শিক্ষক বলরাম দাসের বিশ্বাস, ‘শুধু পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা একজন মানুষকে পূর্ণতা দেয় না, প্রয়োজন মানসিক ও শারীরিক বিকাশও।’ তাই পড়াশোনার পাশাপাশি স্বাস্থ্যচর্চাকে গুরুত্ব দিয়ে শিশুদের মানসিক বিকাশের দায়িত্ব তিনি নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন।
advertisement
কর্মসূত্রে দিঘায় আসার পর থেকেই তিনি লক্ষ্য করেন, এলাকার বহু শিশু সকালে ও বিকেলে অবসর সময়ে অনর্থক সময় নষ্ট করছে। কারও হাতে মোবাইল, কেউ আবার অলসভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তখনই তার মনে হয়, এই শিশুদের যদি স্বাস্থ্যচর্চার অভ্যাস করানো যায়, তাহলে তাদের জীবন অনেক বেশি শৃঙ্খলাপূর্ণ ও সচেতন হবে। সেই ভাবনা থেকেই শুরু হয় তার উদ্যোগ।
শুরুটা ছিল খুবই ছোট। মাত্র সাতজন শিশুকে নিয়ে তিনি সমুদ্রের ধারে যোগাসনের প্রশিক্ষণ শুরু করেন। প্রতিদিন বিকেল হলেই সমুদ্রের পাড়ে বসে তিনি শেখাতেন নানা রকম যোগাভ্যাস ও ধ্যান। প্রথমে স্থানীয় মানুষজন অবাক হয়ে দেখলেও ধীরে ধীরে অনেকেই তার কাজের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তিনি অভিভাবকদের বোঝান, স্বাস্থ্যচর্চা কেবল দেহ নয়, মনকেও শক্তিশালী করে তোলে। নিয়মিত যোগাভ্যাস শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগী করে এবং জীবনের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে। তার এই অক্লান্ত প্রচেষ্টার ফলেই সাতজন শিশুর সংখ্যা আজ দাঁড়িয়েছে ২০০ জন।
এখন বিকেল হলেই দিঘার সমুদ্রতীর ভরে ওঠে শিশুদের কোলাহলে। সবাই ইউনিফর্ম পরে সারিবদ্ধভাবে যোগাভ্যাস করে। অনেক শিশু আর্থিকভাবে দুর্বল পরিবারের হলেও বলরাম দাস তাদের থেকে কোনও ফি নেন না। তিনি বিনামূল্যেই স্বাস্থ্যচর্চার প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছে। শুধু প্রশিক্ষণ নয়, তার ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন জেলা ও রাজ্যস্তরের যোগা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সাফল্য অর্জন করেছে। অনেকেই পুরস্কৃত হয়েছে, যা শিক্ষক বলরাম দাসের অনুপ্রেরণাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
শিক্ষক বলরাম দাসের কথায়, ‘আমার স্বপ্ন একটাই, প্রতিটি শিশুর জীবনে স্বাস্থ্যচর্চা অভ্যাসে পরিণত হোক। যোগার মাধ্যমে তারা মানসিকভাবে শক্ত ও সচেতন নাগরিক হয়ে উঠুক।’ আজ দিঘা সমুদ্রের তীর শুধু পর্যটনের কেন্দ্র নয়, শিশুদের স্বাস্থ্যচর্চার এক বিদ্যালয় হয়ে উঠেছে, যার পেছনে রয়েছেন দিঘার এক নিষ্ঠাবান শিক্ষক, বলরাম দাস। তার এই প্রচেষ্টা প্রমাণ করেছে, ইচ্ছা থাকলে সমাজে একা মানুষও বড় পরিবর্তন আনতে পারে।





