জনশ্রুতিতে প্রবাহমান, প্রায় চার শতাব্দী প্রাচীন আগে, পাঁতিহাল গ্রামের বর্ধিষ্ণু ঘোষাল পরিবারের একজন গৃহী সাধক ছিলেন রামচরণ ঘোষাল ও গ্রামের ধর্মপ্রাণ জমিদার কালাচাঁদ রায়ের যৌথ উদ্যোগে পঞ্চমন্ডি আসনে, গ্রামের একটি দিঘির পারে রক্ষা কালী মায়ের পুজোর সূচনা হয়। বিশাল আকৃতির মণ্ডলাকার দিঘির সংলগ্ন পূজোর সূচনা থেকেই পাঁতিহাল গ্রামের কালী মা ‘ মণ্ডল কালী ‘ নামে পরিচিতি। সারা বছরে একবার পুজোর আয়োজন, জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা অর্থাৎ ফলহারিণী অমাবস্যায় পুজো হয়। তাই অনেকে এই মাকে ফলহারিণী কালী নামেও জানেন। শ্মশানকালী ধ্যান মন্ত্রে পুজো হবার কারণে অনেকের শ্মশানকালী বলে থাকেন। রক্ষাকালীর মতো, পুজো শেষে দেবীর মঙ্গলঘট মন্দির সংলগ্ন পুকুরে নিরঞ্জন করা হয়। যে কারণে এই মা’কে অনেকের রক্ষাকালীও বলে থাকেন। এখানে মায়ের বিগ্রহের রূপ বালিকার মতো।
advertisement
বংশ-পরম্পরায় মৃৎশিল্পী প্রতিমা গড়েন। পুরনো নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিবছর মন্দির থেকে কাঠামো আনা হয় শিল্পীর গৃহে। পুরানো কাঠামোর সঙ্গে ১৬ আনা’ দিয়ে প্রতিমা তৈরির বরাত দেওয়া হয় মৃৎশিল্পীকে। বৈশাখ মাসে অমাবস্যায় কাঠামোয় মাটি লাগিয়ে প্রতিমা তৈরি শুরু হয়। নিয়ম মেনে জ্যৈষ্ঠের অমাবস্যায় পুজো হয়। প্রাচীন রীতি মেনেই পুজোর দিন দুপুরে মৃৎশিল্পের গৃহ থেকে ঢাকঢোল শঙ্খধ্বনিতে মায়ের মন্দিরে আগমন ঘটে। পুঙ্খানুপুঙ্খ প্রাচীন রীতি অনুযায়ী মা মণ্ডলা কালীর পুজোর আয়োজন করে পাঁতিহাল মহেশতলা বারোয়ারি।
মা মন্দিরে প্রবেশের পর ভক্তের পুজো নিবেদন এবং মন্দির সংলগ্ন ঘাট থেকে দন্ডী শুরু হয়। রাত্রি ১০টা থেকে শুরু হয় মায়ের পুজো। পঞ্চমণ্ডি বেদিতে মায়ের আরাধনা। সারা রাত্রি পুজো পাঠ শেষে মঙ্গলঘট নিরঞ্জন হয়। মঙ্গল ঘট নিরঞ্জন হলেও পুজোর দিন থেকে মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি এক মাস মন্দিরে থাকে। অম্বুবাচীর পর মায়ের নিরঞ্জন দেওয়া হয় মন্দির সংলগ্ন পুকুরে। সারা বছর মন্দিরে মায়ের প্রতিমা না থাকলেও বারো মাস ভক্তসমাগম ঘটে।
আরও পড়ুন : আজ ফলহারিণী অমাবস্যায় ভুলেও দাঁতে কাটবেন না এই ৩ খাবার! করবেন না এই ২ কাজ! অশান্তির কালো গ্রাসে তছনছ সংসার
এ প্রসঙ্গে কার্যকারী কমিটি সদস্য শুদ্ধশীল ঘোষ জানান, মায়ের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে রয়েছে বহুদূর। সারা বাংলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা তাঁদের মনস্কামনা নিয়ে মায়ের কাছে আসেন।যত দিন গড়াচ্ছেূ, ততই এই মায়ের মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পড়ছে। এ প্রসঙ্গে যুগ্ম সম্পাদক তরুণ রায় ও আনন্দ দত্ত জানান, পুজো উপলক্ষে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম। পুজো উপলক্ষে দেড় থেকে দু ‘লক্ষ ভক্ত সমাগম হয়। সাত দিনব্যাপী মেলা এর সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যাত্রাপালা ও অন্নকূট উৎসব আছে। এ বার ৮ই জুন অন্নকূট উৎসবে প্রায় ১০ হাজার মানুষের আয়োজন করা হবে।