আসবেষ্টস ছাউনি দেওয়া ছিটেবেড়ার এক চিলতে ঘরে ছোট মেয়ে দুর্গা এবং মাকে নিয়ে ঝুমার সংসার। প্রতিদিন সকাল হলেই টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ঝুমা, জঙ্গলমহলের রাস্তাঘাটে আজ তাঁকে জীবনের পথে উন্নতি হতে পথ দেখিয়েছে। তাঁর জীবনে দারিদ্রতা থাকলেও অশান্তি নেই এখন। এক সময় ঝুমা সচ্ছল ব্যবসায়ী পরিবারের বড় মেয়ে হয়েও আজ সেই টোটোওয়ালা। তাঁর কথায়, “কোনদিন ভাবিনি টোটো নিয়ে আমাকে রাস্তায় বের হতে হবে কিন্তু উপায় নেই বাড়িতে মেয়ে রয়েছে তার মুখে দু’বেলা দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে হবে । মেয়েকে মানুষ করতে আমার এই পথ বেছে নেওয়া৷’’
advertisement
১৯৯৬ এ পারিবারিক সম্বন্ধের মাধ্যমে বাঁকুড়ার বুদ্ধদেব পাত্রের সঙ্গে ঝুমাকে বিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর বাবা মা। ২২ বছর ধরে তার উপর শারীরিক মানসিক অত্যাচার চলত।
মুখ বুজেই তাঁকে সমস্ত অত্যাচার সহ্য করতে হত। স্বামী উধাও হওয়ার আগে সমস্ত গয়না বেছে নিঃস্ব করে দিয়ে যায় পরিবারটিকে। তারপর থেকেই ঝুমার ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু হয় জাগে অদম্য জেদ এবং মনে চেষ্টার জোর নিয়ে সে এগিয়ে চলে নিজের জীবন গড়ে তুলতে।
ঝুমা তাঁর জীবনে সফল হওয়ার পথ খুব একটা সহজ সরল ছিল না। নানান ধরনের ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে সে আজ এই জায়গায় উঠে এসেছে। দু’বছর আগে বাপের বাড়ির সাহায্য নিয়ে বিয়ে দিয়েছে তার বড় মেয়ে মধুমিতাকে। তার ছোট মেয়ে দুর্গা বলে ” বাবা মারধর করত আমাদের অনেক দিন না খেয়ে কাটাতে হয়েছে৷’’
ছোট মেয়ের কথা শুনে ঝুমার চোখে জল নেমে আসে, এবং চোখে জল নিয়ে ঝুমার শপথ নিয়ে বলে ” যত কষ্টই হোক মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়ে ওর স্বপ্ন পূরণ করাই এখন আমার স্বপ্ন।’’ প্রথম দিন টোটো চালিয়ে ২৫ টাকা ভাড়া পেয়েছিল ঝুমা। এখন দৈনিক ৪০০ টাকা তার রোজগার। প্রতিমাসে দেনা শোধ করতে আট হাজার টাকা বেরিয়ে যায়। ঝুমা বলেন প্রথম যেদিন টোটো চালায় রাস্তাঘাট জানতাম না যাত্রীরাই পথ দেখিয়ে নিজের গন্তব্যে পৌঁছে নিয়ে গেছে তাদের হাত ধরে আজ শহরটাকে আমি চিনেছি ৷’’
Buddhadev Bera