত অনেক এগিয়ে। ইনস্টল ক্ষমতায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে। একে আরও ছড়িয়ে দিতে নিয়মিত প্রচার এবং বাণিজ্যিক ও শিল্প গ্রাহকদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।’’
প্রসঙ্গত, AmpIn এনার্জি ট্রান্সজিশন হল ভারতের নেতৃস্থানীয় পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি স্থানান্তর প্ল্যাটফর্ম। পূর্বাঞ্চলে প্রায় ৩১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ করছে তারা। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিসগঢ় এবং উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। পূর্বাঞ্চলে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি স্থানান্তরকে মসৃণ গতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ক্লিন এনার্জি সলিউশন গ্রহণে উৎসাহিত করাই সংস্থার লক্ষ্য।
এই অঞ্চলে, কোম্পানির ~২০০ এমডব্লিউপি -এর বৃহত্তম সৌর ওপেন অ্যাক্সেস পোর্টফোলিও রয়েছে। সিইএসসি- এর সঙ্গে ২৫০ এমডব্লিউপি বায়ু সৌর হাইব্রিড প্রকল্পের জন্য বৃহত্তম ইউটিলিটি পিপিএ এবং শিল্প গ্রাহকের জন্য ১০.৫ মেগাওয়াটের বৃহত্তম মিটার শিল্প সৌর প্রকল্প নিয়েছে কোম্পানি। সিমেন্ট ও স্টিল, আইটি ও ডেটা সেন্টার, হেভি ইঞ্জিনিয়ারিং, এফএমসিজি, ইউটিলিটি ইত্যাদির মতো বিভিন্ন সেক্টরের গ্রাহকদের পরিষেবা দিচ্ছে AmpIn এনার্জি ট্রান্সজিশন।
আরও খবর পড়তে ফলো করুন