জীবনে সন্তান না থাকলেও, আজ তার আশেপাশে ছেয়ে আছে শত শত সন্তানের মতো স্নেহভাজন ছাত্রছাত্রী। বিয়ের পর নিঃসন্তান জীবনযাপন করলেও স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ভালবাসায় আজ তিনি অভিভাবকের চেয়েও বেশি কিছু। নপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সুবল বাবুর শিক্ষকজীবনের সূচনা ১৯৬১ সালে কাশীপুরের রঙ্গিলাডি গোপালচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। টানা ৪০ বছর শিক্ষকতা করে ২০০১ সালে অবসর গ্রহণ করেন তিনি। অবসরের পরে দু’বছর বাড়িতে কাটালেও, মনের ভেতর যেন শূন্যতা ভর করে তার। ছাত্রছাত্রীদের টান, স্কুলের ঘ্রাণ, সেই প্রতিদিনের পড়ানোর অভ্যাস, সব কিছু যেন তাকে বারবার টানতে লাগল স্কুলের দিকে।
advertisement
আরও পড়ুন: টাকার অভাবে কেনা হয়নি হারমোনিয়াম, গান শেখার ইচ্ছে ভুলে নাচ! তারপরেই যুবতীর জীবনে নয়া মোড়
তাই আবার ২০০৩ সালে পৌঁছে যান নিজের গ্রামের পুরুলিয়ার নপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পূর্ণ সহযোগিতায় সেখানে শুরু করেন শিক্ষকতার দ্বিতীয় ইনিংস। তবে এবার কোনও পারিশ্রমিক ছাড়া, নিছক ভালবাসা আর দায়িত্ববোধ থেকে। সেই থেকেই শুরু। আজ অবধি চলছে সেই যাত্রা, দু’বছরের বেশি সময় ধরে তিনি নিরলসভাবে পাঠদান করে চলেছেন ছাত্র-ছাত্রীদের।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
৮৫ বছর বয়সেও সুবলবাবু আজ যেন সময়কে হার মানিয়েছেন। ক্লান্তি বা বয়স তার পথে কোনওদিনই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়নি। ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীষ্ম উপেক্ষা করে প্রতিদিন ঠিক সময়ে পৌঁছে যান স্কুলে। নিজে সিঁড়ি বেয়ে উঠেন দোতলার ক্লাসরুমে, আর অনায়াসে দাঁড়িয়ে পড়ান ঘন্টার পর ঘন্টা। এই মানুষটির জীবনের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিক্ষা শুধু পেশা নয়, এটি এক সেবার ব্রত। আর ভালবাসা দিয়ে যদি কাজ করা যায়, তবে বয়স কখনোই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না।