চোঙদার পরিবার একসময় চট্টোপাধ্যায় পদবি ব্যবহার করতেন, পরে পান ‘চোঙদার’ উপাধি। তাঁদের জমিদারি একসময় বিস্তৃত ছিল সাতটি গ্রাম জুড়ে। সেই সময় পুজোর দিনগুলোয় গ্রামের মানুষ ভিড় জমাতেন জমিদার বাড়ির দুর্গাদালানে। পুজো দেখে, ভোগ খেয়ে, পালাগান ও যাত্রা শুনে আনন্দে ফিরতেন ঘরে। দুর্গাদালানের পাশে আজও দাঁড়িয়ে আছে ভোগঘর আর ভগ্ন উনানগুলোর চিহ্ন, যেগুলো একসময় অন্নভোগ রান্নার সাক্ষী ছিল।
advertisement
চোঙদার বাড়ির পুজোর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য আজও সাবেকি ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। প্রতিদিন অনুষ্ঠিত হয় হোম-যজ্ঞ। নবমীতে কুমারী পুজোর আয়োজন থাকে, আর মহাষ্টমীর অঞ্জলিতে উপচে পড়ে ভিড়। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত চারদিন ধরে দুর্গাদালান জুড়ে সারাক্ষণ জ্বলে প্রদীপ।
পরিবারের সদস্যা মল্লিকা চোঙদার বলেন, ‘বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মেদিনীপুর-সহ আরও বিভিন্ন জেলা থেকে অনেকেই আসেন আমাদের এই পুজো দেখার জন্য। ষষ্ঠীর দিন থেকেই ভিড় বাড়তে শুরু করে।’ এই বাড়ির দুর্গাদালান সত্যিই চোখে পড়ার মতো, চারিদিকে খড়খড়ির জানালা, বড় বড় কারুকাজ করা থাম আর এক চালের সাবেকি প্রতিমা মন কাড়ে সকলের। পরিবারের সদস্যরা দুর্গাপুজোর চারদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই দুর্গাদালানেই কাটান। নিজেদের আয়োজনে গান, নাটক আর নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জমিয়ে তোলেন পুজোর আবহ। দুর্গাপুজোর পাশাপাশি এখানে কালীপুজো ও জগদ্ধাত্রী পুজোও সমান ধুমধামে পালিত হয়। তাই শুধু গুসকরার মানুষই নয়, এলাকার বাইরের মানুষও এই প্রাচীন জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে হাজির হন প্রতি বছর। ঐতিহ্য আর আবেগে জড়িয়ে থাকা চোঙদার বাড়ির দুর্গাপুজো তাই আজও শহরের অন্যতম আকর্ষণ।