আনুমানিক ৫০০ থেকে ৭০০ বছর আগে এক ঋষির স্বপ্ন থেকেই শুরু হয়েছিল জগদ্ধাত্রী দেবীর মূর্তি গঠনের প্রক্রিয়া। মন্দিরের পুজো ও ইতিহাসকে ঘিরে আজও রয়েছে নানা কাহিনি, কিংবদন্তি এবং ভক্তদের অগাধ বিশ্বাস।
পুরাণ অনুসারে, কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একসময় কারাবন্দি হন। সেই সময় দুর্গাপুজোর বিসর্জনের দিনে তিনি গঙ্গার ধারে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন দেবী দুর্গার প্রতিমা বিসর্জন হচ্ছে। মনের দুঃখে তিনি ভাবছিলেন— এ বছর রাজবাড়িতে পুজো হল না। ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি। সেই রাতেই রাজা কৃষ্ণচন্দ্র স্বপ্নে দর্শন পান মা দুর্গার। স্বপ্নে দেবী জানান, পরের মাসেই তিনি রাজবাড়িতে অধিষ্ঠিত হবেন। তবে কোথায় বা কীভাবে পুজিত হবেন, তা স্পষ্ট করে বলেননি দেবী।
advertisement
রাজা কৃষ্ণচন্দ্র বিষয়টি বাবার সঙ্গে আলোচনা করার পর কিছুদিন বাদে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটে। হরিপুরেই তখন তর্কচূড়ামণি নামে এক ঋষি ছিলেন, যিনি পঞ্চমুণ্ডির আসনে বসে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। একটি কামরাঙা গাছের তলায় তাঁর ধ্যানস্থানের পাশেই আজও সেই পঞ্চমুণ্ডির আসন চিহ্নিত হয়ে আছে।
ধ্যানমগ্ন অবস্থায় সেই ঋষি প্রথম জগদ্ধাত্রী দেবীর তেজস্বী রূপের দর্শন লাভ করেন। তিনি দেবীর রূপের বিস্তারিত বর্ণনা দেন— সূর্যের ব্রহ্মমুহূর্তের মতো আলোকোজ্জ্বল, তেজময়ী মূর্তি। এরপর তিনিই প্রথম ঘটে পুজো করে দেবীকে প্রতিষ্ঠিত করেন। পরে সেই মুনি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কাছে গিয়ে মায়ের রূপ ও দর্শনের কাহিনি শোনান।
সেই বর্ণনা শুনেই কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে গড়ে ওঠে জগদ্ধাত্রী দেবীর প্রতিমা। যা ক্রমে সমগ্র বাংলায় পূজিত হতে থাকে। ভক্তদের বিশ্বাস, এখান থেকেই রাজবাড়ির পুজোর সূত্রপাত এবং সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়া জগদ্ধাত্রী পুজোর ভিত্তি। আজও এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে গভীর ভক্তি ও আস্থা বিরাজমান।
আরও পড়ুন- বৈদ্যুতিক খুঁটি, ট্রান্সফর্মারেই লুকিয়ে যত কাণ্ড! লড়াই ২ পরিবারের, আহত কমপক্ষে ১০
বর্তমানে মন্দিরের পুজো ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক। সম্প্রতি তিনি মন্দির পরিদর্শন করে জানান, ভবিষ্যতে মন্দিরের সৌন্দর্যায়ন ও উন্নয়নের জন্য একাধিক প্রকল্প নেওয়া হবে। তাঁর আশ্বাস অনুযায়ী, মন্দির প্রাঙ্গণে একটি নাটমন্দির, আশেপাশে সুরক্ষিত পাঁচিল, ভক্তদের বসার জন্য আধুনিক বেদী এবং আলোকসজ্জার বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।