মারতে উদ্ধত মানুষের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে সদা প্রহরীর কাজ করে চলেছে বনকর্মী ও জেলার বিভিন্ন পরিবেশ কর্মী সংগঠনের সদস্যরা। কিন্তু সেই কাজ অনেকটাই কঠিন হয়ে পরল হঠাৎ এক সাপ উদ্ধারকারীর দুঃখজনক মৃত্যুর জেরে। কয়েকমাস আগে পাঁচলা ব্লকের জালালসী গ্রামে একটি কেউটে সব উদ্ধার করতে গিয়ে কামড় খায় উদ্ধারকারী। তারপর মর্মান্তিক পরিণতি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সর্প উদ্ধারকারী ইন্দ্রজিৎ আদক।
advertisement
এতে আতঙ্কিত জেলার বিভিন্ন সংগঠনের সাপ ও বন্যপ্রাণী উদ্ধারকারী সদস্য। নিঃস্বার্থ ভাবে পরিবেশ ও বন্যপ্রাণীকে ভালোবেসে পরিবেশ রক্ষার তাগিদে কাজ করা। অধিকাংশ সংগঠনের সদস্য উপযুক্ত সরঞ্জাম ছাড়াই বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ও সাপ উদ্ধার করে চলেছে। এমন দুর্ঘটনায় তাদের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। জীবনের ঝুঁকি থাকলেও এই আতঙ্ক বেশিদিন থামিয়ে রাখতে পারেনি চিত্রক শুভঙ্কর শুভজিৎ সুমন্ত ও রঘুনাথ দের মত পর জেলার পরিবেশ কর্মীরা।
আরও পড়ুন – Ind vs Pak: অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ স্মিথ ড্রেসিংরুমে ও কী করছেন, হাত কোথায়, ভাইরাল হয়ে গেলেন তিনি
ধীরে ধীরে আবারও তারা পুরনো ছন্দে উদ্ধারে নেমেছে। বিভিন্ন প্রান্তে কোথাও সাপ দেখা মিললেই খবর আসে। তারপর সাত-পাঁচ না ভেবেই উদ্ধারে বেরিয়ে পড়ছে। কিন্তু সুরক্ষা নিয়ে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন চিহ্ন জাগে ওদের। উদ্ধার করার সরঞ্জামের দাম অনেকটা বেশি। কোনও রকমে নিজেদের হাত খরচ বাঁচিয়ে কিছু কিছু সামগ্রিক কিনে উদ্ধার কার্য চলছে। এরপর নিজেদের সুরক্ষায় বিভিন্ন সামগ্রী কেনা তাদের পক্ষে সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাপ দেখলে মানুষের মধ্যে মেরে দেওয়ার প্রবণতা ছিল বেশি।
হাওড়া জেলা নন ফরেস্ট এলাকা হলেও এখানে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী বসবাস করে। এখানে খড়ি হোগলা বন অনাবাদি জমি জলাভূমিতে মেছো বিড়াল, বন বিড়াল, খটাস খটাস, ভাম এর মত বিভিন্ন প্রাণী দেখা যায়। বর্তমান সময়ে বন জঙ্গল ও জলাভূমি ভরাট করে কলকারখানা ও জনবসতি গড়ে উঠছে। ফলে বন্যপ্রাণীরা বাসস্থান হারাচ্ছে। সেই সঙ্গে সমস্যায় পড়ছে হাওড়া জেলার বনে জঙ্গলে থাকা সাপ। গত কয়েক বছর আগে পর্যন্ত লোকালয়ে সাপ অথবা বন্যপ্রাণী দেখা গেলেই তারা প্রাণ হারাত। কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছরে বন দফতর এবং পরিবেশকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বেশ কিছুটা সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্যপ্রাণী অথবা সাপ দেখলেই বনদফতর ও পরিবেশ কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। তাতেই প্রাণ বাঁচে বন্যপ্রাণীদের।
হাওড়া জেলায়, মূলত চার ধরনের বিষধর সাপ দেখা যায়, চন্দ্রবোড়া, কেউটে, কালাচ ও গোখরো। এখানে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী বসবাস করে। জেলার সচেতনতা এবং উদ্ধারকার্যের জেরে জেলায় প্রাণ হানীর ঘটনা কমেছে বন্যপ্রাণীদের। বর্তমান সময়ে বন্যপ্রাণ বাঁচাতে হলে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সরকারি সহযোগিতা। তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক সমস্যার থেকেও পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সামগ্রী ও নিজেদের সুরক্ষা বেশি প্রয়োজন বলেই মনে করছে একাংশের পরিবেশ কর্মী।
প্রসঙ্গত পরিবেশ কর্মী শুভজিৎ মাইতি জানান, মর্মান্তিক ঘটনার কয়েক মাস পর হয়েছে। জেলার পরিবেশ কর্মীরা ফোন আসলেই উদ্ধারে বেরোচ্ছে। আসলে, এতদিন মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা হয়েছে। আর সেই সচেতনতার ফলেই মানুষ বন্য প্রাণী ও সাপ দেখলে আমাদের ফোন করছে। বন বিভাগের পর্যাপ্ত ম্যানপাওয়ার না থাকার ফলে সমস্যা জোরদার। তাই জেলার বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের জীবনের ঝুঁকি থাকলেও উদ্ধারে নামতে হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশকর্মী চিত্রক প্রামাণিক জানান, বর্তমান পরিস্থিতি পরিবেশকর্মীদের দারুণভাবে ভাবাচ্ছে। নিঃস্বার্থভাবে পরিবেশ রক্ষার তাগিদে উদ্ধারকার্যে নেমে পড়া। কিন্তু এমন দুর্ঘটনাও ভীষণভাবে ভাবায়। যতটা সম্ভব সতর্কতার সঙ্গে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উদ্ধারকারী আধার কার্য চালাচ্ছে। কিন্তু সকলেরই চিন্তা রয়েছে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম না থাকার কারণে।
Rakesh Maity