পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমানের প্রত্যন্ত গ্রাম সোনাপলাশী। ১৮২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর মাসে এই সোনাপলাশী গ্রামের এক সুবর্ণবণিক পরিবারে লালবিহারী দে’র জন্ম।তখনকার দিনে সামান্য ইংরেজি জ্ঞানও ইউরোপিয়দের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুযোগ এনে দিত। তাই রাধাকান্ত পুত্র লালবিহারীকে কলকাতায় আলেকজান্ডার ডাফ প্রতিষ্ঠিত জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশনে শিক্ষালাভের জন্য পাঠান। স্কুলটি ছিল অবৈতনিক। ডাফ সাহেব পেশায় ছিলেন একজন খ্রিস্টান ধর্মযাজক।
advertisement
“আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন”
পরবর্তীকালে ১৮৪৩ সালে তিনি রেভা. কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাধ্যমে খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত হন। ১৮৫১ সালে তিনি চার্চের ধর্মযাজকরূপে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৮৫৫ সালে তিনি কলকাতার Free Church Presbytery কর্তৃক ‘রেভারেন্ড’ পদে উন্নিত হন।বর্ধমানে কর্মরত থাকা অবস্থায় লালবিহারী সাহিত্যচর্চায় মনোনিবেশ করেন। ইংরাজি ভাষা ও সাহিত্যের অগাধ পাণ্ডিত্যে তিনি ইংরেজিতে দু’টি পুস্তক রচনা করেন। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে ‘গোবিন্দ সামন্ত’ (পরে নাম পরিবর্তিত হয় বেঙ্গল পেজেন্টস লাইফ তথা বাঙলার কৃষক জীবন) এবং ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে ‘ফোক-টেলস অব বেঙ্গল’ তথা বাংলার লোক-গল্প প্রকাশিত হয় এবং বই দুটি বহু প্রসংশিত হয়। দুটি গ্রন্থই দেশীয় এবং ইউরোপিয় শিক্ষিত সমাজের সপ্রশংস দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
বাঙালির নবজাগরণের অগ্রপথিক রাজা রামমোহন বাঙালির সমাজ ও ধর্মসংস্কার ও শিক্ষার যে আলোক বর্তিকা প্রজ্জ্বালন করেছিলেন তাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন ঊনিশ শতকের কয়েকজন কৃতি পুরুষ। তাদের মধ্যে অন্যতম রেভারেন্ড লালবিহারী দে। তিনি লেখক ও বহুখ্যাত ভারতীয় খ্রিস্টান পণ্ডিত। তবুও তাকে ভুলতে বসেছে বর্তমান প্রজন্ম। বর্ধমানে তাঁর স্মৃতি বলতে সোনাপলাশির রেভারেন্ড লালবিহারি দে স্মৃতি পাঠাগার এবং রেভারেন্ড লালবিহারি দে সরণি। যথাযথ গুরুত্ব পেলে তাঁর কর্মকাণ্ড বর্তমান প্রজন্মের কাছেও সমাদৃত হবে বলে মনে করেন গ্রামবাসীরা।
সোনপলাশী গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন,এই গ্রামেই জন্ম রেভারেন্ড লালবিহারী দের,ওনার বাড়িকেই বর্তমানে লাইব্রেরি করা হয়েছে এবং ওনার স্মৃতির উদ্দেশ্যে গ্রামের প্রধান সড়ক ওনার নামে নামকরণ করা হয়েছে। শিক্ষা শেষ করে যখন তিনি আবার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসেব তখন গ্রামের মানুষ তাকে মেনে নেইনি,যেহেতু তিনি অন্য ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন তাই গ্রামের মানুষ তাকে গ্রাম থেকে বের করে দেন। আর কোন দিন তিনি এই গ্রামে আসেননি।তিনি আরও জানান হুগলি মহসীন কলেজের ইংরেজির প্রফেসর ছিলেন লাল বিহারী দে।
১৮৯২ সালের ২৮ অক্টোবর ৬৭ বছর বয়সে কলকাতায় প্রয়াত হন লালবিহারী দে।বর্ধমানের এই প্রত্যন্ত গ্রামের কৃতি সন্তানের কর্মকাণ্ড ও অবদান বর্তমানে ভুলতে বসেছে প্রায় সকলেই। তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের জীবন ও সাহিত্যকর্মকে যথাযথভাবে তুলে ধরলে, তা নিশ্চিতভাবে বর্তমান প্রজন্মের কাছেও সমাদৃত হবে এবং নতুন পথের দিশা দেবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
সায়নী সরকার





