জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলি থানার পাঁচুয়াখালি পঞ্চায়েতের কাঁকসা গ্রাম। । গ্রামেরই বাসিন্দা সীতানাথ মন্ডল।অন্যান্য ন্যায় এদিন রাতে খাওয়া-দাওয়া সেরে বিছানায় ঘুমাচ্ছিলেন।রাত তখন প্রায় বারোটা। বাইরে প্রবল বেগে বজ্র-বিদ্যুৎ সহ ঝড়বৃষ্টি চলছিল।বিছানার মধ্যে সেই সময় আচমকা একটি কালাচ সাপ কামড় দেয়। বুঝতে পারেন কিছু একটা কামড় দিয়েছে। বিছানা থেকে ধড়ফড় করে জেগে ওঠেন। চিৎকার শুরু করেন। পরিবারের অন্যান্যরা ঘুম থেকে জেগে ওঠে।
advertisement
তড়িঘড়ি আলো জ্বালতেই দেখতে পায় একটি কালাচ সাপ দ্রুত গতিতে পালিয়ে যাচ্ছে। সীতানাথ মন্ডলের ছেলে সঞ্জিত মন্ডল সাপটি মারার জন্য উদ্যত হলেও হাতের কাছে কিছুই ছিল না। অগত্যা মোবাইল ফোনে সাপের ছবি তুলে ফেলেন তড়িঘড়ি। সাপ অবশ্য দ্রুত অন্যত্র পালিয়ে প্রাণে বাঁচে।গভীর রাত,প্রৌঢ় কে সাপ কামড় দিয়েছে। বাইরে চলছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ পরিবারের লোকজন কী করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না।এদিকে সময় ও অতিবাহিত হতে থাকে দ্রুত গতিতে।
সাপে কামড়ানো প্রৌঢ়র চিকিৎসা করলেন ৩ চিকিৎসক
অন্যদিকে ধীরেধীরে ঝিমিয়ে পড়তে থাকেন প্রৌঢ়। অগত্যা বিপদ আসন্ন বুঝতে পেরে পরিবারের সদস্যরা প্রৌঢ় কে স্থানীয় কুলতলি-জামতলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের চিকিৎসকরা তড়িঘড়ি ১০ ভায়াল এভিএস দিয়ে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন প্রৌঢ়কে।পরিবারের লোকজন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসে। ততক্ষণে ওই প্রৌঢ়ের শারীরিক অবস্থার দ্রত অবনতি হতে থাকে। ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছাতেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চিকিৎসা শুরু করেন ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্প বিশেষঞ্জ চিকিৎসক ডাঃ সমরেন্দ্র নাথ রায়,ডাঃ কার্তিক নাসিপুরি,ড মধুরিমা মন্ডল সহ অন্যান্যরা।
তড়িঘড়ি ৩০ ভায়াল এভিএস দেওয়া হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে দেখে দ্রুততার সাথে সিসিইউতে স্থানান্তরিত করেন চিকিৎসকরা। বর্তমানে ওই প্রৌঢ় সুস্থতার পথে। ঘটনা প্রসঙ্গে ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের সর্প বিশেষঞ্জ চিকিৎসক জানিয়েছেন, ‘অত্যন্ত দুর্ভাগ্য জনক ঘটনা। একদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আর অপর দিকে কালাচ এর কামড়। পরিবারের লোকজন হয়তো বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন।প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কী করবেন ভেবে উঠতে পারছিলেন না। সময় অতিবাহিত হয়। ফলে ঝুঁকি বেড়ে গিয়েছিল।তবে মনে রাখতে হবে প্রবল বর্ষনে বিষধর সাপের উপদ্রব আরো বাড়বে। সকলকে সচেতন হতে হবে’।
এর পাশাপাশি আরও বলেন কালাচ সাপের কামড়ে রোগী অত্যধিক সময় অতিবাহিত করে হাসপাতালে এসেছিলেন। ঝুঁকি ছিল। তবে বর্তমানে সুস্থতার পথে।সাধারণ মানুষকে মনে রাখতে হবে সাপ কামড় দিলে ক্ষত স্থানের উপরে কিংবা নীচে বাঁধন দেওয়ার প্রয়োজন নেই। সেক্ষেত্রে আরও বেশি বিপদ হতে পারে। সাপ কামড় দিলে,কোন কিছুই না ভেবে যত দ্রুত সম্ভব নিকটবর্তী সরকারী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া জরুরি। সেক্ষেত্রে বিপদের ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে। কালাচ সাপ কামড় দেওয়ার পর অনেক সময় নষ্ট করেছিলেন প্রৌঢ় পরিবারের লোকজন।আর হয়তো সামান্য সময় অতিবাহিত হলে বিপদ ঘটে যেতে পারতো।
বর্ষাকাল,চারিদিকে জলমগ্ন। সাপেদের বাসস্থান বিপন্ন।সাপের কামড় এড়াতে সাধারণ মানুষকে সচেতন এবং সজাগ থাকতে হবে। সাক্ষাৎ মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফেরা সীতানাথ মন্ডলের পরিবার ক্যানিং মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকদের ভূমিকায় খুশি। তিন তিনজন চিকিৎসক যেভাবে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন,তাতে করে কোন প্রশংসাই যথেষ্ট নয়।চিকিৎসকদের অসংখ্য ধন্যবাদ।
Suman Saha