স্বাভাবিক ভাবে সুবিশাল বাড়ি এখন জরাজীর্ণ ৷ পুজোর আয়োজনের জৌলুসও কমেছে, কিন্তু কালের গর্ভে তলিয়ে যায়নি ৷ অতীতে জমিদারের অধীনস্থ প্রজাদের বর্তমান প্রজন্মও বসু বাড়ির পুজোয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পুজোর আয়োজনে হাত লাগায় । কৃষ্ণ নবমী থেকে এই পুজোর শুভ সূচনা হয়। টানা ১৫ দিন ধরে এই বসু পরিবারে চলে দুর্গাপুজো। ৩০০ বছরে প্রাচীন ঐতিহাসিক এই পুজো।পুজোর বিশেষত্ব পঞ্চমীতে নয়, ১৫ দিন আগে থেকে দেবীর দুর্গার বোধন শুরু হওয়ার রীতি । পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে পুজো করেন পুরোহিতেরা, জানালেন বর্তমান প্রজন্মের সদস্য সায়ন্তন বসু ৷ বংশপরম্পরায় প্রতিমা তৈরি করে আসছে মৃৎশিল্পীরা । পুজোর সময় ডাক পড়ে ঢাকিদের ।
advertisement
এই পুজোয় বিশেষত্ব হল এই পুজোতে বসু পরিবারের কোনও মহিলা সদস্যরা কাজ করেন না। বসু পরিবারের সদস্য সায়ন্তন বসু জানান, লর্ড ক্লাইভের আমলে আমাদের পূর্বপুরুষ কৃষ্ণচন্দ্র বসু অবিভক্ত বাংলাদেশ থেকে তিনি এই দক্ষিণ বারাসতে এসে জমিদারি আধিপত্য স্থাপন করেন। স্বপ্নাদেশের পর এই পরিবারের শুরু হয় দুর্গাপুজো। তৈরি করা হয় সুবিশাল দালান বাড়ি এবং মন্দির। আমাদের এখনও পর্যন্ত বলিদান প্রথা রয়েছে। ১৫ দিন ধরে আমাদের এই দুর্গাপুজো চলে। বিশাল প্রাসাদ এখন জরাজীর্ণ অবস্থা আগের সেই মন্দির সেই মন্দির ও কালের নিয়মে ভেঙে গিয়েছে। নতুন করে মন্দির সংস্কারের কাজ আমরা শুরু করেছি। পুজোর দিনগুলি বসু পরিবারের যে সকল সদস্য কর্মসূত্রে ভিন রাজ্যে কিংবা দেশের বাইরে রয়েছেন তাঁরাও পূজার দিনগুলিতে বাড়িতে চলে আসে। সবকিছুই নতুন করে গড়ে তুলছেন তাঁরা ৷ কার্যত পুজোর দিনগুলি পরিবারের সদস্যদের সাথে এবং প্রজাদের সাথে আনন্দে কাটে আমাদের।’’
আরও পড়ুন : নবমীর ভোগে চিংড়ি মাছ! বিপ্লবী হেমচন্দ্র কানুনগোর মামাবাড়ির ঐতিহাসিক পুজোর বৈচিত্রে ভরা
এ যুগেও প্রাচীন ঐতিহ্যকে বজায় রাখার চেষ্টা করছে একুশ শতকের প্রজন্ম । বর্তমান প্রজন্মের সুমন্ত বসু বলেন, ‘‘ ‘‘আমাদের পূর্বপুরুষ কৃষ্ণচন্দ্র বসু এই পুজোর শুভ সূচনা করেছিল। তারপর থেকে পূর্বপুরুষের হাত ধরে বংশ পরম্পরায় এই পুজো চলে আসছে। বর্তমানে আমরা এই পুজোর দায়িত্বভার নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছি। অতীতের জৌলুসে কিছুটা ভাটা পড়লেও এখনও পর্যন্ত প্রাচীন রীতিনীতি বহাল রয়েছে এই পুজোতে। আর পাঁচটা পুজোর থেকে আমাদের এই পুজো একটু আলাদা, ১৫ দিন ধরে এই পুজো চলে। আমাদের পুজো প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র বসু ৷ একসময় এক মণ চালের নৈবেদ্য দেওয়া হত ৷ এখন ৪০-৫০ কিলো চালের নৈবেদ্য হয় ৷ নবমীর দিন বিকেলে পরিবার, বন্ধু, পাড়ার সবাইকে নৈবেদ্য আর পাঁঠার মাংস প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়, জানালেন বসু পরিবারের মেয়ে ৷ মা চণ্ডীর ঘটে ১হাজার বেলপাতা, ১ হাজার তুলসি পাতা দিতে হয় ৷ হোমের আগুনও ৫ দিন ধরে একভাবে জ্বলতে থাকে আলাদা একটি ঘরে ৷ অতীতে পালাগান ও কবিয়ালের আসরও বসত এই বাড়িতে । অতীতের সেই , জৌলুস আমরা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছি।