প্রতি বছর সমারোহের সঙ্গে মা কালীর পুজোর আয়োজন করা হত সামশেরগঞ্জের প্রায় ৬০ বছরের প্রাচীন শ্মশান কালী মন্দিরে। কয়েকদিন পরেই কালী পুজো। আশেপাশের ১৫টি গ্রামের এই শ্মশান কালী মন্দিরের পাশের শ্মশানে দাহ কার্য করা হয়ে থাকে। কালী পুজোর রাতে ধুমধামের সঙ্গে পুজো হয়। রবিবার মধ্য রাতে হঠাৎ তলিয়ে যায় মন্দির। তার আগে মা কালীর মূর্তি বের করে নিয়ে এসে একটি চালার মধ্যে রাখা হয়েছে।
advertisement
হঠাৎ করে গঙ্গার জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে সামশেরগঞ্জের প্রতাপগঞ্জ মহেশটোলা এলাকায়। আগে এই গ্রামে মোট বসত বাড়ি ছিল ১৫৬টি। কিন্তু একে একে গঙ্গার তলিয়ে যেতে যেতে বর্তমানে গ্রামের বাড়ির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৮টি। সেগুলিও তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কায়। আর চোখের সামনে মন্দির তলিয়ে যাওয়ায় আরো আতঙ্ক পড়েছে গোটা গ্রামজুড়ে। উৎসব আনন্দ ভুলে বাড়ির ইঁট, টালি খুলতে বড়দের সঙ্গে হাত লাগিয়েছে ছোটরাও।
ভাঙন বিধস্ত আরিফ সেখ বলেন, ‘‘শুধু বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধ করা যাবেনা। দ্রুততার সঙ্গে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা না নিলে গোটা গ্রাম তলিয়ে যাবে নদীতে।’’ ঘর বাড়ি হারিয়ে গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ৮০টি পরিবার। ভাঙন বিধস্ত বুল্টি সাহা সরকার বলেন, ‘‘এই ছোট একটা স্কুলে আমরা ৮০টির বেশি পরিবার রয়েছি। রোজ নতুন করে ভাঙন হচ্ছে রোজ আরও লোক স্কুলে আসছে। আমাদের ঘর বাড়ি কিছু নেই। আগে সরকার থেকে দু-বেলা খাবার দিচ্ছিল কিন্তু এখন সেটাও বন্ধ। ছেলে মেয়েদের খাওয়াব কী তাই নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছি। বছর তিনেক আগেও গঙ্গা ছিল প্রায় ৫কিলোমিটার দূরে। কিন্তু গঙ্গা এখন দোরগোড়ায়।’’
গ্রামবাসীদের অভিযোগ একটা সময় সামশেরগঞ্জের প্রতিটি ইট ভাটা থেকে অবৈধভাবে গঙ্গার মাটি কাটা হয়েছে। আর তারই ভয়াবহ পরিনত এই বিধ্বংসী গঙ্গা ভাঙন। কিন্তু প্রশাসন নির্বিকার। গ্রামবাসী রাকেশ সরকার বলেন, ভাঙনের আতঙ্কে গ্রামবাসীদের ঘুম ছুটেছে কিন্তু সরকারের কোনো হেলদোল নেই। যখন ভাঙন হচ্ছে তখন নৌকায় করে এসে বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কাজ কিছুই হচ্ছে না। প্রশাসনের মদতে বছরের পর বছর সামশেরগঞ্জ সুতির এলাকার সমস্ত ইট ভাটা থেকে গঙ্গার মাটি অবৈধভাবে কাটা হয়েছে। গ্রামবাসীরা প্রতিবাদ করলে তাদের হেনস্থা হতে হত। আর সেই কারনেই গঙ্গার পাড় ভাঙতে ভাঙতে এই ভয়াবহ পরিনতি।
Pranab Kumar Banerjee