মেদিনীপুরের ইতিহাস ও লোকসংস্কৃতি গবেষক অরিন্দম ভৌমিক তাঁর ‘মেদিনী কথা’ গ্রন্থে এই মন্দিরের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর মতে, আনুমানিক সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে মন্দিরটি নির্মিত হয়। তৎকালীন এলাকার জমিদার রায় মহাপাত্র এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা। প্রতাপভান বা নাইগাঁ দণ্ডপাটের শেষ রাজা অমর সিংয়ের মৃত্যুর পর রাজ্যের নয় আনা অংশের অধিকার পান রায় মহাপাত্র পরিবার। এরপরই তাঁরা জমিদারি পত্তন করেন। সেই সময় থেকেই কিশোর জীউর উপাসনা শুরু হয়। ধীরে ধীরে এই মন্দির এলাকায় ধর্মীয় ও সামাজিক কেন্দ্র হয়ে ওঠে। বহু উৎসব ও পার্বণের সাক্ষী থেকেছে এই মন্দির।
advertisement
আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক মন্মথ দাস মন্দিরটির গঠন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন তাঁর ‘পটাশপুরের সেকাল-একাল’ গ্রন্থে। মন্দিরটি ২০ ফুট বর্গাকার। উচ্চতা ৪০ ফুটেরও বেশি। নয়চূড়া বিশিষ্ট এই মন্দিরের তিনতলায় একসময় ওঠা যেত। বর্তমানে কেন্দ্রীয় চূড়া ছাড়া বাকি সব চূড়াই বিনষ্ট। মন্দিরের অলংকরণও প্রায় মুছে গিয়েছে। প্রবেশপথের দেওয়ালে কূর্ম, মৎস্য, বরাহ ও নৃসিংহ অবতারের টেরাকোটা ফলক এখনও চোখে পড়ে। ত্রিখিলান দালানের ছাদ অর্ধগোলাকৃতি খিলানের উপর নির্মিত। গর্ভগৃহের ছাদ গঠিত পাশখিলানের উপর রক্ষিত গম্বুজ দ্বারা।
দিঘা থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরেই রয়েছে এই ইতিহাসবিজড়িত মন্দির। পর্যটকদের কোলাহল থেকে কিছুটা দূরে, নিরিবিলি পরিবেশে দাঁড়িয়ে আছে পালপাড়া কিশোর জীউর নবরত্ন মন্দির। বাজকুল থেকে এগরা–বাজকুল রাজ্য সড়ক ধরে প্রায় ২৩ কিলোমিটার পথ পেরোলেই পৌঁছে যাওয়া যায় পালপাড়ায়। দিঘা ভ্রমণ শেষে ইতিহাস ও প্রাচীন স্থাপত্যে আগ্রহী পর্যটকরা চাইলে একবার ঘুরে আসতেই পারেন এই মন্দিরে। স্বল্প সময়ে কাছাকাছি একটি ঐতিহাসিক স্থান দেখার সুযোগ এনে দেয় এই পালপাড়া কিশোর জীউর নবরত্ন মন্দির।