নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের হাতে দু-চাকার যান যেন হয়ে উঠছে মানুষ মারার কল। বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েও আজ অশোকনগরে নিরাপদ নয় মানুষজন। অশোকনগর স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ৫৬ বছরের পঙ্কজ পোদ্দারের মৃত্যু যেন সেই প্রশ্নই তুলে দিয়ে গেল।
আরও পড়ুনঃ তৃণমূলকে আর ছাড় নয়! দুর্গাপুজো নিয়ে বিরাট প্ল্যান বিজেপির! এবার একেবারে অন্য রূপ
advertisement
সম্প্রতি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন তিনি। রাত তখন প্রায় ন’টার বেশি। আচমকা বেপরোয়া গতির বছর উনিশের বাইক চালকের হাতে থাকা বিদেশি বাইকের ধাক্কায়, ছিটকে পড়েন তিনি। কান থেকে অনর্গল রক্ত বের হতে থাকে ঘটনাস্থলেই। স্থানীয়রাই ছুটে এসে উদ্ধার করেন। দ্রুত তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় অশোকনগর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে, সেখান থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় স্থানান্তরিত করা হয় বারাসত মেডিক্যাল কলেজে। পরে বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে।
আরও পড়ুনঃ আজ রাতেই উত্তরবঙ্গ যাওয়ার ট্রেন? জেনে নিন কেমন থাকবে দার্জিলিং-কালিম্পংয়ের আবহাওয়া
রোগীকে বাঁচাতে অপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। ঘটনার কথা জানাজানি হতেই অশোকনগর জুড়ে বাইকের দাপটের প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বহু মানুষ। বেপরোয়া নিয়ন্ত্রণহীন গতির বাইক চালকদের এই দৌরাত্ম্য রুখতে পথে নামারও চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনের তরফ থেকে।
এ দিনের ঘটনার পর থানায় লিখিত অভিযোগ জানাতে গেলে হয়রানির শিকার হতে হয়। যে বাইকের ধাক্কায় অকালে প্রাণ গেল পঙ্কজ পোদ্দারের। বাইকটি হাবড়ার হিজলপুকুরের এক যুবকের বলে জানা গিয়েছে প্রাথমিক তদন্তে। তবে তার বাইকটি সেই মুহূর্তে এক বন্ধু বলে জানিয়েছেন। অভিযোগ, প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে সেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তা নিয়েও সোচ্চার হয়েছেন পরিবার-পরিজন থেকে প্রতিবেশীরা।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাসে এই ধরনের উন্মত্তগতির বলি হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গুরুতর আহতের সংখ্যাও বেশ অনেকটাই। তবু কেন কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন? সে বিষয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তবে বহু ক্ষেত্রে দেখা যায় দুর্ঘটনার ঘটলে দু-এক দিন চলে প্রশাসনের নজরদারি। তবে বিভিন্ন সময়ে বাইক আরোহীদের ধরলেও প্রশাসনের কাছে আসে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের তরফে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ। তাই প্রশাসনও সঠিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না বলেই পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।
অশোকনগর চৌরঙ্গী মোড় থেকে স্টেডিয়াম খেলার মাঠ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের পর এই এলাকায় গজিয়ে উঠেছে বিভিন্ন ক্যাফে আর সেই ক্যাফেতেই হাবড়া, অশোকনগরের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকা থেকে উঠতি ছেলেমেয়েদের ভিড় জমে সন্ধ্যে নামলেই, চলে নেশার আসর। আর প্রায় প্রত্যেকের হাতেই থাকে বিভিন্ন ধরনের বাইক স্কুটি। বিকট শব্দে, বেপরোয়া গতিতে এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করেন তারা। শুধু ছেলেরাই নন, তাতে দেখা যায় মেয়েদেরও। অশোকনগরবাসী ইতিমধ্যেই এই সব ক্যাফের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানাচ্ছে প্রশাসনকে। অন্যান্য জায়গা থেকে ছেলেমেয়েরা আসার ফলে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অশোকনগরের দাবি অনেকের। এরপর বড় কোন দুর্ঘটনার ঘটলে তার দায় কে নেবে! উঠছে সেই প্রশ্নও।
Rudra Narayan Roy