ঘন কুয়াশায় ভরে থাকছে আকাশ। এমন আবহাওয়া আলু চাষের পক্ষে মোটেও ভাল না, এমনই জানাচ্ছেন কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা। এই ঘন কুয়াশা থেকেই আলু গাছে দেখা দিতে পারে ধসা রোগ-সহ বিভিন্ন ছত্রাক জাতীয় রোগ, হতে পারে পোকার আক্রমণ। এমনই আশঙ্কা করছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার চন্দ্রকোনার আলু চাষিরা। আলু চাষের ক্ষেত্রে এমন বিরূপ আবহাওয়া দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ আলু চাষিদের।
advertisement
আরও পড়ুন: বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর মেরেছিল কারা? প্রকাশ্যে সিসিটিভি ফুটেজ! তুমুল চাঞ্চল্য
তাই ধসা রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ইতিমধ্যে মাঠ জুড়ে চলছে কীটনাশক স্প্রে করার কাজ। চাষিদের দাবি, এই ঘন কুয়াশা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে চলছে। রোদের দেখা নেই। রয়েছে মেঘলা আবহাওয়া। এই কুয়াশা ক্ষতি করবে আলু গাছের। পাতা পচিয়ে দেবে। তা থেকে গোটা গাছে পচন আসবে। পাশাপাশি আলু গাছে বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে। এই আবহাওয়া চলতে থাকলে ধসা রোগের দেখা দেবে। আর তাতে আলু গাছ বাঁচিয়ে রাখা মুশকিল হয়ে যাবে।
চাষিদের আরও দাবি, এবছর আলু বীজের দাম ছিল চড়া। পাশাপাশি রাসায়নিক সারও দ্বিগুণ দাম দিয়ে কিনে আলু লাগাতে হয়েছে। বর্তমানে এই আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার জেরে আলু গাছ বাঁচিয়ে রাখা বা ধসা রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে অতিরিক্ত খরচ করে কীটনাশক স্প্রে করে যেতে হচ্ছে। আলু চাষে তাঁদের কাছে অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপছে।
আরও পড়ুন: সহযাত্রী বৃদ্ধার গায়ে প্রস্রাব! এয়ার ইন্ডিয়ার যাত্রীর বিরুদ্ধে FIR দায়ের পুলিশের
জেলার পাশাপাশি ঘাটাল মহকুমার চন্দ্রকোনা, ঘাটাল ও দাসপুর জুড়ে অর্থকারী ফসল হিসাবে আলু চাষের রমরমা, এবছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি।কিন্তু ধসা রোগের অনুকূল আবহাওয়া তৈরি হওয়ায় উদ্বিগ্ন মহকুমার আলু চাষিরা। ইতিমধ্যে চন্দ্রকোনার সীতানগর, ঢলবাঁধ, ফাঁসিডাঙ্গা, পিয়ারডাঙ্গা বসনছোড়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় মাঠে আলু গাছের বয়স ৩০ দিন অতিক্রম করেছে। বেশ কিছু জমিতে আলু গাছ কুঁকড়ে গিয়েছে, গাছের পাতা শুকিয়ে গিয়েছে, আবার কোনও জমিতে গাছের বৃদ্ধি সঠিকভাবে হয়নি।জাঁকিয়ে শীত আর রোদ ঝলমলে আবহাওয়া আলু চাষের পক্ষে খুবই অনুকূল। শীতের মরশুম হলেও এবছরের শুরু থেকেই শুষ্ক পরিষ্কার আবহাওয় বা শীত সেরকম ভাবে পড়েনি। যদিও কয়েক দিন ধরে শীতের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। কিন্তু ঘন কুয়াশা ও মেঘলা আকাশও রয়েছে। আর তাতেই দুশ্চিন্তা বেড়েছে আলু চাষিদের।
কুয়াশা কাটিয়ে দ্রুত আলু চাষের অনুকুল আবহাওয়া ফেরার আশায় রয়েছে চাষিরা। আলু চাষের পক্ষে এমন আবহাওয়া যে মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়, তা মানছেন কৃষি দফতর। তবে চাষিদের আগাম সতর্কতামুলক বেশ কিছু করণীয় বিষয় বাতলে দিয়েছে কৃষি দফতর। এবিষয়ে চন্দ্রকোনা ২ ব্লকের সহ কৃষি অধিকর্তা এস মাসান্ত বলেছেন, ''শীত তেমন ভাবে জাঁকিয়ে পড়েনি। যদিও এক-দু’দিন শীতের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, বাতাসও বইছে।তবে এই ক'দিন কুয়াশাচ্ছন্ন ভাব এবং মেঘলা আবহাওয়া রয়েছে। এরকম যদি নিয়মিত চলতে থাকে তাহলে ধসা রোগের প্রাদুর্ভাবের একটা সম্ভাবনা রয়েছে, তবে ব্লকে এখনও তেমন ভাবে এই রোগের দেখা মিলেনি। তবে এই আবহাওয়া ধসা রোগের অনুকূল পরিবেশ। তা দেখা দিলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ।''
একেই এবছর আলু বীজ থেকে রাসায়নিক সারের অগ্নিমুল্য দাম উপেক্ষা করেই চাষ করেছে কৃষকরা। আলু ফলনের মাঝে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে ধসা রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে নিয়মিত কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে ফলে অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপছে আলু চাষিদের মাথায়। এসব সামলে আদৌ লাভের মুখ দেখবে তো তারা? সন্দিহান আলু চাষিরা।
সুকান্ত চক্রবর্তী