সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে চুরির সোনার ভাগ বাটোয়ারা থেকে শুরু করে দলের সদস্যদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়া, ক্ষোভ জমতে শুরু করে। মাঝেমধ্যেই হজরত জলিল সুফিয়ারা একসঙ্গে বাড়িতে মদ্যপানের আসর বসাত। এরপর নানাভাবে সুফিয়ার উপর শারীরিক যৌন নির্যাতন এর ঘটনা ঘটাত হজরত, যে বিষয়ে জেনে ফেলে জলিল। এরপরই, জলিল ও সুফিয়া মিলে হজরতকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করেন।
advertisement
ঘটনার পর মুণ্ড কেটে ব্যাগে ভরে বামনগাছি স্টেশন লাগোয়া কচুরিপানা ভর্তি ডোবায় ফেলা হয়। এরপর নিশ্চিন্তে বাড়ি ফিরে আসেন মহম্মদ জলিল গাজি। পরদিন ৩ ফেব্রুয়ারি ভোরে মুণ্ডুহীন দেহ উদ্ধারের পর খেতে পুলিশ ও গ্রামবাসীরা জড়ো হলে ভিড়ের মধ্যে সে নিজেও উপস্থিত থেকে সবটার উপর নজর রাখে। ভেবেছিল ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে মুণ্ড ফেলায়, পুলিশ হদিশ পাবে না। তাই যখন মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় এলাকায়, তখন নিশ্চিন্তে স্ত্রীর সঙ্গে বাড়িতেই স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছিল জলিল।
কিন্তু তাল কাটে হজরতের স্ত্রীর ফোনে। জলিলের স্ত্রী সুফিয়াকে ফোন করে সে স্বামীর খোঁজ জানতে চায়। কারণ, ঘটনার দিন বাড়ি থেকে বেরনোর সময় হজরত তার স্ত্রীকে জলিলের বাড়ি যাচ্ছেন বলেই জানিয়েছিল। কিন্তু সুফিয়া জানায়, জলিল বাড়িতে নেই। এমনকি হজরতের বিষয়েও সে কিছু জানে না। এরপরই অভিযুক্ত জলিল জম্মুতে যাওয়ার পরিকল্পনা নেয়। সেইমতো ৪ ফেব্রুয়ারি সকালে বামনগাছি রেলস্টেশন থেকে ট্রেন ধরে কলকাতা স্টেশনে পৌঁছে সেখান থেকে ট্রেনে করে জম্মু পৌঁছয়।
জলিল সবসময় মোবাইলে খবরের দিকে নজর রেখেছিল বলেই জানতে পেরেছে তদন্তকারীরা। সুফিয়ার সঙ্গেও হোয়াটসঅ্যাপ কলে ঘটনার বিষয়ে খবর নিত সে। সুফিয়া গ্রেফতার হতেই, জম্মুর প্রথম আস্তানা বদলে পাকিস্তান সীমান্ত সংলগ্ন সাম্বা গ্রামে আশ্রয় নেয় এই মূল অভিযুক্ত। সেখান থেকেই পুলিশের বিশেষ দল গ্রেফতার করে তাকে।
তবে গোটা ঘটনায় মৃত হজরতদের প্রতি জলিলের ক্ষোভ ধীরে ধীরে জমলেও, স্ত্রীর উপর যৌন নির্যাতনই যেন বারুদে স্তুপে আগুনের ফুলকির মতো কাজ করেছে। আর সেই কারণেই নৃশংসভাবে খুন হতে হয় হযরতকে।
—- Rudra Narayan Roy