TRENDING:

২ বছর আগে উদ্বোধন হওয়া ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যান এখন পরিত্যক্ত! পিকনিকের মরশুমে খাঁ খাঁ করছে ঐতিহাসিক পার্ক, সংস্কারের দাবি চন্দ্রকোনাবাসীর

Last Updated:

West Medinipur News: ঘটা করে উদ্বোধনের দু'বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ঐতিহাসিক ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যান। পিকনিক ও পর্যটকের মরশুমে আগাছায় ঢেকেছে উদ্যানটি। স্থানীয়দের অভিযোগ, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পার্কটির এমন পরিত্যক্ত দশা।

impactshort
ইমপ্যাক্ট শর্টসলেটেস্ট খবরের জন্য
advertisement
চন্দ্রকোনা, পশ্চিম মেদিনীপুর, মিজানুর রহমান: ঘটা করে উদ্বোধনের দু’বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ঐতিহাসিক ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যান। পিকনিক ও পর্যটকের মরশুমে আগাছায় ঢেকেছে উদ্যানটি। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে লক্ষাধিক টাকার জিনিস। অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকা ঐতিহাসিক ফাঁসির মঞ্চকে সংস্কার করে ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যান নাম দিয়ে চার বছর আগে ধুমধাম করে উদ্বোধনের পর নজর কেড়েছিল পর্যটকদের।
ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যান
ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যান
advertisement

রমরমিয়ে চলছিল চন্দ্রকোনা দুই নম্বর ব্লকের বসনছোড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যান। জনপ্রতি পাঁচ টাকা প্রবেশ মূল্য ধার্য ছিল। তা থেকে মাসিক মোটা টাকা আয়ও হচ্ছিল গ্রাম পঞ্চায়েতের। কিন্তু উদ্বোধনের দু’বছর পরই অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে ঐতিহাসিক এই স্থানটি। সামনেই পিকনিক ও পর্যটকের মরশুম। বিগত প্রায় দু’বছর ধরে কার্যত পর্যটক শূন্য ঐতিহাসিক ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যান। মূল গেটে ঝুলেছে তালা।

advertisement

আরও পড়ুনঃ বিদেশের ‘বাস্কিং’ সংস্কৃতি এবার শিলিগুড়ির রাস্তায়! গানের সুরে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা, ভাইরাল যুবকদ্বয়ের ভিডিও

ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যানের ভিতরে মনোরঞ্জনের জন্য রাখা দোলনা, ছোটদের খেলার সরঞ্জাম থেকে বসার জায়গা আগাছায় ঢাকা পড়েছে। পড়ে থেকে নষ্ট হয়েছে। সৌন্দার্য্যয়নের জন্য নানারকমের বাহারি ফুলগাছ থেকে নানান প্রজাতির গাছও নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ভিতরে থাকা সুবিশাল মিউজিক সিস্টেম সহযোগে জলের ফোয়ারা বিকল হয়ে পড়ে। উদ্যান চত্বর জুড়ে রংবেরঙের আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়েছিল তার লাইটের তার ছিঁড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সংস্কার হওয়া ফাঁসিডাঙ্গার ঐতিহাসিক ফাঁসির মঞ্চের পলেস্তারা খসে গিয়েছে।

advertisement

View More

আরও পড়ুনঃ পায়ের ছাপ, গাছে আঁচড় দেখা গেলেও ‘তাঁর’ উপস্থিতির প্রমাণ নেই, বাঘ গণনার আগে নেওরাভ্যালি জুড়ে বসছে আধুনিক ট্র্যাপ ক্যামেরা

অপরদিকে এই উদ্যানের ভিতরে স্থানীয় বা শরীরচর্চায় অভ্যস্ত এমন মানুষদের জন্য সকালে ব্যায়াম কসরত করার জন্য একাধিক জিমের যন্ত্রাংশ বসান হয়েছিল সেগুলিও মরচা ধরে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। নতুন করে সংস্কার হওয়া ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যানের এমন হাল দেখে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবকেই দুষছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

advertisement

ফাঁসিডাঙ্গা এলাকায় বসবাস কার্তিক দাস, নরেন ঘোষেরা জানান, ‘বাম আমল থেকে এই ঐতিহাসিক স্থানটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে ছিল। খোলা মাঠের মাঝে হওয়ায় অশালীন কাজকর্ম লেগে থাকত।যদিও বছর দুয়েক আগে ফাঁসির মঞ্চকে নতুন করে সংস্কার করে ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যান নাম দিয়ে চালু করা হলেও তা নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ফের একই অবস্থা।”

advertisement

আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন

চন্দ্রকোনার ইতিহাস চর্চার সঙ্গে যুক্ত বিশিষ্ট লেখক তারাপদ বিশুই বলেন, ‘চন্দ্রকোনার ইতিহাস ও ঐতিহাসিক স্থানগুলো নিয়ে বরাবরই প্রশাসন উদাসীন থেকেছে। যদিও ফাঁসিডাঙ্গার ফাঁসির মঞ্চ দীর্ঘ বছর অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকার পর নতুন করে চালু হলেও পুনরায় বেহাল অবস্থায় পড়ে রয়েছে।আমরা চাই চন্দ্রকোনার ঐতিহাসিক এই স্থানটি পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে দ্রুত মেরামত করে চালু করা হোক।’ আর কয়েকদিন পরই বড়দিন, ইংরেজি নববর্ষ রয়েছে। বিগত বছরগুলিতে এসময় পর্যটকের ঢল ছিল ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যানে। ২০২১ সালে আট অক্টোবর প্রায় ১ কোটি টাকা ব্যয়ে ফাঁসির মঞ্চকে নতুন করে সংস্কার করে নবনির্মিত ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যানের রূপ দেওয়া হয়েছিল।

২০২১ সালের আট অক্টোবর ঘটা করে তার উদ্বোধন করা হয়েছিল। উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জেলাশাসক ডঃ রেশমি কোমল, জেলাপরিষদের সভাধিপতি উত্তরা সিং হাজরা। এছাড়াও বিধায়ক থেকে ব্লক প্রশাসন, গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ একঝাঁক প্রশাসনিক ও জনিপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে এই ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যানের সূচনা হয়েছিল। ওইদিনই পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল উদ্যানটি। ব্লক প্রশাসন ও গ্রাম পঞ্চায়েতের যৌথ উদ্যোগে তৈরি ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যান রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখভালের জন্য স্বল্প বেতনে দু’জন অস্থায়ী কর্মীও রাখা হয়েছিল।

জানা গিয়েছে, তাদের বেতন না মেলায় তারাও আসা বন্ধ করে দেয়। তারপর ২০২৪ সাল থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। এই ফাঁসিডাঙ্গা নামের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। কথিত আছে, ইংরেজ শাসনে চন্দ্রকোনায় চুয়াড় বিদ্রোহ (কৃষক বিদ্রোহ) প্রবল আকার ধারণ করেছিল। ইংরেজদের বিরুদ্ধে এই বিদ্রোহ দমনের জন্য ১৮১৫ সালে দুই ইংরেজ অত্যাচারী শাসক চালর্স রিচার্ড ও মিঃ হেনরিকে পাঠান হয়েছিল। তৎকালীন চন্দ্রকোনায় চুয়াড় বিদ্রোহের নায়ক ছিলেন যুগল ও কিশোর। এদের নেতৃত্বে ইংরেজদের বিরুদ্ধে চাষিদের নীল চাষে বাধ্য করা ও দমন-পীড়ন বন্ধে বিদ্রোহ জারি ছিল চন্দ্রকোনায়।বিদ্রোহ দমনে চালর্স রিচার্ড ও মিঃ হেনরির নির্দেশে চন্দ্রকোনার বসনছোড়ায় একটি ফাঁকা মাঠে বিচারালয় স্থাপন করে,একটি বটগাছের নীচে তৈরি করা হয় ফাঁসির মঞ্চ।

সেরা ভিডিও

আরও দেখুন
সঙ্গীর অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ? ডিসেম্বরেই ঢুঁ মারুন সুতানের নির্জন জঙ্গলে, রইল ঠিকানা
আরও দেখুন

১৮১৫-১৬ সালে (মতান্তরে ১৮১২) এই মঞ্চেই বিদ্রোহের নায়ক যুগল ও কিশোর সহ সুবল,রাজেন,হাবল,ফাগু প্রমুখ ১৪ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।ঐতিহাসিক সেই স্থানটিই পরবর্তীকালে ফাঁসিডাঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে।বসনছোড়া গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান পরমা মন্ডল জানান,’শুরুতে ভাল পর্যটকের সমাগম ছিল।কিন্তু দুবছর ভাল মত চলেছে,তারপর এই অবস্থা।নিজেদের উদাসিনতার প্রসঙ্গ এড়িয়ে প্রধান জানান,খুব শীঘ্রই মিটিং ডেকে ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যান লিজে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে,নতুন করে সব ঠিক করে দেওয়া হবে।’ চন্দ্রকোনা দুই ব্লকের বিডিও উৎপল পাইক জানান,রক্ষণাবেক্ষণ দেখভালের অভাব ছিল,আমরা পঞ্চায়েতের সঙ্গে টেকআপ করে প্রয়োজনীয় সবকিছু মেরামত করে দেব আবার।আশাকরি আবার পর্যটক আসা শুরু করবে।’

বাংলা খবর/ খবর/দক্ষিণবঙ্গ/
২ বছর আগে উদ্বোধন হওয়া ফাঁসিডাঙ্গা উদ্যান এখন পরিত্যক্ত! পিকনিকের মরশুমে খাঁ খাঁ করছে ঐতিহাসিক পার্ক, সংস্কারের দাবি চন্দ্রকোনাবাসীর
Open in App
হোম
খবর
ফটো
লোকাল