তুবড়ি এক রকম আতশবাজি, নানান উৎসব বিশেষ করে কালীপুজোর রাতে পোড়ানো হয়। একটি গোলকাকৃতি ফাঁপা পোড়ামাটির খোলের মধ্যে স্তরে স্তরে বারুদ দিয়ে ঠাসা থাকে। তুবড়ি জ্বালালে তার থেকে আগুনের স্ফুলিঙ্গ ক্রমশ ওপরে উঠতে থাকে এবং চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। কালীপুজোর রাতে এ'রাজ্যের নানা প্রান্তে তুবড়ি প্রতিযোগিতাও হয়। দীর্ঘ ৬০ থেকে ৭০ বছর ধরে কালনার দু'নম্বর ব্লকের কুমোরপাড়ায় তুবড়ির খোল তৈরি হয়ে আসছে l কালনা বিধানসভার মধ্যে এবং পশ্চিমবঙ্গে একমাত্র তুবড়ির খোল তৈরি হয় এই কুমোর পাড়াতেই। বাপ ঠাকুরদার ব্যবসা কুমোর পাড়ার কুমোররা এখনও ধরে রেখেছেন। এক একটা তুবড়ির খোল চার থেকে ছয় ফুট পর্যন্ত উচ্চতারও তৈরি করা হয়ে থাকে। তবে এই তুবড়ির খোল তৈরির শিল্পীরা বলছেন, এখন আর সেভাবে লাভের মুখ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ একটা তুবড়ির খোল তৈরি করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। মাটি থেকে শুরু করে, বালি বিভিন্ন রকম উপকরণ চড়া দামে কিনতে হয়। তারপর তুবড়ির খোল গুলি তৈরি হয়ে যাবার পর রোদে শুকিয়ে তাকে শক্ত করার জন্য পোড়াতে হয়। সেই পোড়ানোর জ্বালানি খরচাও অনেক বেশি। তাই এই কুমোরপাড়ার তুবড়ি তৈরি করার ঐতিহ্যকে ধরে রাখা বড় কঠিন হয়ে পড়ছে।
advertisement
কালীপুজো আসার আগে-আগেই তুবড়ির খোল তৈরি করার অর্ডার চলে আসে এই কুমোরপাড়াতে। এখানকার তুবড়ির খোল পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও যায়। দিল্লি, মুম্বই, গুজরাট-সহ বিভিন্ন জায়গায় যায়। কারিগর-রা বলছেন, '' দিন দিন এ'রাজ্যে তুবড়ির চাহিদা কমছে। আজকের প্রজন্মের কিশোররা মোবাইল ফোনে আকৃষ্ট। তুবড়ি বা আতশবাজির ওপর তাঁদের আকর্ষণ এখন অনেক কম। তাছাড়া শব্দবাজি আটকাতে বাজি তৈরির নানান উপকরণ মজুত করলে পুলিশি ধরপাকরেরও ভয় থাকছে। আবার তুবড়ি তৈরিতে সেইসব উপকরণের প্রয়োজন হয়। ফলে সমস্যা বাড়ছে।''