নিজের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশ করেছেন ছোট থেকেই। আজ তারই ফলশ্রুতিতে কালিপদ সোরেন (Kalipada Soren) সাঁওতালি সাহিত্যে প্রথম পদ্মশ্রী সম্মান পেতে চলেছেন (Padma Award 2022)। কালিপদ সরেনের বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরের ভরতপুরে। পেশায় অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক কর্মী নেশায় সাহিত্যিক। সাহিত্য চর্চার জন্য ৩৩ বছরের চাকরি জীবনে পদোন্নতি নেননি। এর আগে তিনি ২০০৭ সালে চায়না নাটকের জন্য সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পান। এরপর ২০১৯ সালে সাঁওতালি ভাষায় সেরা অনুবাদ কাজের জন্য দ্বিতীয়বার সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পান খেরওয়াল সোরেন। দিব্যেন্দু পালিতের উপন্যাস 'অনুভব' সাঁওতালি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন তিনি।
advertisement
কালিপদ সোরেনের জন্ম ১৯৫৭ সালের ৯ ডিসেম্বর লালগড়ের বেলাটিকরী অঞ্চলের রঘুনাথপুর গ্রামে। সেই গ্রামে কোনও স্কুল ছিল না। বেশ কিছুটা পথ হেঁটে গোপালপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে যেতে হত সেই সময়। প্রাথমিক পাঠ চুকিয়ে মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়া হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণীতে ভর্তি হন। এরপরে ১৯৭৭ সালে হায়ার সেকেন্ডারি উত্তীর্ণ হন কালিপদ। জামবনি ব্লক এর কাপগাড়ি সেবাভারতী মহাবিদ্যালয় থেকে স্নাতক পড়ে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯৮৪ সালে স্টেট ব্যাংকে চাকরিতে যোগদান করেন এবং ২০১৭ সালে অবসর গ্রহণ করেন এই সাহিত্যিক।
একাদশ শ্রেণীতে পড়ার সময় লিখেছেন যাত্রাপালা 'নিধানদসা'। কলেজ জীবনে লিখেছেন একের পর এক গল্প,কবিতা, একাঙ্ক নাটক ,প্রবন্ধ। পছিম বাংলা সহ বিভিন্ন পত্রিকায় তার বহু লেখা প্রকাশিত হয়েছে। গল্প,কবিতা,নাটক, যাত্রা মিলিয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ১৩ টি। এখানেই শেষ নয়, তাঁর গাওয়া চল্লিশটি গানের চারটি অডিও সিডিও প্রকাশিত হয়েছে। একটি আদিবাসী যাত্রাদল ও রয়েছে কালিপদ সোরেনর। প্রতিভার আরও বাকি। ২০১৫ সালের ঝাড়খণ্ড রাজ্যে একটি সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন।
প্রথমদিকে বাংলা হরফে সাঁওতালি লিখলেও পরে অলচিকি লিপিতে লেখা শুরু করেন কালিপদ সরেন। ২০০৪ সালে অল ইন্ডিয়া সান্তালি রাইটার্স এসোসিয়েশন তাকে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু পুরস্কারে সম্মানিত করে। ২০০৮সালে ইন্টারন্যাশনাল সান্তাল কাউন্সিল থেকে পেয়েছেন সেরা সাহিত্যিকের সম্মান। সাহিত্যে অবদানের জন্য রাজ্য সরকার থেকেও পুরস্কৃত করা হয়েছে তাঁকে। ২০১২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সারদা কিস্কু স্মৃতি পুরস্কার পান তিনি। ২০১৫ সালে সাধু রাম চাঁদ মুর্মু স্মৃতি পুরস্কারে সম্মানিত হন কালিপদ সোরেন। তিনি বলেন, "আমাদের সমাজের কথা আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চাই সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে।"
রাজু সিং