প্রসন্ন কুমার ত্রিপাঠীর নেতৃত্বে পটাশপুর হয়ে ওঠেছিল আগামী দিনের স্বাধীন ভারতের প্রথম পরীক্ষাগার। এই অসাধারণ ভূমিকা তাঁকে অন্যান্য স্বাধীনতা সংগ্রামীদের থেকে আলাদা মর্যাদা এনে দেয়। মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রসন্নকুমার ত্রিপাঠীর জন্ম পটাশপুরের পানিয়া গ্রামে। তাঁর সংগ্রামী জীবনের সূচনা হয় ১৯৩০ সালে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের মাধ্যমে। সেই সময় তিনি গ্রামের মানুষকে সংগঠিত করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। তাঁর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়টি ছিল ১৯৪২ সালের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়। যখন পটাশপুরে একটি জাতীয় সরকার গঠিত হয়েছিল।
advertisement
আরও পড়ুন: দেড় মাস ধরে জলের তলায় এই তিন গ্রাম! পুরোটা জানলে আপনারও খারাপ লাগবে
তিন মাসের কার্যকালে তিনি গ্রামীণ বিরোধ নিষ্পত্তি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করেছিলেন। শত্রুর চোখে চোখ রেখে স্বাধীন ভারতের প্রশাসনের প্রাথমিক কাঠামো তৈরি ও তা প্রয়োগের এই দুঃসাহসিক পদক্ষেপই তাঁকে ইতিহাসে অমর করে রেখেছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও প্রসন্নকুমার ত্রিপাঠীর ভূমিকা শেষ হয়নি। স্বাধীনতা অর্জনের পর তা টিকিয়ে রাখা এবং সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন তিনি। পটাশপুরের সার্বিক উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করেন। সমবায় আন্দোলন, পানিয়া-সারদাবাড় হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা, বড়হাট উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণ, বারচৌকা জলনিকাশী ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং ললাট-জনকা সড়ক নির্মাণ আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্ব স্থানীয় মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রেখেছিল। তাঁর এই কাজের মধ্য দিয়ে তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক থেকে একজন নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবকে রূপান্তরিত হন।
আপনার শহরের হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের নামের তালিকা পেতে এখানে Click করুন
প্রসন্নকুমার ত্রিপাঠী ছিলেন একাধারে একজন বিপ্লবী, একজন বিচক্ষণ প্রশাসক এবং একজন দূরদর্শী সমাজসেবক। স্বাধীনতার আগে জাতীয় সরকার পরিচালনায় তাঁর যে ভূমিকা ছিল, তা কেবল সাহসিকতার নিদর্শন নয়, বরং ভবিষ্যতের স্বাধীন ভারতের জন্য একটি পথনির্দেশও ছিল। স্বাধীনতার পরে সমাজের উন্নয়নে তাঁর অবিচল নিষ্ঠা পটাশপুরবাসীর কাছে তাঁকে গর্বের প্রতীক করে তুলেছে। তাঁর জীবন শেখায় যে, স্বাধীনতা প্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। বরং তা রক্ষা করে দেশ ও সমাজের অগ্রগতির লক্ষ্যে নিরন্তর কাজ করে যাওয়াই প্রকৃত দেশপ্রেম।