অভিযুক্তদের মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় আদালতে বলেন, ‘এটি ভারতের অন্যতম গণপিটুনি দিয়ে হত্যার ঘটনা। কিছুদিন আগে উত্তর প্রদেশে এরকমই একটি ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়। আমাদের রাজ্যে এটি দ্বিতীয় এমন ঘটনা৷ চলেছে৷’ সরকারি আইনজীবী আরও অভিযোগ করেন, ঘটনার দিন বাড়ির ভিতর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে নিয়ে গিয়ে নিরীহ হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর ছেলে চন্দন দাসকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করে অভিযুক্তরা৷
advertisement
গতকালই মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জে বাবা ও ছেলে খুনের ঘটনায় ১৩ জনকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল জঙ্গিপুর মহকুমা আদালত৷ সংশোধিত ওয়াকাফ আইনের বিরোধিতায় গত এপ্রিল মাসে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ সহ লাগোয়া বেশ কিছু এলাকা৷ সেই অশান্তির জেরেই গত ১২ এপ্রিল সামশেরগঞ্জের চাপড়াবাঁধ এলাকার বাসিন্দা হরগোবিন্দ দাস এবং তাঁর ছেলে চন্দন দাসকে ধারালো
অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এলাকায় ব্যাপকভাবে হিংসা ও অশান্তির সৃষ্টি হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, এই ঘটনার তদন্তে ডিআইজি মুর্শিদাবাদের নেতৃত্বে সিট গঠন করে তদন্ত শুরু হয়। এফআইআরে পাঁচজনের নাম ছিল। তদন্তে আরও ৮ জনের যোগ পাওয়া যায়৷ তদন্তে নেমে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়৷ ৫৬ দিনের মাথায় চার্জশিট দেওয়া হয়। শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া৷ ঘটনার সময় এবং তার আগে পরের সিটিটিভি ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছিল।
যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছিল তাঁদের টাওয়ার লোকেশন প্রমাণ হিসেবে আদালতের সামনে রাখা হয়েছিল। যাঁরা ঘটনার সময় ওখানে ছিলেন তাদের গেট প্যাটার্ন অ্যানালিসিস করা হয়। সিসিটিভির ফুটেজে তাদের গতিবিধি, হাঁটাচলার গেট প্যাটার্ন অ্যানালিসিস করা হয়৷
আদালতে পুলিশ আরও জানায়, এই খুনের ক্ষেত্রে এই পরিবারের সাথে এলাকার একটি পরিবারের মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিবাদ ছিল। পুরোনো শত্রুতা ওই অশান্তির মধ্যে কাজে লাগানো হয়েছিল৷ এই খুন ছাড়াও গত ১১ ও ১২ এপ্রিল সুতি ও সামসেরগঞ্জ যে ভাঙচুর,অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল তাতে বহিরাগত যোগ পাওয়া গেছে। ১০১টির বেশি এফআইআর হয়েছিল। ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন এলাকার দুষ্কৃতীদের যোগও পাওয়া গিয়েছে বলে আদালতে দাবি করে পুলিশ।
এর পাশাপাশি, ডিএনএ সংক্রান্ত তথ্যও সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নিহত বাবা ছেলের রক্তের নমুনার সঙ্গে বাজেয়াপ্ত অস্ত্রে লেগে থাকা রক্তের ডিএনএ-এ মিলে যায়৷ গণপিটুনিতে মৃত্যুর ধারা এই মামলায় রুজু করা হয়েছিল। ১০৩(২) এই ধারায় এটি দ্বিতীয় নজিরবিহীন অর্ডার। ৮ মাস পরে ১০ দিনের মাথায় সাজা ঘোষণা করল আদালত৷
