কৃষ্ণ নবমীর সকালেই প্রথম দেবীর বোধন হয়। বাড়ির প্রতিষ্ঠিত পুকুর থেকে মাটি তুলে এনে মায়ের গায়ে ছোঁয়ানো হয়— তখনই যেন চারদিক ভরে ওঠে এক বিশেষ আবেগে। তমলুকের কেলোমালের ঘোষবাড়িতে শরৎকাল মানেই অন্যরকম আবহ। প্রায় ৪৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই বাড়ির আঙিনায় মায়ের আগমন ঘটে আসছে। ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় আচার। ঘোষবাড়ির পূর্বসূরি করুণাময় ঘোষ এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। ঘোষবাড়ির দুর্গাপুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এখানে পুজো হয় বৃহৎ নন্দীকেশ্বর পদ্ধতিতে। ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে মাত্র পাঁচটি বনেদি বাড়িতে এই পদ্ধতিতে দুর্গাপুজো হয়। বাংলাদেশের যশোরের বনেদি বাড়ি, পশ্চিমবঙ্গের শোভাবাজার রাজবাড়ি, কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি, সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবারের পুজোর পাশাপাশি ঘোষবাড়িতে এই পদ্ধতিতে দুর্গাপুজো হয়।
advertisement
ঘোষবাড়ির বয়স্ক সদস্য কমলকান্তি ঘোষ বলেন, ‘‘আগের পুজোর তুলনায় বলি ও নৈবেদ্যের চালের পরিমাণ কমেছে। কিন্তু দুর্গাপুজোর বাকি আচার সমস্ত কিছুই আগের মতো এখনও চলছে। আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি, এই পুজো কেবল আমাদের বাড়ির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ধীরে ধীরে তা পুরো গ্রামের পুজো হয়ে দাঁড়িয়েছে। উৎসবের আনন্দ তো আর একা ভোগ করার নয়। ঘোষ বাড়ির দুর্গাদালানে প্রতিমা তৈরি করেন মৃৎশিল্পীরা। তবে প্রতিমার সাজসজ্জা নিজের হাতে করে থাকেন এই ঘোষ বাড়ির গৃহবধূ ও মেয়েরা।’’
কৃষ্ণ নবমী তিথি থেকে প্রতিদিন চলে লক্ষাধিক বার দুর্গানাম জপ, মধুসূদন নামজপ আর চণ্ডীপাঠ। ঘোষ বাড়ির দুর্গাপুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, সপ্তমী অষ্টমী ও নবমী এবং সন্ধি পুজোর সময় কুমারী পুজো হয়। চারবার চারজন কুমারী কন্যাকে দেবীর রূপে পুজো করা হয়। কালের নিয়মে জৌলুস কমেছে, কমেছে আড়ম্বর। কিন্তু প্রাণের আবেগ আজও বর্তমান ঘোষবাড়ির দুর্গাপুজোয়।