ঘরে প্রায় দৃষ্টিশক্তিহীন স্বামী, দুই মেয়ে আর শাশুড়ির সংসার। তাই সংসার চালাতে বাধ্য হয়ে তিন চাকার টোটোতে ভরসা রেখেছেন এই গৃহবধূ। সকালে বাড়ির কাজ, রান্না খাওয়া দাওয়া করে বেরিয়ে পড়েন টোটো চালাতে। বেশ কয়েক মাস আগে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন স্বামী। তবে মনের জোরকে সঙ্গী করে প্রতিদিন যাত্রী বইতে বেরোয় তাঁর সাহসিনী সঙ্গিনী।
advertisement
নারী পুরুষের অধিকার নিয়ে লড়াইয়ের সময় নেই তাঁর। তিনি লড়াই করেন কঠোর বাস্তবতার সঙ্গে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের বাসিন্দা পূর্ণিমা ঘোড়াই। স্বামীর অসুস্থতার কারণে সংসার চালাতে ধরেছেন টোটোর হ্যান্ডেল। প্রতিদিন বেরিয়ে যে দু-টাকা রোজগার হয় তাতে চলে সংসার, সন্তানদের পড়াশুনো, কিংবা চিকিৎসাও। এভাবেই প্রতিদিন কায়িক পরিশ্রম করে সংসার চালিয়ে রেখেছেন পূর্ণিমা।
প্রসঙ্গত স্বামী মদন ঘোড়াই, বেশ কয়েক বছর আগে দুচোখে প্রায় দৃষ্টিশক্তি হারায়। তিনি টোটো চালিয়ে সংসারে অর্থ জোগাতেন। কিন্তু মদন বাবুর চোখের সমস্যার কারণে অমাবস্যার রাতের মতো অন্ধকার নেমে আসে পরিবারের।
তবে তখনই সংসারের হাল ধরেন পূর্ণিমা। দুই মেয়ের পড়াশোনা থেকে সংসার চালাতে বেশ হিমশিম খেতে হয় পূর্ণিমাকে। তবু মনের জোর নিয়ে টোটো নিয়ে বেরোয় সে। সংসারে রান্না কাজ স্বামীর পরিচর্যার পর বাজারে টোটো চালিয়ে যা রোজগার হয় তাতেই চলে দিন। কষ্টের কথা বলতে গিয়ে চোখে জল আসে তাঁর। তবে মনের জোর প্রখর। দুর্ঘটনার পরও থেমে থাকেনি সে।
কখনও নুন ভাত, আবার কখনও আলু সেদ্ধ ভাত খেয়েই দিন কাটে তাদের। আনন্দ উৎসব তো দূরের কথা, দিনে দু’বেলা দু-মুঠো অন্ন জোগাড় করতে রক্ত জল করতে হয় পূর্ণিমাকে। তবে এ ভাবে সত্যি আর কতদিন চলবে? নারী পুরুষের অধিকার বুঝে এই গৃহবধূ কি পারবে আজীবন সংসার চালাতে? সে প্রশ্ন এখনও উঁকি দেয় পূর্ণিমার মনে।
রঞ্জন চন্দ