এদের মধ্যে অনুপ হালদারের বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরে, বিমল সাহুর বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা থানা এলাকায়, বিপ্লব কান্তি সিটের বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরের সত্যবান পল্লীতে এবং গ্রুপ ডি শিক্ষা কর্মী উত্তম জানার বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের মোহনপুরে। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পরেই তারা স্কুলে আসার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু স্কুলে আর আসা হল না।
advertisement
“আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন”
আর এই ঘটনার পর থেকেই অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে স্কুলে। একদা মাওবাদী অধ্যুষিত বিরিহান্ডি এলাকার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার একমাত্র ভরসা সরকারি স্কুল। অধিকাংশ ছাত্র-ছাত্রীর গৃহ শিক্ষক নেই। বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পর বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণীর ৩১ জন পড়ুয়া এসে তাদের ক্লাসে বসে। রুটিন অনুযায়ী প্রথম ক্লাসটি ছিল চাকরি হারা শিক্ষা বিজ্ঞানের শিক্ষক বিমল সাহুর। পরের ক্লাসটি ছিল ইতিহাসের শিক্ষক অনুপ হালদারের। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর কোনও শিক্ষকের দেখা না পেয়ে ব্যাগ থেকে বই বের করে রুটিন অনুযায়ী পড়াশোনা শুরু করে দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়ারা। এরপর কলা বিভাগের বাংলা,ইংরেজি, ভূগোল,ইতিহাস,শিক্ষাবিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও শরীরবিজ্ঞান এর ছয়টি বিষয়ে পঠন পাঠন হয়।
ইতিহাস এবং শিক্ষা বিজ্ঞানের একজন করেই শিক্ষক ছিল বিকল্প কোনও শিক্ষক নেই। দুজন শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় অন্য কোনও শিক্ষককে দিয়ে তাদের ক্লাস করানো যায়নি। এইভাবে চলতে থাকলে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে স্কুলের বাকি শিক্ষক সহ বাড়ির লোকজন। স্কুলে দুজন পার্শ্ব শিক্ষক সহ মোট ১৫ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা, গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি এবং কম্পিউটারের শিক্ষক একজন করে ছিল। চাকরি-বাতিলের পরে শিক্ষকের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১২ জন এবং শিক্ষা কর্মীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২ জন। স্কুলে ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৩৮০ জন এর মধ্যে ছাত্র ১৭৮ এবং ছাত্রী ২০২ জন । স্কুলের গেট খোলা ও বন্ধ করা, মিড ডে মিলের রান্নার জন্য পাম্প চালানো,স্কুলের জানলা দরজা বন্ধ করা এবং পিরিয়ড অনুযায়ী ঘন্টা বাজানোর দায়িত্ব ছিল গ্রুপ ডি শিক্ষা কর্মী উত্তম জানার।
তার চাকরি বাতিল হওয়ায় সমস্ত দায়িত্ব পড়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের উপর। স্কুল ছুটির পর স্কুলের বাকি শিক্ষক শিক্ষিকারা একসঙ্গেহয়ে স্কুলের দরজা-জানলা বন্ধ করলেও পিরিয়ড অনুযায়ী ঘন্টা পিটতে হচ্ছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে। শুধু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নয় মাঝেমধ্যে অন্যান্য শিক্ষকরাও ঘন্টা বাজানো তে সহযোগিতা করছে। এই চিত্রটা কেবলমাত্র বিরিহান্ডি বিদ্যাপীঠ হাইস্কুলের নয় জঙ্গলমহল এর প্রায় প্রতিটি স্কুলে কমবেশি একই ধরনের চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বুদ্ধদেব বেরা