এদিকে, কারা কী ভাবে এতগুলি অ্যাকাউন্ট খুলল, তা জানতে হস্তরেখাবিদের সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবছে সিবিআই। এদিন ফের তলব করা হয়েছিল সিউড়ি সমবায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকেও।
গত বৃহস্পতিবার সিউড়ি কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে হানা দিয়ে ১৭৭টি বেনামি অ্যাকাউন্টের হদিস পায় সিবিআই। এখানেই শেষ নয়, জানা যায়, এই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি দিয়ে কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। গোয়েন্দাদের অনুমান, কালো থেকে সাদা করতেই এই অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয়েছিল। এমনকি, গোটা বিষয়টির সঙ্গে অনুব্রত মণ্ডলের যোগসূত্র রয়েছে বলেও মনে করছেন তাঁরা।
advertisement
আরও পড়ুন: লক্ষ্য আসলে লোকসভা, ফেব্রুয়ারিতেই বড় পরিকল্পনা বিজেপির! বঙ্গে রথযাত্রা
সিবিআই সূত্রের খবর, ১৬০টি অ্যাকাউন্টের মধ্যে শুধু ৫৪টি অ্যাকাউন্টেই ৪ কোটি টাকার লেনদেনের হদিস মিলেছে। বেশিরভাগ অ্যাকাউন্ট হোল্ডারই পেশায় চাষি বলে জানা গিয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, গরিব মানুষের কাছে অল্প দামে নগদে ধান কিনে চালকলে চাল করে খাদ্য দফতরের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিক্রিমূল্য হিসাবে পাওয়া চেকের টাকা ঢুকেছে এই সমস্ত বেনামি অ্যাকাউন্টে।
গত বৃহস্পতিবারই এ নিয়ে সিবিআই কর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছিলেন সিউড়়ি সমবায় ব্যাঙ্কের ম্যানেজার অভিজিৎ সামন্ত। শুক্রবার ফের তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজাম প্যালেসে তলব করে সিবিআই। তাঁর অবশ্য দাবি, সমস্ত নিয়ম মেনেই খোলা হয়েছিল ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি।
আরও পড়ুন: ক্যামেরা দেখে অবশেষে মিলল হদিশ! বন্দে ভারতে পাথর ছোড়ায় ধৃত ৩
এদিকে, গোয়েন্দারা মনে করছেন, কোনও একজন ব্যক্তিই ওই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি খোলার সময় সই করেছিলেন। সেই ব্যক্তির হদিস পেতে হস্তবিশারদের সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবছে সিবিআই। পাশাপাশি, নথি যাচাই করতে ব্যাঙ্কিং সেক্টরের বিশেষজ্ঞদেরও মতামত নেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
এদিকে, ১৭৭টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মধ্যে কয়েকটি অ্যাকাউন্টের মালিকের খোঁজ শুরু করতেই ঝুলি থেকে বেড়িয়ে পড়েছে বিড়াল। সিউড়ি সমবায় ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট রয়েছে নিকটবর্তী হরিপুর গ্রামের সুন্দরী বসাকির। সব শুনে তো আকাশ থেকে পড়েন সুন্দরী।
ব্যাঙ্কের নথি দেখে জানান, সই করা তো দূর অস্ত, তিনি লেখাপড়াই জানেন না। কী ভাবে তাঁর নামে কোনও ব্যাঙ্কে কেউ অ্যাকাউন্ট খুলল, তার বিন্দুবিসর্গ ধারণা তাঁর নেই বলে জানিয়েছেন সুন্দরী। অথচ সিউড়ির সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে তাঁর নামে খোলা অ্য়াকাউন্টের মাধ্যমে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা লেনদেন হয়েছে।
অন্যদিকে, আরেক অ্যাকাউন্ট হোল্ডার, মমতা মৃধা বলেন, "আমি কিছুই জানি না। সইটা আমার নয়। কী করে জানব কে এটা করেছে। আমি কিছুই জানি না।" মমতার দাবি, অ্যাকাউন্টের নথিতে যে সই রয়েছে, তা তাঁর নয়।
মৃত ব্যক্তির নামেও হদিস মিলেছে সিউড়ির সমবায় ব্যাঙ্কে। পিয়াসাড়ার বাসিন্দা ভগীরথ ঘোষের দাবি, তাঁর ভাই গোপাল ঘোষ গত ৩ বছর আগেই মারা গেছেন। সেই মৃত গোপাল ঘোষের নামেও অ্যাকউন্ট রয়েছে সিউড়ির সমবায় ব্যাঙ্কে।
সিউড়ি সমবায় ব্যাঙ্কে এত ভুরি ভুরি বেনামি অ্যাকাউন্টের পাওয়ার ঘটনায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের উপরেই দায় চাপিয়েছেন রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়। এদিন তাঁকে এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, "এগুলো রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নিয়ন্ত্রণাধীন। ওঁরাই সব দেখে, নথি যাচাই করে। আমরা শুধু লাইসেন্স দিই।"