ঘড়ির কাঁটায় ৩টে বেজে ৩৫ মিনিট। শুভেন্দু সভাস্থলে পৌঁছতেই হৈ হৈ করে উঠল সভায় আগত কর্মী সমর্থকরা। পুষ্প বৃষ্টির মাধ্যমে শুভেন্দু অধিকারীকে স্বাগত জানাতে থিক থিক করছে ভিড়। মহিলাদের শঙ্খধ্বনিতে প্রিয় নেতাকে বরণ পর্ব মিটতেই মঞ্চে উঠেই মঞ্চের সামনে, বাঁয়ে ও ডাঁয়ে চেয়ারে বসে এবং দাঁড়িয়ে থাকা জনতার উদ্দেশ্যে নতজানু হয়ে হাত জোড় করে প্রণাম নিবেদন করে সম্বোধন করলেন ভূমিপুত্র শুভেন্দু অধিকারী। পাল্টা কর্মী সমর্থকদের মুখে তখন লাগাতার স্লোগান,' শুভেন্দু অধিকারী জিন্দাবাদ'।
advertisement
অন্যান্য বিজেপি নেতাদের বক্তব্যের পর শেষ বক্তা হিসেবে মাইক্রোফোনের সামনে এসে শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে শোনা গেল, ‘‘অনেক বাধা, বিপত্তি এবং প্রতিকূলতার মধ্যেও আপনারা এই সমাবেশকে জনসমুদ্রে পরিণত করেছেন। আমি জানি আপনাদের মনের ভেতরটা সেই ৪২ এর আন্দোলনের মতো আপনাদের স্ফুলিঙ্গগুলো জ্বলছে। আপনারা চাইছেন সুদ আসল ও দন্ডসুদ সমেত যাতে তাড়াতাড়ি সমস্ত হিসাবটা চুকিয়ে ফেলতে। ভরসা রাখুন।’’
বলা বাহুল্য, মঞ্চে উঠেই আগে জনতার উদ্দেশ্যে করজোড়ে প্রণাম নিবেদনের পর মঞ্চে হাজির প্রবীণ রাজনৈতিক কার্যকর্তাদের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করার পর তাঁদের সম্মানিত করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, অতীত ভুলে গেলে ভবিষ্যৎ ভাল হয় না। এরপর একে একে পদ্ম শিবিরের নেতারা বক্তব্য রাখার পর সর্বশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য শুরু করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর নিশানায় একদিকে যেমন নিজের পুরনো দলের নেত্রী মমতা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন। পাশাপাশি শাসকদলের দুর্নীতি-সহ একাধিক ইস্যুতে সুর চড়াতে এদিন দেখা যায় শুভেন্দুকে। তবে এদিনের সভার 'ব্যতিক্রমী' ভিড় যে উজ্জীবিত করেছে গেরুয়া শিবির তথা শুভেন্দু অধিকারীকে তা প্রত্যেকের শরীরি ভাষাতেই স্পষ্ট।
আরও পড়ুন-কার কী দরকার? ২০২৩ আইপিএল নিলামে ১০ দলকে এই কাজগুলো করতেই হবে
চলতি মাসের ৩ ডিসেম্বর শুভেন্দু অধিকারীর বাড়ির অদূরে সভা করে শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপি তথা অধিকারী পরিবারকে নিশানা করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, জোড়া ফুল শিবিরের অন্যতম শীর্ষ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই বক্তব্যের জবাব দিতেই পাল্টা শুভেন্দু অধিকারীকে মুখ করে বুধবার কাঁথি সাংগঠনিক জেলার ডাকে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে পদ্ম ফুল শিবির। স্বাভাবিকভাবেই শুভেন্দু অধিকারীর হোম গ্রাউন্ডের সভায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার থেকে বেশি ভিড় করাই ছিল বিজেপির কাছে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। আর সেই চ্যালেঞ্জে সফল তারা। অভিষেকের সভার চেয়ে ১০ গুণ বেশি লোক হয়েছিল এদিন শুভেন্দুর সভায়। দাবি গেরুয়া শিবিরের। এদিকে সভার ঠিক আগের দিন দিল্লি থেকে ফিরে কলকাতা বিমানবন্দরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, ‘‘ওরা কাঁথি-সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি জেলা থেকে লোক নিয়ে এসেছিল। আমাদের সভায় শুধুমাত্র কাঁথি লোকসভা কেন্দ্র থেকে যে মানুষ আসবে তাতেই দেখবেন কী হয়।’’ আর বুধবার কাঁথির সভামঞ্চ থেকে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্য পেশ করার সময় শুভেন্দু অধিকারী জোড় গলায় দাবি করেন ‘‘আজ কাঁথি বিজেপি শুধুমাত্র লেজটা দেখাল। মাথাটা দেখায়নি। মাথাটা দেখানো বাকি আছে। ঠিক সময় মত দেখাবো।’’
নিউজ এইট্টিন বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘‘শাসক দলের তরফে সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা থেকে সভাতে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে আমাদের কর্মী সমর্থকদের। ৩০ টিরও বেশি গাড়ি আটকে দেওয়া হয়েছে। ভয় দেখানো হয়েছে। তা সত্ত্বেও আমাদের প্রতিবাদ সভাকে সমর্থন জানাতে এদিন ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ রেল স্টেশন সংলগ্ন ময়দানে এসেছিলেন।’’ নিরপেক্ষভাবে যদি ভোট হয় তাহলে সাম্প্রতিক এক ভোটের ফলাফলের উল্লেখ করে শুভেন্দু দাবি করেন, বিজেপি থাকবে এক নম্বরে। দ্বিতীয় স্থানে থাকবে বামেরা। তৃণমূলের কোনও অস্তিত্বই থাকবে না।