নিজের পরিবারের মুখে দু’বেলা অন্ন তুলে দিতে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন ঝর্না দেবী। স্বামী আশিষ শী একসময় দিনমজুরের কাজ করতেন। কিন্তু একটি দুর্ঘটনায় গুরুতরভাবে জখম হওয়ার পর তিনি আর শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে পারেন না। ফলে সংসারের আর্থিক ভার সম্পূর্ণটাই এসে পড়ে ঝর্না দেবীর উপর। বিয়ের মাত্র দুই বছর পরই বদলে যায় সংসারের সব চিত্র। একদিকে সামান্য উপার্জন, অন্যদিকে সংসারের ক্রমবর্ধমান দায়িত্ব— সব মিলিয়ে তখন শুরু হয় তাঁর সংগ্রামের পথচলা। কখনও সবজি বিক্রি, কখনও মাছের ব্যবসা, তো কখনও সাইকেলে ঘুরে ঘুরে ফেরি করে বাড়তি আয়ের চেষ্টা করেছেন তিনি। এক মুহূর্তও থেমে না থেকে প্রতিদিন যে ভাবে কাজে বেরিয়েছেন, তা তাঁর অদম্য মনোবলেরই প্রমাণ। বর্তমানে ঝর্না দেবী টোটো চালিয়েই জীবিকা নির্বাহ করছেন।
advertisement
ফার্স্ট হবে ক্লাসে! সন্তানকে সব সময়ে ‘এক নম্বরে’ দেখতে চাইলে শেখান কিছু অভ্যাস, জানুন কোনগুলো
বিহারে বিজেপির জয়ের নেপথ্যে রয়েছে বড় পরিকল্পনা! জুন মাস থেকে সবটা জেনে নিন
সকালে ছোট মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। টোটোর সামনের সিটেই বসে থাকে মেয়ে, আর তিনি যাত্রী তোলা-নামানো, স্কুল-অফিস যাতায়াত করা মানুষদের পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেন মন দিয়ে। দিঘা–রামনগর এলাকায় পর্যটকদের ভিড় বাড়লে যাত্রীও বাড়ে, তবে সারা দিন ঘুরে বেড়ান এবং কাজের চাপ সামলান তাঁর জন্য সহজ নয়। বড় মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে, তাই তাকে নিয়মিত স্কুলে পাঠাতে হয়। আর ছোট মেয়েকে নিয়েই তাঁর প্রতিদিনের পথচলা। সংসার, সন্তান, কাজ— একসঙ্গে সামলে ঝরনা দেবী আজ দাঁড়িয়ে আছেন নিজের শক্তিতে।
দিঘার সমুদ্রসৈকতে যখন প্রতিদিন পর্যটকদের ভিড়ে চারদিকে আনন্দ আর উল্লাস ছড়িয়ে থাকে, তখন ঠিক তার পাশেই ঝরনা দেবীর জীবন লড়াইয়ে ভরা। তবুও মুখে হাসি রেখেই তিনি এগিয়ে চলেন। জীবনের কঠিন পরিস্থিতিকে জয় করে তিনি প্রমাণ করেছেন— সাহস আর ইচ্ছাশক্তি থাকলে নারী নিজেই হয়ে উঠতে পারেন পরিবারের একমাত্র ভরসা।
শুধু তাঁর পরিবারই নয়, সমাজের অসংখ্য মানুষের কাছে ঝর্না শী আজ এক অনুপ্রেরণা। তাঁর জীবনসংগ্রাম দেখিয়ে দেয়, প্রতিকূলতা যতই আসুক, নিজের চেষ্টা আর সাহস থাকলে পথ খুঁজে নিতেই পারে মানুষ। ঝরনা দেবীর এই লড়াকু মানসিকতা সমাজে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।