নেহা খান জানিয়েছেন, আজ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে বিস্ফোরণের আওয়াজে তাঁদের ঘুম ভাঙ্গে। তারপরে বাজে সাইরেন। তখন তারা রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এবং সে সময় ইউক্রেন আর্মি এসে তাঁদের ঘরের মধ্যে থাকার উপদেশ দিয়ে যায়। এই মুহূর্তে ইউক্রেন জুড়ে রয়েছে ভয়ের পরিস্থিতি। সমস্ত রকম উড়ান বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। এই পরিস্থিতি দেখে তাঁরা দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। দূতাবাসের তরফ থেকে তাঁদের নিশ্চিন্তে থাকার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। দ্রুত তাঁদের উদ্ধার করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।
advertisement
আরও পড়ুন: 'যুদ্ধক্ষেত্র' ইউক্রেনে আটকে বাংলার একাধিক পড়ুয়া, উদ্বেগ-আশঙ্কায় ত্রস্ত পরিবার!
নেহা খান আরও জানিয়েছেন, তাঁদেরকে ইউক্রেন আর্মি বিপদ বুঝলে বাংকারে আশ্রয় নেওয়ার কথা বলেছে। সাইরেন শুনলে তাঁদের সেই বাংকারে লুকিয়ে থাকতে বলা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, গতকাল পর্যন্ত তাঁদের এমবিবিএস এর ক্লাস হয়েছে। অনলাইনে চলছিল পঠন-পাঠন। তাঁরা এই রকম পরিস্থিতি হতে পারে, তা আশঙ্কা করেননি। আজ হঠাৎ করেই পরিস্থিতি এক ধাক্কায় বদলে গিয়েছে। সূত্রের খবর, তাঁদের উদ্ধার করার জন্য পোল্যান্ড অথবা হাঙ্গেরিতে নিয়ে যাওয়া হতে পারে। তারপর সেখান থেকে ফিরিয়ে আনা হবে দেশে। শুধুমাত্র নেয়া খান একা নন। তাঁর সহপাঠীরা রয়েছেন এই তালিকায়। এমনই এক সহপাঠী মিঠাই লালন। তিনি হাওড়ার বাসিন্দা। মিঠাই লালন এবং নেহা খান এই মুহূর্তে একটি ফ্ল্যাটে রয়েছেন। মিঠাই লালন জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে এই রকম কোন ঘটনা হতে পারে বলে কোনরকম খবর ছিল না। তবে এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যথেষ্ট ঘোরালো। খুব এমারজেন্সি ছাড়া বাইরে বের হচ্ছেন না। হোস্টেল এবং ফ্ল্যাটের নীচের বাংকার আছে। সেখানেই বিপদ বদলে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁরা অপেক্ষা করছেন, কখন তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে।
আরও পড়ুন: শীত শেষ হতেই ফের ডেঙ্গুর থাবা, মশার কামড়ে মৃত্যু ৯ বছরের শিশুর!
জানা গিয়েছে, ঘরের বাইরে ইউক্রেন আর্মি সক্রিয় রয়েছে। পাশাপাশি সাবধান বাণী শোনার পর তাঁরা টাকা-পয়সা, খাবার, জল ইত্যাদি মজুদ করে রেখেছেন। তবে সবচেয়ে বড় চিন্তা হিসেবে তাঁদের ভোগাচ্ছে মোবাইল ফোন। কারণ বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা। সেক্ষেত্রে তাঁরা বড়সড় অসুবিধার সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করছেন। যদিও এই মুহুর্তের পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত হাতের বাইরে চলে যায়নি। তাঁদের পরিবার আত্মীয়রাও বারবার ফোন করে খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন নেহা এবং মিঠাই। নেহা এবং মিঠাই, দুজনেই এই মুহূর্তে এমবিবিএস থার্ড ইয়ারে পাঠরত। তাঁরা স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাকটিস করছিলেন। লাইসেন্স পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল খুব তাড়াতাড়ি। এই মুহূর্তে পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাওয়ায় ক্লাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ইউনিভার্সিটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্লাস চালু হবে। তবে তার জন্য কমপক্ষে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে বলে খবর।
অন্যদিকে, এই ব্যাপারে নেহা খানের বাবা ফিরোজ খান জানিয়েছেন, তাঁরা রীতিমতো চিন্তিত। কারণ ইউক্রেনে তাঁর মেয়ে এই অবস্থায় আটকে রয়েছেন। তাঁদের দূতাবাসের তরফ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। মেয়েকে ভারতে ফিরিয়ে আমার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে খবর এসেছে। কিন্তু তবুও তিনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না। তিনি জানিয়েছেন, বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। পাশাপাশি সব রকম ভাবেই মেয়েকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তিনি অনুরোধ করেছেন, ভারত সরকার এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকার যৌথভাবে যাতে ইউক্রেনে আটকে থাকা মেয়েকে উদ্ধার করে আনে যত দ্রুত সম্ভব। তবে ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতিতে মেয়ের আটকে থাকায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন তিনি। কিন্তু মেয়েকে সবসময় নিশ্চিন্ত থাকার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন।
নয়ন ঘোষ