বহু পুরনো এক শিল্পধারা হল চাং। বিশেষ এই বাদ্যযন্ত্রের নামে শিল্পধারার নামকরণ। মুষ্টিমেয় কয়েকজন বৃদ্ধ গোটা মেদিনীপুর জেলায় এই শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। লোকায়ত সংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার মুখে। বিগত বেশ কয়েক বছর আগে এই শিল্পধারা অব্যাহত থাকলেও বর্তমানে তার লেশমাত্র নেই। হাতেগোনা কয়েকজনের বাড়িতে এমন বাদ্যযন্ত্র আছে। মূলত বয়স্ক কিছুজন এই শিল্পধারাকে বজায় রেখেছেন।
advertisement
গ্রামবাংলার অতি পরিচিত এমনই এক প্রাচীন লোকায়ত শিল্প চাং। অদ্ভুত নাম হলেও এককালে এই চাং ছিল মানুষের আয় উপার্জনের ভরসা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সবংয়ের লোধা সম্প্রদায়ের মানুষজন এই চাং শিল্পকে বহন করে চলেছেন। চাং এক বিশেষ প্রকার বাদ্যযন্ত্র, যা নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গান শোনাতেন লোধা মানুষজন। বেশ কয়েক পুরুষ পিছনে গেলে দেখা যাবে, আনন্দ বিনোদন এবং অর্থ উপার্জনের পথ ছিল এই শিল্প। তবে বর্তমানে কেউ সেই শিল্পের ধারাকে মনে রাখে না।
জানা গিয়েছে, চাং একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র। এই বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে গান গেয়ে বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠান কিংবা মনোরঞ্জনের আসর বসাতেন লোধারা। চাং, মাদল বাজিয়ে তাঁরা গান পরিবেশন করতেন। সেই গানে থাকত সামাজিক, অর্থনৈতিক নানা ছবি। তবে এখন সবং ব্লকের দশগ্রাম পঞ্চায়েতের খাজুরি এলাকার মাত্র তিনজন লোধা সম্প্রদায়ের মানুষ এই চাং শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। শম্ভু কোটাল, গুরুপদ কোটাল ও পূর্ণ কোটাল সম্পর্কে ভাই, তিনজনই চাং শিল্পী।
জানা যাচ্ছে, তাঁদের ব্যবহৃত চাং নামের বিশেষ এই বাদ্যযন্ত্র প্রায় ৩০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন। এদের পূর্বপুরুষেরা বংশ পরম্পরায় এই বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করতেন। বিভিন্ন পুজো অনুষ্ঠানে যেতেন। চাং বাজিয়ে গান গেয়ে তালে তালে নাচানাচিও করতেন। তবে বর্তমানে তাঁদের অবস্থা তথৈবচ। চাং নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভিক্ষে করাই এখন পেশা। যদিও সামান্য উপার্জনে চলে না সংসার।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
এই চাং বর্তমানে অবলুপ্তির পথে হলেও এখনও পরম্পরা আগলে রেখেছেন শম্ভু, গুরুপদ, পূর্ণরা। অক্ষর-জ্ঞানহীন সাধাসিধে এই মানুষরা পেশায় দিনমজুর ও ভিক্ষাজীবী। তবে এদের পরবর্তী প্রজন্ম আর মনে রাখবে না এই শিল্পকে। কালের উন্নতি হলেও আধুনিকতার আড়ালে হয়তো হারিয়ে যাবে লোকায়ত এই শিল্প।