রানাঘাটে নামী সোনার গয়নার শোরুমে ডাকাতির ঘটনার পর ডাকাত এবং পুলিশের মধ্যে গুলির লড়াইয়ের ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়৷
আসলে পুলিশ বলতে মাত্র একজন অফিসারের সঙ্গে গুিলর লড়াই চলে সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের৷ তিনি রানাঘাট থানার এএসআই রতন রায়৷ রানাঘাট থানার ওই অকুতোভয় অফিসারের গুলিতেই প্রথমে ঘায়েল হয় দুই ডাকাত৷ মূলত তারই কৃতিত্বে ঘটনাস্থল থেকেই চার ডাকাতকে ধরতে পারে পুলিশ৷ উদ্ধার হয় লুঠ হওয়া গয়না, টাকা৷
advertisement
কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত আলোচনা, রানাঘাট থানার সেই এএসআই রতনবাবু অবশ্য নির্লিপ্ত৷ উপরমহল, সহকর্মী, সাধারণ মানুষ তাঁর সাহসে মুগ্ধ হলেও রতনবাবুর কাছে মঙ্গলবার ছিল পুলিশের সম্মান বাঁচানোর লড়াই৷ ডাকাতির খবর পাওয়া মাত্রই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, যে কোনও ভাবে দুষ্কৃতীদের ধরতেই হবে৷
গতকাল দুপুরে যখন রানাঘাটের ওই গয়নার শোরুমে ডাকাত দল হানা দেয়, প্রথমে বাইরে থেকে কেউ একজন থানায় ফোন করে খবর দেন৷ এর পর পরই রতনবাবুকে ফোন করে ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেন রানাঘাট থানার আইসি৷
আরও পড়ুন: রানাঘাটে ডাকাতদল পাকড়াও করলেন যে সুপার কপ, দেখুন তাঁর ভিডিও
খবর পেয়েই আর দেরি করেননি রতন বাবু৷ তাঁর কথায়, ‘খবর পাওয়ার চার পাঁচ মিনিটের মধ্যে ঘটনাস্থলে চলে গিয়েছিলাম৷ পোশাক পরারও সময় পাইনি৷ পোশাক পরতে গেলে হয়তো ডাকাতরা পালিয়ে যেত৷ আইসি সাহেবের নির্দেশেই আমরা যা করার করেছি৷’
রতন বাবু জানিয়েছেন, মোট চার জন অফিসার ও আরও ছ জন পুলিশকর্মী নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন তাঁরা৷ পুলিশ দেখেই শোরুম থেকে বেরিয়ে গুলি ছুড়তে শুরু করে দুষ্কৃতীরা৷ দমে না গিয়ে পাল্টা তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালাতে থাকেন রানাঘাট থানার ওই এএসআই৷ সেই দৃশ্যই মোবাইল বন্দি করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা৷ কার্যত রতন বাবুর সঙ্গেই গুলির লড়াই শুরু হয় ডাকাতদের৷ নিজের শরীরের ওজন প্রায় ১০০ কেজি হওয়ায় দ্রুত চলাফেরা করা তাঁর পক্ষে কঠিন৷ তবু মঙ্গলবার ডাকাতদের পিছু নেন তিনি৷
একা তিন চার জন সশস্ত্র দুষ্কৃতীর মুখোমুখি হতে ভয় করল না? হাসি মুখে রতন রায়ের জবাব, ‘ভয় ভীতি কিছু ছিল না৷ একটাই কাজ ছিল ওদের ধরতে হবে৷ এটা আমাদের কর্তব্য৷ ওরাও গুলি করছিল, আমিও গুলি করছিলাম৷ তখন কিছু মাথায় ছিল না৷ ওদের ধরতে এলাকার বাসিন্দারাও আমাদের প্রচুর সাহায্য করেছে৷’
পুলিশের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ অনেক৷ তার মধ্যে অন্যতম, অপরাধ যেখানে ঘটে সেখানে সময় মতো পৌঁছতে পারে না পুলিশ৷ রতনবাবুর মতো অনেক পুলিশ অফিসার, কর্মী শারীরিক ভাবে কতটা ফিট, তা নিয়েও ব্যঙ্গ বিদ্রুপ কম হয় না৷ মঙ্গলবারের পর অবশ্য রতনবাবুর ফিটনেসের কথা ভুলে সবাই তাঁর সাহসিকতারই প্রশংসা করছেন৷
সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও-র সৌজন্যে অকুতোভয় রতন বাবুর কীর্তি রীতিমতো ভাইরাল৷ যদিও যাঁকে নিয়ে এত চর্চা সেই রতন রায় বলছেন, কোথায় ভাইরাল হয়েছে জানি না৷ আমি আমার কর্তব্য করতে পেরেছি, এতেই খুব খুশি৷ যদিও আক্ষেপের সুরে রতন বাবু আরও বলেন, পুলিশে যাঁরা চাকরি করছেন, সবাই যেন এগিয়ে আসেন৷ পুলিশকে সবাই দোষ দেয়৷ থানার কাছাকাছি থাকলেও কেন পুলিশ এল না৷ কিন্তু অনেক সময় পুলিশের কাছে খবর আসতেও দেরি হয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে খুব তাড়াতাড়ি আমরা খবর পেয়েছি৷
রতনবাবুর সাহসিকতায় মুর্শিদাবাদে তাঁর পরিবারের সদস্যরাও খুশি৷ কিন্তু যেভাবে দুষ্কৃতীদের গুলির মুখে বেপরোয়া ভাবে তিনি এগিয়ে গিয়েছেন, সেই দৃশ্য দেখে বুক কেঁপেছে রতন বাবুর স্ত্রী সহ আত্মীয়- এবং বন্ধুদের৷