শর্মাবাবু আক্রান্ত হয়েছিলেন Obstructive Sleep Apnoea (OSA)-এ। এটি একটি জটিল শারীরিক অবস্থা, যেখানে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে গলার পেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। ভারতের প্রবীণ জনগোষ্ঠী সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় প্রায় তিন গুণ হারে বাড়ছে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দীর্ঘস্থায়ী অসুখের বোঝাও। OSA সেইরকমই রকটি অসুখ যা নীরবে শরীরকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে। এই অসুখের লক্ষণগুলো বহু মানুষের কাছেই পরিচিত! এরমধ্যে রয়েছে, ঘুমের মাঝেই দম বন্ধ হয়ে আসা, মাঝরাতে বার বার জেগে ওঠা, সকালে নিস্তেজ হয়ে পড়া, দিনের বেলায় অস্বাভাবিক তন্দ্রাভাব। কেউ দীর্ঘদিন ধরেই এই সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছেন, কারও সদ্য শনাক্ত হয়েছে, আবার বহু মানুষ আজও এই সমস্যার কথা জানতেই পারেননি।
advertisement
থেরাপির শুরুতেই যে মানসিক দ্বিধা
পশ্চিমবঙ্গের অভিজ্ঞ পালমোনারি বিশেষজ্ঞ, ডাঃ ইন্দ্রনীল হালদার (Chest, TB & Respiratory Diseases) জানান, ” থেরাপি শুরু হওয়ার পর পরই রোগীর সমস্যা ও সংশয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে সমাধানের চেষ্টা বয়স্ক রোগীদের Long-term Compliance উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দেয়। আমার ক্লিনিকে CPAP Therapy-র গ্রহণযোগ্যতা ৫০%-এরও বেশি, যেখানে গ্লোবাল গড় প্রায় ৪০%।”
শর্মা যখন CPAP Therapy-র নির্দেশ পেলেন, তখন শুরু হল তাঁর জীবনের নতুন যাত্রা। মাস্ক অচেনা, টিউবগুলো ঘুমের মাঝেই জট পাকায়, আর স্থির বায়ুচাপ তাঁর কাছে অস্বস্তিকর মনে হত…“মনে হয় প্রতিরাতে মেশিনটার সঙ্গে লড়াই করছি,”—ক্লান্ত গলায় বলেছিলেন শর্মাবাবু।
তিনি একা নন। ভারত জুড়ে বহু রোগী মেক্যানিক্যাল ডিসকমফর্ট, মাস্ক-লিক এবং শুষ্ক মুখের সমস্যাকে থেরাপির প্রধান বাধা হিসেবে ধরেন। গবেষণা বলছে—প্রবীণদের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতা তুলনামূলকভাবে কমে যায়। কেয়ারগিভার-রাও সমানভাবে মানসিক চাপ অনুভব করেন। নাকডাকা কমে গেলে যেমন স্বস্তি আসে, থেরাপিতে অভ্যস্ত হতে না পারলে হতাশাটাও তাঁরা ভাগ করে নেন।
ডাঃ ইন্দ্রনীল বলেন, “প্রায় ২০–৩০% প্রবীণ রোগী অনুনগত থাকতে পারেন। কিন্তু যখন তাঁরা থেরাপির প্রয়োজনীয়তা বোঝেন এবং উপসর্গ লাঘব অনুভব করেন, তখন প্রায় ৭০% রোগী নিয়মিত থেরাপি চালিয়ে যান।” তিনি আরও জানান, ” অনেক প্রবীণ রোগী একা থাকেন বা শুধু সঙ্গীর সঙ্গে থাকেন। ফলে পরিবারের উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। সন্তানরা অনেক সময় দূরে বা বিদেশে থাকেন, তাই সবাই মিলে রোগীকে থেরাপির প্রয়োজনীয়তা বোঝানোর চেষ্টা করেন। এটা যেন এক সম্মিলিত দায়বদ্ধতা।”
চিকিৎসকরা মনে করিয়ে দেন—প্রথমের কয়েকটি কঠিন রাতকে দেখে থেরাপি থেকে সরে যাওয়া উচিৎ নয়। একজন অভিজ্ঞ ক্লিনিশিয়ানের পর্যবেক্ষণ, ” অনেক পরিবার খুব তাড়াতাড়ি থেরাপি বন্ধ করতে চান। অথচ ভাল ঘুম দিনের শক্তি ফিরিয়ে আনে, মানসিক প্রশান্তি বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদে সামগ্রিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।”
ডাঃ ইন্দ্রনীল বলেন, “চিকিৎসা কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে এবং থেরাপি বন্ধ রাখলে কী জটিলতা হতে পারে, এ’সব স্পষ্টভাবে বোঝালে রোগীর আনুগত্য উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়।”শেষ পর্যন্ত, উন্নত ঘুম শুধু রোগীর জন্যই নয়—এটি সঙ্গীর উদ্বেগ কমায়, পরিবারের সদস্যদের শক্তি ফিরিয়ে আনে এবং সমগ্র সংসারের জীবনযাত্রার মানকে সমৃদ্ধ করে।
প্রবীণদের জন্য আরও স্মার্ট CPAP সমাধান
সুখবর হল, CPAP মেশিনগুলো এখন অনেকটাই উন্নত। আধুনিক ডিভাইসগুলো EZStart ও Smart Ramp-এর মতো ফিচারের মাধ্যমে ধীরে ধীরে বায়ুচাপ বাড়ায়—ফলে প্রথম রাতেই হঠাৎ অতিরিক্ত চাপের মুখোমুখি হতে হয় না। শ্বাস ছাড়াও অনেক সহজ, তাই অস্বস্তি কমে যায়। পাশাপাশি, এগুলি ঘুমের ডেটা ট্র্যাক করে, যাতে চিকিৎসকরা বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতে থেরাপি আরও নিখুঁতভাবে করতে পারেন।
শর্মার কাছে যখন এই ধরনের বিকল্পের কথা জানা গেল, তখন যেন নতুন আশার আলো ফুটে উঠল… “হয়তো আমাকে মেশিনটার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে না, বরং মেশিনটাই আমার সঙ্গে মানিয়ে নেবে।”
কারণ জীবনের সোনালি পর্বে প্রতিটি শান্তির রাতের ঘুমই লড়াই করে পাওয়ার মতো মূল্যবান।
আরও জানুন এখানে: https://www.philips.co.in/c-e/hs/sleep-apnea-therapy/sleep-apnea-machines.html
অস্বীকৃতি: “শর্মা ” নামটি কেবল উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এটি স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত বহু মানুষের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে একটি কাল্পনিক চরিত্র। চিকিৎসকদের মতামত তাঁদের ব্যক্তিগত অভিমত—এগুলো সংস্থার নীতি বা অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না। চিকিৎসা সংক্রান্ত যে-কোনও পরামর্শের জন্য অবশ্যই যোগ্য স্বাস্থ্য-পরামর্শদাতার সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
