এই জমিদার পরিবারের রথযাত্রার নেপথ্যে রয়েছে ইতিহাস এবং চমক। শুধুমাত্র জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রার তিনটি মূর্তি নয়, এই জমিদার পরিবারের রথযাত্রা অন্যান্যদের থেকে একটু আলাদা। এখানে জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরামের ছয়টি বিগ্রহ রথে চড়ে মাসির বাড়িতে যান। মেদিনীপুরের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, ওড়িশা তথা কলিঙ্গরাজ গঙ্গদেব খ্রিষ্টিয় দ্বাদশ শতকে মেদিনীপুর-সহ দক্ষিণ রাঢ় অঞ্চলে শাসন শুরু করেন । সেই সময় নদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এই অঞ্চল জলদস্যুদের দাপটে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। কলিঙ্গরাজ সেই জলদস্যু দমনে পাঠিয়েছিলেন কালীয় গঞ্জন রায় নামে এক দোর্দণ্ডপ্রতাপ সেনাপতিকে। তিনি বিক্রমের সঙ্গে এখানকার দুই জলদস্যুকে হত্যা করেন। বর্তমান জমিদার পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, প্রায় দু’শো বছর ধরে চলে আসছে এই রথযাত্রা। জমিদার চৌধুরী ব্রজেন্দ্রনাথ রায়ের আমলেই নাকি রথযাত্রা শুরু হয়েছে।
advertisement
ইতিহাস ঘেঁটে জানা যায়, এখানকার রথে বিগ্রহ ছয়টি। জমিদার পরিবারের বর্তমান সদস্যরা জানান , দাঁতনের শরশঙ্কা এলাকা একসময় জেনকাপুরের জমিদারির অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেখানকার জগন্নাথ মন্দির থেকে তিনটি বিগ্রহ জেনকাপুরে আনা হয়। তখন থেকে এই মন্দিরে রয়েছে ছয়টি বিগ্রহ। রথে সেই ছয়টি বিগ্রহ থাকে। সেই ঐতিহ্যের রথের রশিতে টান দিতে ভিড় জমে এলাকায়। রথের সঙ্গে খোল-কীর্তন, চলে আদিবাসী নৃত্যও। প্রায় ২০ ফুটের বেশি উঁচু ন’টি চূড়ার এই রথে জগন্নাথ বলরাম ও সুভদ্রার ৬’টি বিগ্রহ যাত্রা করেন। এখনও রীতি মেনে জমিদার পরিবারের প্রবীন সদস্য রথের রশি টেনে রথযাত্রার উদ্বোধন করেন।
জমিদার পরিবারের বর্তমান এক সদস্য অতুলকৃষ্ণ রায় বলেন, ” ১৯৭০ সালে এখানে গড়ে ওঠে ‘শ্রী দুর্গা শ্যামরায়জু ট্রাস্ট’। সেই ট্রাস্ট দুর্গা পুজো ও রথযাত্রার আয়োজন করে। পুরানো ঐতিহ্য মেনে আমরা রথযাত্রা পালন করার চেষ্টা করি। স্থানীয় মানুষজনকে সঙ্গে নিয়ে ট্রাস্টের পক্ষ থেকে স্থায়ী একটি মাসির বাড়িও গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানেই রথের দিন বিগ্রহগুলিকে নিয়ে যাওয়া হয়। সাত দিন পর ফের উল্টো রথে সামিল হই সকলে। সমস্ত ধর্মের মানুষের মিলনে সম্প্রীতির উৎসবে পরিণত হয় আমাদের এই রথযাত্রা উৎসব।”
রঞ্জন চন্দ