বর্ধমান রাজবাড়িতে আজ থেকে প্রায় ৩৫০ বছর আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে পটেশ্বরী দুর্গা পুজো শুরু করেন তৎকালীন বর্ধমানের মহারাজ মেহতাব চাঁদ। সেই থেকে একই পটে বর্ধমান রাজবাড়িতে পটেশ্বরী দেবী দুর্গার পুজো হয়ে আসছে। এখানে একমাত্র গণেশ ছাড়া লক্ষ্মী, সরস্বতী ও কার্তিকের মুখের ছবি এমন ভাবে আঁকা, যেখানে শুধুমাত্র একটি চোখ দেখা যায়। শুধু তাই নয় মা দুর্গার বাহন সিংহকেও আঁকা, দেখতে অনেকটা ঘোড়ার মত।
advertisement
১২ বছর অন্তর রঙ করা হয় এই পটে কিন্তু রঙয়ের পর মা দুর্গার রূপের কোন পরিবর্তন হয় না। দীর্ঘ প্রায় ৩৫০ বছর ধরে একই রয়েছেন দেবী। প্রতিপদে ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় পটেশ্বরীর পুজো। নবমীর দিন হয় পটেশ্বরীর সামনে নবকুমারীর পুজো। পুজোর ১০ দিন ধরে গুজরাটি সম্প্রদায়ের মানুষরা আসেন এই নাট মন্দিরে। ডান্ডিয়া নৃত্য প্রদর্শন করেন। আজও চলে আসছে সেই রীতি।
পুজোর ভোগেও রয়েছে বিশেষত্ব। অন্যান্য ভোগের পাশাপাশি এখানে পুজোর ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় ছোলা, হালুয়া ও পুরী। আগে সুপারি বলির প্রথা চালু থাকলেও পরবর্তীতে তা বন্ধ হয়ে যায়। কারণ বর্তমানে যেটি ওমেন্স কলেজ প্রথম সেখানেই ছিল দুর্গা দালান পরবর্তীতে দুর্গা দালানটি ভেঙে যাওয়ার পর লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরে শুরু হয় পটেশ্বরীর পুজো আর লক্ষীনারায়ণ জিউ মন্দিরে পুজো হওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে যায় বলি। বর্ধমান মহারাজার আমলে ধুমধাম করে রাজবাড়িতে হত পটেশ্বরীর পুজো। জৌলুস ছিল আলাদা। ঝাড়বাতির আলোর ঝলকানি দেখা যেত রাজ বাড়িতে, পুজো উপলক্ষে হতো বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রাপালা। দামোদর নদীর উপর থেকেও অনেক মানুষ পায়ে হেঁটে গরুর গাড়িতে করে আসতেন রাজবাড়ির পুজো দেখতে। তবে জাঁকজমক ও জৌলুস কমলেও পরিবর্তন হয়নি রীতিনীতির। এখনও সেই পুরনো রীতি মেনেই পটেশ্বরীর পুজো হয় এখানে। তাই এখনও অনেকেই আসেন রাজবাড়ির পুজো দেখতে।
আরও পড়ুনঃ লক্ষ্মীর হাতে দুর্গার প্রতিমা! সংসার সামলে ১.৭ ইঞ্চির দশভূজা গড়ে তাক লাগালেন বাঁকুড়ার গৃহবধূ
তবে নামেই রাজবাড়ি। রাজ অট্টালিকার ছত্রে ছত্রে মলিন দশা। ভগ্নপ্রায় নাট মন্দির, দেওয়ালে বেশীরভাগ জায়গায় পলেস্তারা খসে পড়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গত ২ সেপ্টেম্বর ভেঙে পড়েছে লক্ষ্মীনারায়ণ জিউ মন্দিরের নাট মন্দিরের একাংশ। তাই পুজো হলেও সাধারণের জন্য প্রবেশ বন্ধ রাখা হয়েছে লক্ষীনারায়ন জিউ মন্দিরে। এমনকি এবছর ডান্ডিয়া নাচও হবে না বর্ধমানের সোনার কালীবাড়ি মন্দিরে।
নাট মন্দিরের একাংশ ভেঙে যাওয়ায় মন খারাপ শহরবাসীর। কারণ প্রায় সাড়ে ৩৫০ বছরের পুরনো এই পুজো শুধু একটি উৎসব নয়, এটি বর্ধমানের ইতিহাসের এক জীবন্ত দলিল। রাজকীয় জৌলুস হয়তো আর নেই কিন্তু পটেশ্বরী দেবী দুর্গা আজও সাক্ষ্য বহন করছে সময়ের, ঐতিহ্যের এবং ভক্তির এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কের।