১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে চার্লস উইলকিন্স যখন হুগলিতে ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেডের লেখা ‘আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গলি ল্যাঙ্গুয়েজ’ বইটি মুদ্রণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কারণ ব্রিটিশ ভারতের বাণিজ্য করার জন্য বাংলা ভাষাটা জানাও অত্যন্ত জরুরি। তাই বিদেশিরা যাতে বাংলা ভাষা শিখতে পারেন তার জন্য উদ্যোগী হয়েছিল চার্লস উইলকিংসন। সেই কাজের জন্য এগিয়ে এসেছিলেন পঞ্চানন কর্মকার। ধাতব ছেনির মাথায় বাংলার উল্টানো হরফ তিনি তৈরি করেছিলেন। যার ফলে মুদ্রণ শিল্পে এসেছিল এক যুগান্তকারী পরিবর্তন। পঞ্চানন কর্মকারের এই হরফ তৈরির পরেই প্রকাশিত হতে শুরু করে বিভিন্ন দেশীয় ভাষার বই এবং প্রথম দেশীয় ভাষার সংবাদপত্র ‘সমাচার দর্পণ’।
advertisement
স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজে পঞ্চানন কর্মকারের বাড়িতে বসেই কীভাবে বাংলা হরফগুলির সাধারণীকরণ করা যায়, তা নিয়ে বিস্তর কাজ করেছিলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর নিজের হাতে একটি ডায়াগ্রাম তৈরি করে দিয়েছিলেন যা দেখে তৈরি হত বিভিন্ন হরফ। পঞ্চানন কর্মকারের তৎকালীন সময়ে ব্যবহৃত সমস্ত যন্ত্রপাতি ও হরফ তৈরির সামগ্রী আজও রয়েছে সযত্নে, তাঁর পরিবারের লোকজনদের কাছে। শ্রীরামপুরে ঠিক যে জায়গায় ছিল পঞ্চানন কর্মকারের প্রেস, সেখানে আজ হয়েছে এক বহুতল আবাসন। তবে তার বর্তমান প্রজন্মরা এখনও বহন করে আসছে তাদের সেই সমস্ত স্মৃতিগুলি।
এই বিষয়ে পঞ্চানন কর্মকারের ষষ্ঠ প্রজন্ম প্রিয়াঙ্কা মল্লিক জানান, তাঁরা বংশ পরম্পরায় পঞ্চানন কর্মকারের বাংলা হরফের সামগ্রী বহন করে নিয়ে আসছেন। বিভিন্ন দেশবিদেশ থেকে বহু মানুষ আসেন তাঁদের বাড়িতে এখনও, এই সমস্ত কিছু দেখার জন্য। ব্রিটেন থেকে একবার একদল মানুষ এসেছিলেন তাঁরা তাঁদের দেশের মিউজিয়ামে এই হরফ এবং হরফ তৈরির সামগ্রী নিয়ে যেতে চান, সেই কারণে। কিন্তু তাঁদের পরিবারের লোকজনরা রাজি হননি। কারণ তাঁরা চাইছেন, আমাদের দেশের সরকার যাতে একটু এগিয়ে আসে, যাতে মুদ্রণ শিল্পের এই ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন জনসমক্ষে উন্মোচন করা যায়।
প্রিয়াঙ্কা মল্লিক আরও জানান, তাঁরা দীর্ঘকাল চেষ্টা করে আসছেন কীভাবে এই নিদর্শনগুলিকে সংরক্ষণ করা যায়। তাঁরা চাইছেন যদি কোনও বেসরকারি সংস্থাও এগিয়ে আসে তাঁদের সাহায্য করার জন্য তাহলে তাঁরাও তাদের সাদর আমন্ত্রণ জানাবেন। আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই প্রথমবারের জন্য পঞ্চানন কর্মকারের এই সামগ্রীগুলিকে তাঁরা সকলের সামনে তুলে ধরবেন প্রদর্শনীর মাধ্যমে। কলকাতায় হবে সেই প্রদর্শনী, সেই মোতাবেক পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন : রাতে ঘুমনোর আগে মুখে ফেলুন ২ দানা…সকালে উঠেই ছুটি গ্যাস-অম্বল-চোঁয়া ঢেকুরের! দূর মুখের পচা গন্ধ! গলবে মেদও
প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘পঞ্চানন কর্মকারের এই কাজ শুধুমাত্র তাঁদের নয়, গোটা সমগ্র মানবজাতির। কারণ পঞ্চানন কর্মকার সেই ব্যক্তি, যাঁর কারণে দেশীয় ভাষার মুদ্রণ শিল্পে আমূল পরিবর্তন এসেছিল। এবং পঞ্চানন কর্মকার এই বিষয়টিকে শুধুমাত্র নিজের মধ্যে রাখেননি। তিনি নিজে প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও এরকম অনেক মানুষ তৈরি করেছিলেন, যাঁরা এই মুদ্রণ শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তবে বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এই ধরনের ঐতিহাসিক নিদর্শন যাতে মানুষের সামনে আসতে পারে, তার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁদের পরিবার।