সন্ধ্যার পরে পরেই যোধপুর পার্কের নার্সিং হোমে ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলারকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়ে গিয়েছিলেন মোহনবাগানের সচিব সৃঞ্জয় বসু ও অর্থসচিব দেবাশিস দত্ত। পৌঁছে দিয়েছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রীও। মন্ত্রীর সঙ্গে মোহনবাগানের দুই কর্তা যখন আলোচনায় ব্যস্ত, তখনই হাজির হলেন ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার।
প্রথমে কুশল বিনিময়, তারপর আড্ডা, স্মৃতিচারণা , কখনও বা হালকা রসিকতায় প্রতিপক্ষকে মেপে নেওয়া। দেখে কে বলবে কিছুদিন আগেও রণংদেহী মেজাজে ছিল দুই পক্ষ।
advertisement
এই তো ক’দিন আগের কথা। আই লিগের চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা নিয়ে যুযুধান ছিল দুই পক্ষ। মাঠের ভেতরের লড়াই চলে এসেছিল মাঠের বাইরেও। সেই চিরাচরিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা। ইস্টবেঙ্গল বনাম মোহনবাগান। করোনার জেরে আই লিগের ফিরতি ডার্বি পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে প্রথম থেকেই সওয়াল করে এসেছিলেন লাল হলুদের নীতু অ্যান্ড কং। অন্যদিকে দর্শক শূন্য মাঠেই বড় ম্যাচের দাবি জানাচ্ছিলেন টুম্পাই, দেবাশিসরা। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বাগবিতণ্ডা থামাতে ধমক দিতে হয় স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আর বৃহস্পতিবার রাতে এ যেন এক অন্য ছবি। তিন মূর্তির হাসি, ঠাট্টা, ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা দেখে অবাক মন্ত্রী, নেতারাও। তিনজনেই আবার একটা বিষয়ে একমত । লকডাউন এর জেরে পিকে, চুনীর মতো কিংবদন্তির শেষ যাত্রা এরকম জৌলুসহীন হওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। যদিও একটা ছোট্ট খোঁচা একে অপরকে দিত ছাড়লেন না তাঁরা। যেখানে টুম্পাই, দেবাশিসদের মতে, চুনী ও মোহনবাগান সমার্থক। আজীবন সবুজ মেরুন থাকবেন বলে কোচিং করাননি চুনী। সেখানে নীতুর দাবি, তিনি কারওর একার সম্পত্তি নন, তিনি ফুটবলের রত্ন, তিনি ভারতবর্ষের রত্ন।
আসলে তিনি যেমন মোহনবাগানের ঘরের ছেলে, তেমনই ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফুটবলার, অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ। জন্মসূত্রে বাঙাল, কর্মসূত্রে ঘটি। ফুটবলপ্রেমীদের আদরের চুনী । তাই তো যখন হাসপাতালের ভেতর থেকে তাঁর দেহ প্রিয় সবুজ মেরুন পতাকা জড়ানো অবস্থায় বাইরে আসার পরে টুম্পাই, দেবাশিসদের সঙ্গে লাল হলুদ পতাকা জড়িয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানালেন নীতুও। এমনটাই তো হওয়ার ছিল। কারণ, ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল।’
DEBAPRIYA DUTTA MAJUMDAR
