কাশীপুরের ছাতামাড়া গ্রামের বাসিন্দা শিল্পী ষষ্ঠীপদ বাউরি শতাব্দীপ্রাচীন এই লোকগানকে শুধু আঁকড়ে ধরেই থাকেননি, বরং নিজস্ব রচনায়, সুরে ও চর্চায় এক নতুন জীবন দান করেছেন। আজ পর্যন্ত তিনি রচনা করেছেন ১১৮টি ভাদু গান, যা বাংলার লোকগানের ভান্ডারে এক অমূল্য সংযোজন।
তার কণ্ঠে এখনও প্রতি ভাদ্র মাসে প্রতিধ্বনিত হয় সেই পুরোনো ভাদু গান, যা আজও গ্রামীণ বাংলার আকাশে মুগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। প্রতি ভাদ্র মাসে তাঁর কণ্ঠে এখনও জীবন্ত হয়ে ওঠে সেই পুরনো সুর, সেই গ্রামীণ আবেগ, যা একদিন গ্রামবাংলার অগণিত নারীর হৃদয়ের ভাষা ছিল। আজও গ্রামের বহু মহিলা অংশ নেন তার ভাদু গানের আসরে। ভাদু গানে উঠে আসে রাজকন্যা ভদ্রাবতীর প্রেম, বিরহ ও ভালবাসার চিরন্তন কাহিনি যা যুগ যুগ ধরে মানুষের মন ছুঁয়ে গিয়েছে।
advertisement
শিল্পী ষষ্ঠীপদ বাউরির আজ পর্যন্ত রচনা করা ১১৮টি ভাদু গান কেবল শুধুমাত্র একটি সংখ্যায় নয়, বাংলার লোকগান ঐতিহ্যের ধারায় এক অনন্য অবদান। আর এই অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আজ পর্যন্ত তিনি পুরুলিয়া ছাড়িয়ে কলকাতা-সহ রাজ্যের নানা প্রান্তে সম্মাননা ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তার স্বপ্ন, এই গান একদিন শুধু বাংলার গ্রামেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। পৌঁছে যাবে বিশ্বমঞ্চে। বিশ্ববাসী জানবে বাংলার লোকসঙ্গীতের আত্মা। অনুভব করবে তার আবেগ। উপলব্ধি করবে তার ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক শিকড়। আজকের দিনে যখন লোকসংস্কৃতি হারিয়ে যাওয়ার পথে, তখন ষষ্ঠীপদ বাউরির মতো শিল্পীরা প্রমাণ করছেন, লোকগানের হৃদস্পন্দন এখনও বেঁচে আছে এবং ভবিষ্যতকেও পথ দেখাতে প্রস্তুত।