পরিযায়ী শ্রমিকদের দাবি, তাঁদের অপরাধ তাঁরা কাজ করতে গিয়েছিলেন ভিন রাজ্যে, আর পরিচয়ে ‘বাঙালি’! এই ঘটনার জেরে গ্রামে নেমে আসে শোকের ছায়া। কেউ স্বামী, কেউ বা ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না প্রশাসনিক জটিলতায়। পুলিশের হাতে আটক থাকা ইব্রাহিম শেখের স্ত্রী তারিফুন্নেসা বিবি জানান, “খুবই চিন্তায় আছি। প্রশাসনের কাছে আবেদন সবাই যেন সুস্থ ভাবে বাড়ি ফিরতে পারে সবাই। বাংলা কথা বলার জন্য এরকম হবে কখনও ভাবিনি।”
advertisement
একই পরিস্থিতি নরিসা খাতুন বিবির। তাঁর ছেলে নুরশেদ শেখ ১৭ বছর ধরে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন ওড়িশায়। তিনিও পুলিশের হাতে আটক হন। এ প্রসঙ্গে নরিসা বিবি বলেন, আমার ছেলে তো চোর ডাকাত নয়, খেটে খায়। তাহলে তাকে এইভাবে অপমান করা হল কেন? এই শ্রমিকদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে ওড়িশায় রাজমিস্ত্রি, ভাঙাচোরা বিক্রি-সহ অন্যান্য কাজ করছেন। কারও বয়স ৫০ ছাড়িয়েছে, কেউ ২৫ বছর ধরে একই কাজ করছেন। কিন্তু তাঁদের জন্মের শংসাপত্র না থাকায় পুলিশ তাঁদের পরিচয় মানতে চায়নি। মৌগ্রাম অঞ্চলের প্রধান, কাটোয়া এবং কেতুগ্রামের বিধায়ক-সহ প্রশাসনকেও বিষয়টি জানান হয়।
পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক আয়েশা রানি ওড়িশার ঝারসুগুড়ার জেলাশাসকের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। ধৃত ১৬ জনের পরিচয় সমেত বিস্তারিত তথ্য পাঠান হয়। ঝারসুগুড়ার জেলা শাসক সেই সমস্ত তথ্য যাচাই করেন। এরপর ১১ জুলাই ধৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, বর্তমানে পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের চর সুজাপুর গ্রামের প্রায় ২৫০ জন পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন, যাঁরা ওড়িশা-সহ বিভিন্ন রাজ্যে কাজ করতে যান।
ওড়িশার ঝাড়সুগুদা, জগৎসিংহপুর, জাজপুর, কেন্দ্রপাড়া, কোরাপুট, ভদ্রক জেলার একাধিক জায়গায় অস্থায়ী ভাবে তৈরি হয়েছে ‘ডিটেনশন ক্যাম্প।’ জগৎসিংহপুর জেলার ১৫টি থানার মধ্যে ১২টিতে চলছে অস্থায়ী শিবির। কোথাও তিন দিন, আবার কোথাও তিন সপ্তাহ আটকে রাখা হয় বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের।
বন্দিদশায় কেমন ছিলেন? প্রায় দশ দিন বন্দি থাকার পর অনেকেই জানিয়েছেন, সকালের খাবারে চিঁড়ে আর গুড় দেওয়া হত। অর্ধেক চিঁড়েতে পোকা ভর্তি থাকত। দু’বেলা ডাল-ভাত আর আলু সেদ্ধ দেওয়া হত। তবে সে খাবারও সকলে পেতেন না। ডিটেনশন ক্যাম্পের মেঝেয় কাপড় বিছিয়ে শুতে হত। আতঙ্ক ও ভয়ে দু’চোখের পাতা এক হত না।
বনোয়ারীলাল চৌধুরী