আর পঞ্চায়েত সমিতিতে বোর্ড গঠনের পরে জয়ের উল্লাসে আবীর খেলায় মেতে ওঠে বাম-কংগ্রেস কর্মী সমর্থকেরা। তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি শাহ আলম সরকারকে তীব্র কটাক্ষ করে পথচলতি মানুষকে লেবুজল বিতরণ করে বাম কংগ্রেস কর্মীরা। নবনির্বাচিত সভাপতি কুদ্দুস আলি বলেন, ‘তৃণমূলকে পরাস্ত করে মানুষের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই পঞ্চায়েত সমিতিতে। শাসকদলের দুর্নীতি সাধারণ মানুষ আর বরদাস্ত করবে না।’ তবে এদিন বোর্ড গঠনের পর বিজয় মিছিল করে যাওয়ার সময় এক তৃণমূল সমর্থকের কাপড়ের দোকানে লুঠপাট করার অভিযোগ ওঠে জোট সমর্থকদের বিরুদ্ধে। লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগ দোকান মালিকের। ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় রানিনগরের ধর্মতলা এলাকায়। ঘটনাস্থলে রানিনগর থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।
advertisement
আরও পড়ুন: স্বপ্নদীপের মৃত্যুর আগে ক্রমাগত মানসিক চাপ দিয়েছিল দীপশেখর-মনোতোষ, চাঞ্চল্যকর দাবি পুলিশের
ক্ষতিগ্রস্থ দোকান মালিক বীরলাল হোসেন বলেন, ‘আমার লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাজনৈতিক হিংসায় বাম-কংগ্রেস জোটের কর্মীরা এই কাজ করেছে। আমি চাই পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার করুক। আমার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করুক।’ বোর্ড গঠনের পরেই কাতলামারী ১নং অঞ্চল তৃণমূলের দলীয় কার্যালয় দখলে ভাঙচুর ও নথিপত্র পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বাম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায় গোটা এলাকায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে রানিনগর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী৷ যদিও তৃণমূলের অভিযোগ অস্বীকার করেছে ব্লক কংগ্রেস নেতৃত্ব।
বেলডাঙ্গা ১নং পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ৩৯টি। তার মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ২২টি, কংগ্রেস পেয়েছে ১২টি, সিপিআইএম ২ ও বিজেপি ২টি। শনিবার মোট ২৪ জন সদস্যের সমর্থনে সভাপতি নির্বাচিত হন কংগ্রেসের আজাদ মণ্ডল ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন সিপিআইএম-এর সেমিনারা বিবি। তৃণমূলের রেজিনগরের বিধায়ক রবিউল আলম চৌধুরীর ছেলে জামিল চৌধুরী ও ব্লক সভাপতি আবু সাইদ দুইজনেই সভাপতির পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ২৪ ভোটে কংগ্রেসের মনোনীত প্রার্থী আজাদ মণ্ডল সভাপতি নির্বাচিত হন। নব নির্বাচিত সহ-সভাপতি সেমিনারা বিবি বলেন, ‘আমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সহ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। আমি সাধারণ মানুষের পাশে থেকে গোটা এলাকার উন্নয়নে কাজ করব।’
তৃণমূলের জয়ী সদস্য জামিল আলম চৌধুরী বলেন, ‘ব্লক সভাপতি আবু সাইদ দায়িত্ব নিয়ে কংগ্রেসের হাতে এই পঞ্চায়েত সমিতি তুলে দিল। আমি রাজ্য নেতৃত্বকে জানাব এই ব্লক সভাপতিকে দল থেকে সরানোর জন্য।’ পাল্টা বেলডাঙ্গা ব্লক তৃণমূলের সভাপতি আবু সাইদ বলেন, ‘জামিল আলম চৌধুরীর প্ররোচনাতেই জয়ী তৃণমূল সদস্যরা বাম কংগ্রেসকে সমর্থন করেছে।’ বড়ঞা পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ৩৮টি। তার মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ২১টি, কংগ্রেসে ৮টি, সিপিআইএম ২টি ও বিজেপি ৭টি। কিন্তু পরবর্তীতে তৃণমূলের ৬ জন জয়ী সদস্য বাম কংগ্রেস জোটে চলে যাওয়ায় তৃণমূলের আসন কমে দাঁড়ায় ১৫। শনিবার তৃণমূলের নাজমা খাতুন ও জোটের সুলতানা খাতুনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাম কংগ্রেস ও বিজেপির সমর্থনে বোর্ড গঠন করে বাম কংগ্রেস জোট।
সভাপতি নির্বাচিত হন জোটের সুলতানা খাতুন ও সহ সভাপতি নির্বাচিত হন বিজেপির সুজিত পাত্র। তবে এদিন বোর্ড গঠনের আগেই উত্তপ্ত হয়ে উঠে বড়ঞা ব্লক অফিস চত্বর। বোর্ড গঠনের দিন যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আগে থেকেই ব্লক অফিস চত্বরে জারি ছিল করা পুলিশি নিরাপত্তা। তা সত্ত্বেও শাসক ও বিরোধী দলের বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠীর কিছু জয়ী সদস্যরা ব্লক অফিসে ঢুকতেই দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। অবৈধ জমায়েত সরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। কংগ্রেস প্রার্থীদের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বড়ঞা থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
প্রণব বন্দ্যোপাধ্যায়