লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, জীবনের বাজি রেখে সাত ভাইকে হিংস্র জন্তুর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন বোন। তারপর থেকেই গরম ঘিয়ে হাত ডুবিয়ে শত শত বছর ধরে এই পুজো করছেন আদিবাসী পুরুষেরা। বোনদেরকে পুজো করেন পুরুষেরা। এই উদাহরণ গোটা বিশ্বে বিরল। বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম পাকুরডিহা গ্রাম জঙ্গলে ঘেরা। কয়েক শতক আগে এই জঙ্গল ছিল আরও অনেক ভয়ঙ্কর এবং গভীর। তবে সাহসী আদিবাসীরা জঙ্গলের উপরেই নির্ভরশীল ছিল জীবন জীবিকার কারণে। জঙ্গলের দুর্গম অভিযানে গিয়ে শিকার করে অথবা ফল মূল নিয়ে আসতেন পুরুষেরা। তা ভাগ করে নেওয়া হত পরিবারের মধ্যে।
advertisement
এই রকমই ছিল সাত ভাই ও এক বোনের এক পরিবার। জঙ্গলে হিংস্র পশুর আঘাতে গুরুতর আহত সাত ভাইকে উদ্ধার করে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন সেই এক বোন। সেবা যত্নে ধীরে ধীরে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আনেন সাত ভাইকে। এর পর থেকে সেই বোন আদিবাসী সমাজে দেবী রূপে প্রতিষ্ঠা পায়। যে পুরুষেরা এক মাস ব্রত রাখেন তাদের সাহস, এবং ব্রতের সত্যতার পরীক্ষা হল গরম তেলে হাত ডুবিয়ে গুড় পিঠে তৈরি করা।
আরও পড়ুনঃ Knowledge Story: একক-দশক থেকে লক্ষ-নিযুত-কোটি পর্যন্ত আমরা জানি, কিন্তু কোটির পর কী কী রয়েছে জানেন?
পুরুষ এবং মহিলারা সমানে সমানে অংশগ্রহণ করেন এই পুজোয়। পুরুষেরা যখন এই পিঠে তৈরি করেন তখন গ্রামের মহিলারা ধামসা মাদলের তালে উৎসাহিত করতে থাকেন পুরুষ ব্রতিদের। একদিকে বিশ্বে নারী নির্যাতনের মত বড় সমস্যা মাথা চারা দিয়ে উঠেছে, তখন বাঁকুড়ার এই প্রত্যন্ত আদিবাসী গ্রামের বোনকে উদ্দেশ্য করে এই পুজো একটি আন্তর্জাতিক বার্তা রাখার যোগ্য দাবিদার।
নীলাঞ্জন ব্যানার্জী