রায় বাড়ির কুলো দেবতা জনার্দন এবং দেবী মা মঙ্গল চন্ডী। প্রতিবছর আশ্বিন মাসে দেবী মঙ্গলচন্ডী এখানে দুর্গার রূপে পুজো হন। তৎকালীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের যশোরের চিঙ্গুঠটিয়া থেকে ভাগীরতি নদীপথ হয়ে চার ভাইয়ের মধ্যে দু’জন, রথীদেব ও শুকদেব সেখানকার বাসস্থান ছেড়ে চলে আসেন। রথিদেব আশ্রয় নেন সরস্বতী নদী তীরবর্তী এলাকায়। তখন ঘন জঙ্গলময় এলাকা আশ্রয় বর্তমানে আন্দুলে এবং সুখদেব জোড়াসাঁকো পৌঁছন।
advertisement
এরপর সেখানে রথিদেবের কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। রথিদেবের কন্যা সন্তানের সঙ্গে মহেশ্বর রায়ের বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময় বর্ধমান রাজ আমলে জমিদার পান মহেশ্বর। তার পরবর্তী সময় থেকে রায় বাড়িতে দুর্গাপুজোর চল হয়। ৩৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দুর্গাপুজোতে পুরনো সেই সময়ের রীতি আজও অক্ষত রায় বাড়িতে। প্রতিবছর দুর্গাপুজো প্রাচীন সেই রীতি রেওয়াজ যত্নে পালিত হয় রায় বাড়িতে।
আরও পড়ুন-‘দেহব্যবসা করে অকালে জীবনটাই শেষ…! স্বামীর নরকযন্ত্রণায় ৩৪-এ মৃত্যু বিখ্যাত বলি নায়িকার, শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার ছিল না কেউ, চিনতে পারলেন?
রায় বাড়ির দুর্গাপুজো মানে ছোট থেকে বড় সকলে উৎসবে মেতে ওঠা। বাড়ির পুজোর অপেক্ষায় থাকেন সকলে। কর্মসূত্রে যে সমস্ত সদস্য দূর-দূরান্তে থাকেন তারাও এই দুর্গাপুজোর কয়েকটা দিন ঘরে ফেরেন। কয়েক বছর আগে পর্যন্ত, রায় বাড়ির দুর্গা দালানেই প্রতিমা তৈরি হত। করোনা সময় থেকে, মৃৎ শিল্পীর গৃহ থেকে তৈরি হয়ে মহালয়ার আগে রায় বাড়ির ঠাকুরদালানে প্রবেশ করে প্রতিমা। মহালয়ার দিন চক্ষু দান হয়। চক্ষুদান সম্পন্ন হলে বোধনের আগে পরিবারের নতুন প্রজন্মের হাতে ধরে দেবীর সাজসজ্জা এবং অস্ত্রদান পর্ব সম্পন্ন হয়। নিয়ম করে হয় চণ্ডীপাঠ। আশ্বিন মাসে রাই বাড়ির কুলো দেবী, মা মঙ্গল চন্ডী দেবী দুর্গা রূপে পুজিত হন।
পুরনো নিয়ম মেনে আজও মহাঅষ্টমীর দিন সানাই বেজে ওঠে রায় বাড়ির ঠাকুরদালানে। এখানে মা শাকাহারি, ষষ্ঠীতে বোধন হয়, পুজো অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত মা’কে ভোগ নিবেদন করা হয়। অষ্টমীতে পোলাও ও বিভিন্ন পদ সহযোগে ভোগ দশমীর দিন চিঁড়ে দধিকর্মা ভোগ। বিজয় দশমীর দিন সকালে দেবীর প্রদক্ষিন শেষে ঠাকুর দালানের সামনের বেদিতে দক্ষিণ রায়ের পুজো। নীল ষষ্ঠী এবং বিজয় দশমী। বছরে দু’বার রায় বাড়িতে দক্ষিণ রায়ের পুজো অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে প্রদক্ষিণ শেষ হলে পরিবারের মহিলারা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন। এরপর আবার সন্ধেয় ঠাকুরদালান থেকে উঠানে প্রতিমা নামিয়ে আবার গ্রামের মানুষের উপস্থিতিতে সিঁদুর খেলা। দশমীর দিন দুইবার সিঁদুর খেলার রীতি রায় বাড়িতে।
রায় বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সরস্বতী নদী। বেশ কিছু আগে বছর পর্যন্ত সরস্বতী নদীতেই প্রতিমা ভাসান হতো। কালের করাল গ্রাসে, সরস্বতী নদী অস্তিত্ব সঙ্কটে। তাই বর্তমানে রায় বাড়ির সামনের পুকুরেই হয় প্রতিমা ভাসান।
এ প্রসঙ্গে রায় বাড়ির সদস্যরা জানান, প্রতি বছর দুর্গাপুজোর দুই আড়াই মাস আগে থেকে বাড়িতে প্রস্তুতি শুরু হয়। পুজোর কয়েকটা দিন রীতি নিয়ম মেনে পুজো আয়োজন এর পাশাপাশি ছোট-বড় সকল সদস্য মিলে আনন্দে মেতে ওঠা। পুজো শেষ হলেই আবার আগামী বছরের অপেক্ষায় দিন গোনা শুরু হয়।





