বায়রন বিশ্বাসের তৃণমূল যোগের খবর সামনে আসার পরেই কড়া ভাষায় তাঁর সমালোচনা করেন অধীর৷ বলেন, ‘‘মীরজাফরের থেকেও মানুষের সঙ্গে বড় বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন বায়রন।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর দাবি, বায়রনকে ভয় দেখিয়েই দলে টেনেছে তৃণমূল৷ তৃণমূলকে টার্গেট করে তাঁর মন্তব্য, ‘‘বায়রন সম্পর্কে আমার আগেও কোনও খারাপ ধারণা ছিল না, এখনও নেই। কিন্তু, দিদি যে দল ভাঙানোর খেলায় সিদ্ধহস্ত, তা সারা ভারত জানে।’’
advertisement
এর পরেই তৃণমূলকে কার্যত হুঁশিয়ারি দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি৷ বলেন, ‘‘দিদি, এক মাঘে শীত যায় না!যে খেলা আপনি শুরু করেছেন, মিলিয়ে নেবেন, সেই খেলায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন আপনিই। আর কিছু দিনের মধ্যেই আপনার দল ভেঙে চৌচির হয়ে যাবে। চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করলাম। কংগ্রেসকর্মীরা দুঃখ পাবেন না।’’
অধীরের এহেন মন্তব্যের পাল্টা উত্তর দিতে ছাড়েননি অভিষেকও৷ ঘাটালে বায়রনকে পাশে বসিয়েই অভিষেক বলেন, ‘‘অধীর বাবু খেলাটা কী? আমার দল ভাঙার হলে আমি মুর্শিদাবাদে গিয়ে ভাঙতাম। কাল বোতাম টিপলে চার কংগ্রেস সাংসদ আসবে। শুধু বাংলার নয়, ভিন রাজ্য আছে। উনি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করুন৷ এক মাসে দেখিয়ে দেব৷ আমাকে দল অনুমোদন দিলে আমি বহরমপুরে দাঁড়িয়ে যাব৷ দল আমাকে দিক।’’
তৃণমূলে যোগ দিয়েই প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দেগেছেন সাগরদিঘির বিধায়ক বায়রন বিশ্বাস৷ অধীরের ‘বিশ্বাসঘাতক’ মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁর উত্তর, ‘‘আমি যে জয়ী হয়েছি, এর পিছনে কংগ্রেসের কোনও অবদান ছিল না৷ আমরা বরাবরই টিএমসি করে আসছি৷ টিএমসি থেকে আমি টিকিট নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম৷ টিকিট পেয়ে উঠিনি বলে আমায় টিকিট কংগ্রেসের থেকে নিতে হয়েছিল৷ কিন্তু, এতে কংগ্রেসের কোনও অবদান নেই৷ যদি অবদান থাকত, তাহলে ২০২১ সালে একটা সিটও কেন কংগ্রেস জিততে পারেনি৷ আমি যদি বিশ্বাসঘাতকতা করে থাকি, তাহলে আগামিদিনে জয়ী হতে পারব কি না, তা আগামিদিনে জনগণ বিচার করবে৷ আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আজ তৃণমূলে জয়েন করার পরে আমি আরও বিপুল ভোটে জয়ী হব৷’’
শুধু তাই নয়, অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে বায়রনের অভিযোগ, তিনি নাকি বিজেপির বিরোধিতায় তেমন কোনও মন্তব্যই করেন না৷ বায়রন এদিন বলেন, ‘‘কংগ্রেসে থেকে কাজ করা যাচ্ছিল না এটা বাস্তব পরিস্থিতি। তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়া আর মঞ্চ ছিল না। অধীর চৌধুরী বিজেপির বিরুদ্ধে কথা বলছে না। লড়াই করছে না৷ কোনও মন্তব্য করেন না৷’’
বায়রনের এহেন মন্তব্যের অবশ্য উত্তর দিয়েছেন অধীরও৷ তিনি বলেন, ‘‘দল তোমাকে বায়রন বিশ্বাস করেছে৷ তোমার বাজার দর তৈরি করেছে৷ না হলে তৃণমূল কংগ্রেস আজ তোমার কাছে যেত না৷ তাই একটা কথাই বলব ভাইটি আমার, কংগ্রেসকে অকারণে আক্রমণ না করে নিজের ইমানের দিকে তাকাও৷’’
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সাগরদিঘি আসনটিতে উপ নির্বাচন বয়। ২রা মার্চ প্রকাশিত হয় ফলাফল৷ দেখা যায়, সেখানে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয় বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস৷ এমনকি, বিজেপির কিছু ভোটও বায়রনের পক্ষে গিয়েছিল বলে গুঞ্জন ওঠে৷ সাগরদিঘির এই হারে রাজনৈতিক ভাবে বেশ খানিকটা অস্বস্তির মুখে পড়েছিল তৃণমূল৷ সেই ভোটের ফলাফল ঘোষণার মাত্র তিন মাসের মধ্যেই কংগ্রেসের টিকিটে ভোটে জেতা বায়রন চলে গেলেন তৃণমূলে৷